* বেড়েছে পাট ও আলু রপ্তানি
* প্রতিদিন রপ্তানি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টন পণ্য
* সৃষ্টি হয়েছে কর্মসংস্থান
পাথর আমদানি নির্ভর পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে বর্তমানে রপ্তানি বাণিজ্যে নতুন দিগন্তের সূচনা হচ্ছে। দেশের একমাত্র চতুর্দেশীয় বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে দিয়ে ভারত, নেপাল এবং ভুটানের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এই স্থলবন্দর দিয়ে বর্তমানে কৃষিপণ্য, গার্মেন্টস পণ্য ও প্লাস্টিক সামগ্রীসহ খাদ্যপণ্যের বাণিজ্য বেড়েছে। পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব আদায় বৃদ্ধিসহ বেড়েছে কর্মসংস্থান।
সরেজমিনে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ভারত হয়ে নেপালে রপ্তানির জন্য শতাধিক পাট ও আলুবোঝাই ট্রাক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া একটি দেশীয় কোম্পানির কয়েকটি কাভার্ডভ্যানে ফ্রিজসহ ইলেক্ট্রনিক পণ্য ভারত হয়ে নেপালে রপ্তানির জন্য বন্দর ছেড়ে যাচ্ছে। পাশেই রাখা হয়েছে কটন র্যাগস (গার্মেন্ট ঝুট) বোঝাই দুইটি ট্রাক। স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি বৃদ্ধির ফলে বন্দরকে কেন্দ্র করে এলাকায় ব্যাপক কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। পরিবহন, হোটেল ও রেস্টুরেন্ট এবং অন্যান্য সেবামূলক খাতেও মানুষের জীবিকা নির্বাহ হচ্ছে। বিশেষ করে পাথর লোড আনলোড এবং পাথর ভাঙার কাজে হাজার হাজার নারী-পুরুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে।
স্থলবন্দর ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ১৯৯৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর চালুর পর দীর্ঘদিন কোনো পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়নি। ২০০১ সালের দিকে সীমিত পরিমাণে পণ্য আদমানি-রপ্তানির মধ্য দিয়ে সক্রিয় হয় স্থলবন্দরটি। এরপর থেকে এই বন্দর দিয়ে সীমিত পরিমাণে ভারত, নেপাল ও ভুটান থেকে পাথর, গম, ভুট্টাসহ বিভিন্ন ধরনের মসলা আমদানি হতো। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের সেই পরিস্থিতি বদলে গেছে। বর্তমানে এই স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি-রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে এই বন্দর দিয়ে বিপুল পরিমাণ গার্মেন্টস পণ্য, কৃষিপণ্য, প্লাস্টিক সামগ্রী, খাদ্যদ্রব্য রপ্তানি হচ্ছে। বিশেষ করে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ আলু এবং পাট রপ্তানি হচ্ছে নেপালে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাবান্ধা শুল্ক স্টেশনে ৯২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১১০ কোটি ৫১ লাখ টাকা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১১৯ কোটি ৭৩ লাখ টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এ পর্যন্ত আদায় হয়েছে ১৬৬ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা বৃদ্ধিসহ চার দেশীয় বাণিজ্যিক যোগাযোগ বৃদ্ধি করা গেলে বাংলাবান্ধা দেশের প্রধান স্থলবন্দরে পরিণত হবে বলে আশা বন্দর সংশ্লিষ্টদের।
স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী আমীর হোসেন বলেন, বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে এখন প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। প্রতিদিন অসংখ্য ট্রাকে পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা পাট, আলুসহ বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও সুযোগ সুবিধা পেলে এই বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি আরও বাড়বে। স্থানীয় ও জাতীয় অর্থনীতির জন্য একটি শক্তিশালী বাণিজ্যকেন্দ্র হতে পারে এটি।
- আরও পড়ুন-
- হিলিতে শুল্কমুক্ত আমদানিতে কমছে চালের দাম
- ৫০ কোটি টাকায় নির্মিত স্থলবন্দরের কার্যক্রম শুরু না হতেই স্থগিত
- প্রত্যাশার দৌলতগঞ্জ স্থলবন্দর এখন শুধুই স্মৃতি
স্থানীয় শ্রমিক রফিকুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ধুঁকে ধুঁকে চলছিল এই স্থলবন্দরটি। শুধুমাত্র পাথর আমদানি হতো। অন্যসব পণ্য সীমিত পরিমাণে আমদানি-রপ্তানি করা হতো। তবে বর্তমানে আমদানি-রপ্তানি অনেক বেড়েছে। বন্দরে এখন সবসময় ভিড় লেগে থাকে। এই বন্দর দিয়ে ভুটান ও নেপাল থেকে প্রচুর পরিমাণ পাথর আমদানি হয়। এই পাথরও কিছুদিন পরপর নানান জটিলতায় আমদানি বন্ধ থাকে। পরে সংকট কেটে গেলে আবার শুরু হয়। তবে বর্তমানে প্রচুর পরিমাণ পাথর আসছে এবং আমাদের দেশ থেকে বিভিন্ন প্রকার পণ্য ভারত ও নেপালে যাচ্ছে।
ইলেক্ট্রনিক পণ্যবোঝাই ট্রাকের চালক আজিম উদ্দীন বলেন, আমরা ঢাকা থেকে এসেছি। প্রায় প্রতিদিন ঢাকা থেকে কোম্পানির ফ্রিজসহ বিভিন্ন প্রকার ইলেক্ট্রনিক পণ্য ভারতে নিয়ে যাই। সেখানে থেকে নেপালের গাড়ি এসব পণ্য নিয়ে চলে যায়। আমরা ইলেক্ট্রনিক পণ্যের সঙ্গে ভারত ও নেপালে বিভিন্ন প্রকার প্লাস্টিক পণ্যও নিয়ে যাই।
স্থলবন্দরের সিএন্ডএফ প্রতিনিধি হাসিবুল ইসলাম বাবু বলেন, এই বন্দর দিয়ে তেমন আমদানি রপ্তানি ছিল না। শুধুমাত্র পাথর আমদানি হতো। মাঝে মধ্যে অন্য পণ্য সীমিত পরিসরে আনা নেওয়া করা হতো। এখন পণ্য রপ্তানি অনেক বেড়েছে। বিশেষ করে বর্তমানে প্রচুর পরিমাণ পাট এবং আলু নেপালে রপ্তানি হচ্ছে। এভাবে রপ্তানি চলতে থাকলে রাজস্ব আদায় আরও বাড়বে। আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা উজ্জল হোসেন বলেন, বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে বর্তমানে বিপুল পরিমাণ কৃষিপণ্য রপ্তানি হচ্ছে। বিশেষ করে প্রতিদিন নেপালে আলু ও পাট রপ্তানি হচ্ছে। গত জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত এই স্থলবন্দর দিয়ে ২৪ হাজার ৫২৮ টন আলু এবং ১৭ হাজার ৬৩৩ টন পাট রপ্তানি হয়েছে। নেপালে বাংলাদেশি পাটের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এছাড়া আমাদের দেশের লাল আলুও নেপালে বেশ জনপ্রিয়। এজন্য অন্য পণ্যের পাশাপাশি পাট ও আলু রপ্তানি অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর লিমিটেডের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, বাংলাবান্ধা বন্দরটি এক সময় পাথর আমদানি নির্ভর ছিল। এখন আলু, পাট, প্লাস্টিক পণ্য, ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী ও কটন র্যাগস (গার্মেন্টস ঝুট) রপ্তানি বেড়েছে।
তিনি বলেন, গত অর্থবছরের তুলনায় পণ্য আমদানি প্রায় দুই লাখ টন কমলেও আশার কথা হচ্ছে, পণ্য রপ্তানি বেড়েছে ১৫ থেকে ২০ হাজার টন। বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ৬০ থেকে ৭০ টন পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। রপ্তানি বৃদ্ধির কারণে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধিসহ বন্দরে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে। এতে বন্দরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যারা স্টেকহোল্ডার আছেন, তারাও উপকৃত হয়েছেন।
এফএ/জেআইএম