আফগানিস্তানের মাটিতে আফিম চাষ ব্যাপকভাবে কমেছে : জাতিসংঘ

9 hours ago 5

আফগানিস্তানে তালেবান সরকারের আরোপ করা নিষেধাজ্ঞার পর দেশটিতে আফিম উৎপাদন ব্যাপকভাবে কমে গেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। ২০২২ সালে নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের পর ২০২৫ সালে এসে আফিম চাষ প্রায় ধ্বংসের মুখে পড়েছে।

সম্প্রতি জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ বিষয়ক সংস্থা (ইউএনওডিসি) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গত এক বছরে আফিম চাষের জমি ২০ শতাংশ কমেছে এবং মোট আফিম উৎপাদন ৩২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।

২০২২ সালের আগে আফগানিস্তান বিশ্বের ৮০ শতাংশেরও বেশি আফিম উৎপাদন করত, যা থেকে তৈরি হতো ইউরোপের ৯৫ শতাংশ হেরোইন। কিন্তু ক্ষমতায় ফেরার পর তালেবান ২০২২ সালের এপ্রিলে আফিম চাষ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। আফিমকে ‘ধর্মবিরোধী ও ক্ষতিকর’ বলে উল্লেখ করে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, অধিকাংশ কৃষক অর্থনৈতিক সংকট সত্ত্বেও নিষেধাজ্ঞা মানছেন। অনেকেই এখন গমসহ বিভিন্ন শস্য চাষ করছেন, যদিও আফিম চাষ এখনো অন্যান্য ফসলের তুলনায় অনেক বেশি লাভজনক।

জাতিসংঘ জানায়, ৪০ শতাংশ কৃষিজমি এখন অনাবাদী পড়ে আছে। এর কারণ হিসেবে লাভজনক বিকল্প ফসলের অভাব, উৎপাদন কমে যাওয়া ও প্রতিকূল আবহাওয়ার কথা বলা হয়েছে।

চলতি বছর আফিম চাষের জমির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ২০০ হেক্টর, যার বড় অংশ আফগানিস্তানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত বাদাখশন প্রদেশে। ২০২২ সালের আগে দেশটিতে ২ লাখ হেক্টরেরও বেশি জমিতে আফিম চাষ হতো।

এদিকে বালখ, ফারাহ, লাঘমান ও উরুজগান — এই চারটি প্রদেশ চলতি বছর আফিমমুক্ত ঘোষণা করেছে তালেবান সরকার।

প্রতিবেদনে বলা হয়, তালেবানের কঠোর পদক্ষেপ আফিম উৎপাদনের ঐতিহ্যবাহী অঞ্চলগুলোতেও চাষ প্রায় সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করেছে।

তবে কৃষকদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। বিশেষ করে বাদাখশন প্রদেশে, যেখানে মাঠ ধ্বংসের সময় হতাহতের খবর পাওয়া গেছে।

হেলমান্দ প্রদেশের এক কৃষক বিবিসি পশতুকে বলেন, নিষেধ মানলে অভাব, না মানলে জেল — দুই দিকেই বিপদ। যদি টাকা না পাই, তবে আবার পপি চাষে ফিরব।

যদিও হেলমান্দে এখন খোলা মাঠে আফিম দেখা যায় না, অনেক কৃষক দেয়ালঘেরা ছোট জমিতে গোপনে চাষ করছেন। এক কৃষক বলেন, আমি বাধ্য হয়ে করছি। আমার কাছে আর কোনো উপায় নেই, পরিবারের খাবার পর্যন্ত জোটে না।

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, আফিম কমে গেলেও এখন মাদক পাচারকারীরা সিন্থেটিক ড্রাগ যেমন মেথামফেটামিনে ঝুঁকছে।

২০২৪ সালের শেষ দিকে আফগানিস্তান ও আশপাশের এলাকায় এই ধরনের মাদক জব্দের পরিমাণ আগের বছরের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে।

ইউএনওডিসি জানায়, সিন্থেটিক মাদক উৎপাদন সহজ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকেও তুলনামূলকভাবে সুরক্ষিত। ফলে অপরাধী চক্রগুলো এখন এগুলোতেই বেশি মনোযোগ দিচ্ছে। সূত্র : বিবিসি

Read Entire Article