ক্রান্তিলগ্নে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে সবাই মিলে চেষ্টা করে দেশটাকে একটা স্থিতিশীল অবস্থান নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে এমন মন্তব্য করে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আমরা ক্ষমতা নেইনি, দায়িত্ব নিয়েছি। দায়িত্বটা একটা কঠিন সময়ে নিয়েছি।
মঙ্গলবার (৩ জুন) ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা ফাইজুল কবির, মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ,অর্থ বিভাগের সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মুনসুরকে সঙ্গে নিয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হন অর্থ উপদেষ্টা।
সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, সংসদ না থাকায় আমরা গতকাল জাতির সামনে বাজেট উপস্থাপন করেছি। অর্থ বিলে রাষ্ট্রপতি সই করেছেন। সেটা দ্রুতই হবে। সেখানে যদি কিছু থাকে সেটাও আমরা চেষ্টা করবো নিতে।
তিনি বলেন, আমরা ক্ষমতা নেইনি, দায়িত্ব নিয়েছি। দায়িত্বটা একটা কঠিন সময়ে নিয়েছি। দেশের এক ক্রান্তিলগ্নে। অনেকেই বলেছেন দেশ আইসিইউতে ছিল, খাদের কিনারে চলে আসছিল, বিশেষ করে আর্থিক ব্যবস্থাপনায়। সে সময় যদি আমরা দায়িত্ব না নিতাম তাহলে কি হতো। যাই হোক আসরা চেষ্টা করে সবাই মিলে দেশটাকে একটা স্থিতিশীল অবস্থান নিয়ে আসতে পেরেছি।
তিনি আরও বলেন, যে সংস্কারগুলো আমরা হাতে নিয়েছি সেটা চলমান। আমরা যতটুকু পারি করবো। আমরা যে পদচিহ্ন রেখে যাবো (ফুটপ্রিন্ট) আশা করছি পরবর্তীতে যারা আসবে তারা সেটা বাস্তবায়ন করবে।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বাজেটের প্রেক্ষিত আপনারা জানেন যে আমাদের সম্পদ সীমিত, চাহিদা অনেক বেশি। বাইরে থেকে সম্পদ আনা, বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ, পুঁজিবাদের অবস্থা, ব্যাংকের অবস্থা, আইনশৃঙ্খলা অবস্থা সব মিলিয়ে একটা বিশৃঙ্খলা। এর ভেতরেই আমাদের কাজ করতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, কথার ফুলঝুড়ি ছড়িয়ে কিন্তু আমরা বাজেট করিনি। আমাদের অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ ছিল যেমন- মূল্যস্ফীতি, ব্যাংকিং খাত, জ্বালানি খাত, রাজস্ব আদায় এসব কিছুর মধ্যেই বাজেট করতে হয়েছে। তারপরও আমাদের প্রথমবারের মতো বাজেটের আকার বাড়েনি।
তিনি আরও বলেন, এতদিন তো আপনারা প্রবৃদ্ধি প্রবৃদ্ধির ন্যারেটিভ শুনেছেন। গ্রোথ হয়েছে অনেক বেশি কিন্তু সেটার সুবিধা-কে পেয়েছে। সেখান থেকে বেরিয়ে এসে আমরা মানুষের জীবনমান উন্নয়ন হয়, ক্রয় ক্ষমতা বাড়ে, ব্যবসা-বাণিজ্য যাতে চালিয়ে যেতে পারে সেসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে বাজেট সাজিয়েছি।
সালেহ উদ্দিন বলেন, জনগণের চাহিদার প্রেক্ষিতেই আমরা রাজস্ব আদায় বাড়ানো, এনবিআর সংস্কার করছি। আমরা বাইরের ঋণের ওপর যে নির্ভর করবো সেটা না। আমি প্রাথমিকভাবে মনে করি জনবান্ধব, ব্যবসাবান্ধব বাজেট হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা তিন বছরের জন্য বাজেট দিয়েছি। এটা চলমান প্রক্রিয়া। অনেকে বলেছেন আমরা আগের পদাঙ্ক অনুসরণ করেছি। আসলে আমরা এসব অনুসরণ না করে চট করে বিপ্লবী একটা বাজেট দিয়ে দেব, দারুণ একটা রেভেনিউ আনবো সেটা সম্ভব না। আমরা কতগুলো ফ্রেমওয়ার্ক বা পদাঙ্ক অনুসরণ করে সামনে যাচ্ছি ঠিক। এবারে যে ইনোভেশন নেই সেটা কিন্তু না। কিছু পদক্ষেপও আছে। বাজেট তিন বছর হওয়াতে বাজেট চলমান থাকাতে ধারাবাহিকতা বজায় থাকে।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এত চ্যালেঞ্জের মধ্যে আমাদের প্রতি একটু সমবেদনা নিয়ে কাজ করেন, একবারেই একপেশে কিছুই হয়নি, গুণগান গাইবো সেটাও আমরা চাই না। আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই। মোট কথা আমরা সবার সহযোগিতা নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে ও বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে বাজেট দিয়েছি। যা বিশ্বের অন্যান্য দেশের কাছে যেন দৃষ্টান্ত হয়ে থাকে।
তিনি বলেন, প্রতিকূল অবস্থা থেকে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। মাঝখানে থমকে গিয়েছিল, এখন আবার সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, এটাই আমাদের মূল লক্ষ্য। মানুষের জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন করা, সামাজিক নিরাপত্তার দিকে নজর দিতে চেষ্টা করেছি।
তিনি আরও বলেন, বাইরের প্রতিটা দেশে বাংলাদেশ সম্পর্কে অত্যন্ত ইতিবাচক মনোভাব রয়েছে। প্রত্যেকের পজিটিভ মনোভাব রয়েছে সেটা আরও একটু সুসংহত করতে দেশের ভেতরের মানুষের যেন একটু ইতিবাচক মনোভাব দেখায়। যদি আমরা নিজেরাই বলি খারাপ, তাহলে অন্যরাতো করবেই। কাজেই দেশের ভেতরের মানুষের যদি দেশের প্রতি দরদ ও সরকারে প্রতি সহযোগিতার মনোভাব থাকে আমরা সেই প্রত্যাশাই করছি।
এমএএস/এমআইএইচএস/এমএস