ছিলেন অভিষেক টেস্টে টিম বাংলাদেশের প্রধান কোচ। তার পর আরও কয়েকবার জাতীয় দল খেলেছে তার কোচিংয়ে। সময়ের প্রবাহে তিনি এখন বাংলাদেশের নারী দলের কোচ। এক বছর ধরে সারোয়ার ইমরানই বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটের ‘দ্রোণাচার্য্য।’
তার আগে নারী দলে হেড কোচ ছিলেন সাবেক লঙ্কান তারকা ক্রিকেটার হাসান তিলকরত্নে। সারোয়ার ইমরান নারী জাতীয় দলকে কোচিং করাচ্ছেন, ৯ মাস চলছে। সেই ফেব্রুয়ারিতে নারী জাতীয় দলের হেড কোচের দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি। তারও আগে গত বছরের নভেম্বর থেকে কাজ করেছেন অনূর্ধ্ব-১৯ নারী দলের সঙ্গে।
তার কোচিংয়ে নারী ক্রিকেট দল এগিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎই বিনা মেঘে বজ্রপাত। সাবেক অধিনায়ক জাহানারা আলমের অভিযোগের তির সাবেক কোচ ও নির্বাচক মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জুর দিকে। তাও যেন তেন অভিযোগ না, রীতিমতো যৌন নির্যাতনের অভিযোগ। জাহানারার সেই অভিযোগের পর গোটা দেশে তোলপাড়, হৈ-চৈ, আলোড়ন।
গোটা নারী ক্রিকেট অঙ্গনকে যা করেছে কলুষিত। অনেকেরই মনে করছেন, এ ঘটনায় নারী ক্রিকেটের অগ্রযাত্রাও হতে পারে বিঘ্নিত।
সত্যিই মঞ্জু এমন ঘটনা ঘটালে নারী ক্রিকেটের ওপর কেমন নেতিবাচক পড়তে পারে? সেটা কি দেশের নারী ক্রিকেট ও ক্রিকেটারদের জন্য চরম ড্যামেজিং ব্যাপার না? টিম ম্যানেজমেন্টেরই কেউ যদি দলের ক্রিকেটারকে যৌন হয়রানি করেন, তবে নারী ক্রিকেটাররা যাবেন কোথায়? নারী ক্রিকেট দলের বর্তমান হেড কোচ হিসেবে সারোয়ার ইমরান কী ভাবছেন? তিনি কিভাবে দেখছেন ঘটনাটিকে?
এসব জানতেই সারোয়ার ইমরানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এ বর্ষীয়ান কোচ প্রথমে বিনয়ের সঙ্গেই শুরু করেন। বলেন, ‘ঘটনাটি তো এখন তদন্তনাধীন। এ সম্পর্কে সরাসরি মন্তব্য না করাই মনে হয় সমীচীন। আর এটা তো এখনও প্রমাণিত হয়নি। অভিযোগ উঠেছে। একজন নারী ক্রিকেটার অভিযোগ করেছে। টিম ম্যানেজমেন্টের একজন দায়িত্বপূর্ণ পদের একজনের বিপক্ষে। তাই আমি এখনই শুধু অভিযোগের ভিত্তিতে আরেকজনকে দোষী বলে সাব্যস্ত করতে পারি না। একজন অন্যজনের নামে বললো এবং আমি সেই প্রেক্ষিতে বলে দিলাম অভিযুক্ত ব্যক্তি দোষী, তা তো হয় না। আমি চাই একটু সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত। তদন্ত হলেই বেরিয়ে আসবে প্রকৃত সত্য। তদন্ত প্রমাণিত হলে অবশ্যই কঠোর শাস্তি দিতে হবে।’
কিন্তু পরক্ষণেই সারোয়ার ইমরানের কণ্ঠে ক্ষোভ ঝরা মন্তব্য, ‘আমি স্তম্ভিত। পুরো ব্যাপারটা আমাকে চরমভাবে হতাশ করেছে। এখানে যারা আমার সঙ্গে কাজ করছে সবাই হার্ট অ্যান্ড সোল ট্রাই করছে নারী ক্রিকেটের উন্নয়নে। সবাই বাংলাদেশি। প্রত্যেকের চেষ্টা আছে। আমিও সবার কাছ থেকে কাজ আদায় করে নিচ্ছি। সবাই আমাকে সহযোগিতা করছে।’
‘কিন্তু এমন এক ন্যাক্কারজনক ঘটনার খবর আমাকেসহ সবাইকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। আমার মনে হয় আমরা নারী জাতীয় দলকে নিয়ে যেভাবে এগুচ্ছিলাম, তা ব্যাহত হবে। আমরা ধীরে ধীরে একটা জায়গায় আসছিলাম। এমন ন্যাক্কারজনক এবং অনভিপ্রেত ঘটনা আমাদের সেই পথচলাকে অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এটা নিয়ে আমরা সবাই চিন্তিত। ব্যাপারটাকে আমরা কেউই ভালোভাবে নিচ্ছি না। আমরা নিজেদের মধ্যে বসে কথা বলেছি। এটা আমাদের নারী ক্রিকেটের অগ্রযাত্রাকে অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত করবে। ঘটনার যথাযথ তদন্ত হওয়া উচিত। দোষী ব্যক্তির যে শাস্তি প্রাপ্য, সেই শাস্তি পাওয়া উচিত।’
পুরো ঘটনাটিকে খুবই দুঃখজনক আখ্যা দিয়ে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের প্রধান কোচ ইমরান বলেন, ‘এটা লজ্জার। ঘৃণার এবং রীতিমত কঠিন শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সেটা কোনো বিবেকবান মানুষ সমর্থন করতে পারে না। আমার করার প্রশ্নই আসে না। আমি চাই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত শেষে দোষীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।’
আপনি জাতীয় দলের সাথে কাজ করছেন এক বছর। আপনার কোচিং কালের সময়ে কোনো নারী ক্রিকেটারের মুখে কি মঞ্জুর সম্পর্কে কোনো অভিযোগ শুনেছেন? সারোয়ার ইমরানের জবাব, ‘না, না। আমার কাছে কেউ কখনো কোনো অভিযোগ করেনি। হতে পারে আমি তাদের সঙ্গে একটা দূরত্ব মেইনটেইন করে চলি। মেয়েরা হয়তো মাঠ ও কোচিং সম্পর্কিত ব্যাপার ছাড়া আমার সঙ্গে তত ফ্রি না। তাই হয়তো আমার কাছে এসে কারো বিপক্ষে কথা বলতে ইতস্তত করেছে।’
ইমরানের আক্ষেপ, ‘এটা আসলে একটা বিরাট ব্যাপার। আগে কিছু হয়েছে কিনা, সেটা আমি জানি না। আমি তো তখন নারী ক্রিকেটের সাথে জড়িত ছিলাম না। তবে আমি দায়িত্ব পাওয়ার পর চেয়েছিলাম গুছিয়ে নিতে। বেশ অনেকটা গুছিয়েও নিয়েছি। আর খানিকটা আগলে আমরা একটা স্তরে পৌঁছে যেতাম। আমরা যেভাবে যাচ্ছিলাম, তাতে পরবর্তী এক দেড় বছরের মধ্যে একটি ভালো দলে পরিণত হতাম। বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ের ৫-৬ নম্বরে থাকতাম। এমকি চারেও থাকতে পারতাম। এবারই আমরা শ্রীলঙ্কার সাথে জিতলেই পাঁচে উঠতে পারতাম। কিন্তু এমন নেতিবাচক ঘটনায় সে পথচলার পথে কুঠারাঘাত। আমার শেষ কথা, পুরো ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত। তদন্ত শেষে দোষী সাব্যস্ত হলে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।’
এআরবি/এমএমআর/জিকেএস

3 hours ago
5









English (US) ·