আরব আমিরাতে ক্ষমাপ্রাপ্ত প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে ২৪ জন সোমবার (২ ডিসেম্বর) দেশে ফিরছেন। বাংলাদেশের স্থানীয় সময় রাত ৮টার দিকে তারা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে সংবর্ধনা জানায় প্রবাসী নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ চ্যাপ্টার। আগত প্রবাসীদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেন বাংলাদেশ প্রবাসী নেটওয়ার্কের কর্মকর্তা ও আত্নীয় স্বজনরা। বিমানবন্দরে আমিরাত ফেরত প্রবাসীরা তাদেরকে দ্রুত প্রবাসে ফেরত বা দেশে পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে মিছিল ও বিক্ষোভ করে গ্রেপ্তার হওয়া আরও ৭৫ প্রবাসীকে গত শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) ক্ষমা ঘোষণা করে আমিরাত সরকার।
সরকারি হিসেবে ১৮৮ জন মুক্তি পাওয়ার কথা উল্লেখ হলেও এ নিয়ে মোট ২১২ জনকে মুক্তি দিলো দেশটি। তার আগে প্রথম দফায় গত ৩ সেপ্টেম্বর ৫৭ জন বাংলাদেশিকে সাধারণ ক্ষমা করা হয়।
প্রবাসী নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের আহ্বায়ক ইসমাইল হোসেন ফাহিম বলেন, জুলাই ফ্যাসিবাদ বিরোধী রক্তক্ষয়ী আন্দোলনে প্রবাসীদের ত্যাগ ইতিহাসে উজ্জ্বল হয়ে থাকবে। প্রবাসী বাংলাদেশিরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ করে, তেমনি আরব আমিরাতে প্রবাসীরাও প্রতিবাদ বিক্ষোভ প্রদর্শন করায় গ্রেপ্তার হন।
তিনি আরও বলেন, মূলত আমিরাতে গ্রেপ্তার হওয়ার খবরে বাংলাদেশ প্রবাসী নেটওয়ার্ক থেকে উপদেষ্টা আদিলুর রহমানের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্র ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রনালয়ে যোগাযোগ করা হয়। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উদ্যোগে আমিরাতে গ্রেপ্তার হওয়া বাংলাদেশিরা মুক্তি পেতে শুরু করে।
দ্রুত মুক্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করায় প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ দিয়ে ইসমাইল বলেন, দেশে ফেরত প্রবাসী যোদ্ধাদের দ্রুত পুনর্বাসন করা সময়ের দাবি। কেননা আমরা ভিক্টিম পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পেরেছি অনেকে অর্থ কষ্টে দিনাতিপাত করছে। এ ধরনের কয়েকটি পরিবারকে প্রবাসী নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিক্ষোভ করে গ্রেপ্তার হওয়ার খবরে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ প্রবাসী নেটওয়ার্ক (বিইএন) আত্মপ্রকাশ করে। সংগঠনটি নিউইয়র্ক স্টেট থেকে নন প্রফিট অর্গানাইজেশন হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছে। বাংলাদেশ প্রবাসী নেটওয়ার্কের আহ্বায়ক মহব্বত আলী, পরিচালক ইয়াকুব জাকির, শিমুল ইসলাম, মোহাম্মদ আরীফ হোসাইন ও শোয়াইব আহমেদ।
আহ্বায়ক মহব্বত আলী জানান, আরব আমিরাতে গ্রেপ্তার বাংলাদেশিদের মুক্তি ও পুনর্বাসন প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে সংগঠনটি। প্রবাসী নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ চ্যাপ্টার আমিরাত ফেরত প্রবাসীদের পক্ষ থেকে উপদেষ্টা আদিলুর রহমান ও পররাষ্ট্র প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করছে।
তা ছাড়া তিনি বলেন, ইতিমধ্যে বাংলাদেশ প্রবাসী নেটওয়ার্ক আমিরাত ফেরত প্রবাসীদের অনুদান প্রদান করেছে। একইসঙ্গে ফেরত প্রবাসীদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া ও প্রবাসীদের অধিকার ও বিভিন্ন দাবিতে কাজ করে যাবে সংগঠনটি। পর্যায়ক্রমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের অধিকার নিয়ে কার্যক্রম অব্যহত রাখবে।
এছাড়াও বিমানবন্দরে প্রবাসী লাউঞ্জ স্থাপনের জন্য বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছে বাংলাদেশ প্রবাসী নেটওয়ার্ক।
সংগঠনের আহ্বায়ক মহব্বত আলী বলেন, প্রবাসীরা বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের কারিগর হলেও প্রবাসীরা দেশের মাটিতে পা রেখে বিমান বন্দরের হয়রানির শিকার হন। তবে সাম্প্রতিক সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের কারণে প্রবাসীদের বিমান বন্দরে হয়রানি কমে আসছে, যা প্রশংসার দাবিদার।
তিনি বলেন, বিমান বন্দরে প্রবাসীদের জন্য পৃথক লাউঞ্জ স্থাপনের কারণে আমরা সম্মানিতবোধ করছি। প্রবাসী নেটওয়ার্কের অন্যতম পরিচালক ইয়াকুব জাকির সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ সফরকালে প্রবাসী লাউঞ্জ সুযোগ সুবিধা প্রত্যক্ষ করে সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।