দুর্গাপূজার জন্য নীল শাড়ি কিনেছিলেন প্রিয়াঙ্কা দত্ত। স্বামী-সন্তান, পার্লারের কাজ নিয়ে বেশ ব্যস্ত ও স্বাভাবিক জীবনযাপনই করছিলেন। কিন্তু সবাইকে বিশাল শূন্যতা দিয়ে হঠাৎ চলে গেলেন একেবারেই!
মৃত্যুর পর তার ডায়েরির কিছু লেখা পড়ে আত্মহত্যা বলে ধারণা করছে পুলিশ। ডায়েরির একটি পাতায় লেখা ছিল—‘আচ্ছা আমি কি পাগল হয়ে যাচ্ছি? দায়িত্বের সাথে আর পেরে উঠছি না। এত দায়িত্ব কেন আমার? আমি শান্তি চাই, জাস্ট রিল্যাক্স। বাসা-বাইরে সব জায়গায় চাপমুক্ত থাকা দরকার। আমি আপাতত এসব আর নিতে পারছি না। নীল শাড়িটা তো এখনো পরলাম না, একটু পরিয়ে দিও।’
শেষ অংশে লিখেছেন, ‘ডিপ্রেশন খুবই খারাপ একটি জিনিস।’
চট্টগ্রামের জিইসি এলাকার ‘নাদিয়াস মেকওভার’ পার্লারের বাথরুম থেকে বুধবার রাতে উদ্ধার হয় ৩৫ বছরের প্রিয়াঙ্কার লাশ। তিনি পার্লারের ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। বাঁশখালীর সঞ্জিত দত্তের স্ত্রী প্রিয়াঙ্কা নগরের আগ্রাবাদ এলাকায় সংসার করতেন। বৃহস্পতিবার রাউজানে বাবার বাড়িতে নেওয়া হয় তাকে। সেখানেই সৎকার হয়েছে তার। এ সময় স্বজনদের আহাজারীতে ভারী হয়ে ওঠে চারপাশ।
ডায়েরির পাতায় সন্তানের উদ্দেশে লেখা ছিল— ‘সজীব, তুমি আমার যোগ্য সন্তান হবে। মানুষ হবে, রোবট নয়। আমি তোর যোগ্য মা হতে পারলাম না। শুধু একটু সময়, ভালোবাসা।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে স্কুলপড়ুয়া ছেলে সজীব দত্ত বলে, ‘মা দুর্গাপূজার শপিং করতে বেরিয়েছিল। রাতে ঠিকঠাকই বাড়ি ফিরেছিল। সকালে আমি স্কুলে চলে যাই। তারপর আর কথা হয়নি…, মা কেন আমাকে কিছু বলেনি?’
স্বামী সঞ্জিত দত্ত বলেন, ‘বিগত দুদিন সে অস্বাভাবিক ছিল। মারা যাওয়ার আগের দিন সকালে আমি জাহাজ থেকে নামি। যেদিন নামি, ছেলের জন্মদিন ছিল। সে সকালে টিফিন নিয়ে অফিসে যায়। রাতে আমি ফিরে দেখি সে শপিং করেছিল, ভাত খায়নি। শেষ কল, হোয়াটসঅ্যাপে ৩.১২ মিনিটে বলেছিল খেয়েছে। এরপর আর কোনো যোগাযোগ হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সংসারে কোনো অশান্তি ছিল না। আমি বুঝতে পারছি না, কেউ দায়ী কি না। আমার একমাত্র ছেলে আর আমি এখন নিস্তব্ধ হয়ে আছি। আমি চাই সুষ্ঠু তদন্ত হোক।’
নাদিয়াস মেকওভারের সত্ত্বাধিকারী নাদিয়া আফিরোজের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি গতকাল কালবেলাকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম ব্রাঞ্চে যাচ্ছি এখন। এই মুহূর্তে কিছু বলতে পারছি না।’
পাঁচলাইশ থানা পুলিশ জানায়, পার্লারের বাথরুমের দরজা ভাঙা অবস্থায় পাওয়া যায়। শাওয়ারের সঙ্গে ওড়না দিয়ে ঝুলছিল প্রিয়াঙ্কার দেহ। উদ্ধার হওয়া ডায়েরি দেখে এটিকে আত্মহত্যা হিসেবে ধারণা করা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রিয়াঙ্কা মৃত্যুকালীন নোট লিখে গেছেন। এটি ডিপ্রেশনের কারণে ঘটেছে বলে প্রাথমিক ধারণা। এ ঘটনায় যদি কারও সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়, তবে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’