আরও সামরিক সহায়তা পেতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে হোয়াইট হাউজে সাক্ষাৎ করবেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। শুক্রবার তাদের মধ্যে বৈঠক হওয়ার কথা। সাম্প্রতিক সময়ে ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে সংঘাত নতুন করে আরও বাড়ছে এবং ন্যাটোর আকাশসীমা লঙ্ঘনে রাশিয়ার দিকে বার বার অভিযোগ উঠেছে। ট্রাম্পের সঙ্গে জেলেনস্কির এই বৈঠকের মূল লক্ষ্য হবে ইউক্রেনের জন্য অতিরিক্ত সামরিক সহায়তা নিশ্চিত করা। খবর রয়টার্সের।
গত আগস্টে ট্রাম্প ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে শীর্ষ বৈঠক মার্কিন শান্তি প্রচেষ্টায় কোনো অগ্রগতি আনতে ব্যর্থ হওয়ার পর থেকে ইউক্রেন ড্রোন হামলার মাধ্যমে রুশ তেল শোধনাগারগুলোতে আঘাত হানছে। অপরদিকে রাশিয়ার বিমান হামলায় ইউক্রেনজুড়ে বড় ধরনের বিদ্যুৎ বিভ্রাট তৈরি হয়েছে।
ন্যাটোর পূর্ব সীমান্তেও উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। পোল্যান্ড ও এস্তোনিয়া অভিযোগ করেছে, গত মাসে রাশিয়ান ড্রোন ও যুদ্ধবিমান তাদের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে, যদিও মস্কো তা অস্বীকার করেছে। এরপর জার্মানি ও ডেনমার্কেও ড্রোন সংক্রান্ত আরও কিছু ঘটনা ঘটেছে। এক সাবেক ইউক্রেনীয় কর্মকর্তা জানান, রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয়ই বর্তমানে চাপ বাড়ানোর মাধ্যমে ভবিষ্যৎ আলোচনার আগে নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে চাচ্ছে।
তিনি বলেন, আমার মনে হয় এই পর্যায়ের উত্তেজনা দুই মাসের বেশি স্থায়ী হবে না। জেলেনস্কি বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘপাল্লার ‘টমাহক’ ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের অনুরোধ জানাতে পারেন, যা মস্কোসহ বড় শহরগুলোকে ইউক্রেনের হামলার আওতায় আনতে পারবে। ট্রাম্প এর আগে বলেছেন, পুতিন যদি আলোচনায় না আসেন তবে তিনি ইউক্রেনকে এমন অস্ত্র দিতে পারেন।
অন্যদিকে রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করতে চায়, যা আলাস্কা শীর্ষ বৈঠকের পর থেকে স্থবির হয়ে আছে। তবে মস্কো সতর্ক করেছে, যুক্তরাষ্ট্রের যে কোনো প্রতিকূল পদক্ষেপের কঠোর জবাব দেবে তারা।
গাজা-পরবর্তী শান্তি প্রত্যাশা
গত মাসে ইউক্রেন প্রসঙ্গে ট্রাম্পের বক্তব্যে পরিবর্তন আসে। এর আগে তিনি বারবার পুতিনের প্রতি হতাশা প্রকাশ করলেও ইউক্রেনকে জমি ছেড়ে দিয়ে সমঝোতায় যেতে বলেছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি তিনি বলেন, ইউক্রেনীয় সেনারা রাশিয়ার দখলকৃত অঞ্চল পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম এবং রাশিয়াকে ‘কাগুজে বাঘ’ হিসেবে ব্যঙ্গও করেন।
জেলেনস্কির সঙ্গে হোয়াইট হাউজে প্রকাশ্য সংঘর্ষের ছয় মাস পর ট্রাম্পের এই অবস্থান পরিবর্তনকে অনেক ইউক্রেনীয় স্বাগত জানালেও, তারা সন্দেহ প্রকাশ করেছেন যে এটি কার্যকর পদক্ষেপে রূপ নেবে কি না।
রয়টার্সের বরাতে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে রাশিয়ার তেল অবকাঠামোতে দীর্ঘপাল্লার হামলার জন্য গোয়েন্দা সহায়তা দেবে। এছাড়া ইউক্রেনের কর্মকর্তারা আশা করছেন, গাজায় যুদ্ধবিরতি ট্রাম্পের মনোযোগ আবার ইউক্রেনের শান্তি প্রক্রিয়ার দিকে ফিরিয়ে আনবে।
জেলেনস্কির উপদেষ্টা মিখাইলো পোদোলিয়াক জানান, জেলেনস্কির সফরের আগে ইউক্রেনীয় উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল ওয়াশিংটনে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের সামনে রাশিয়ার জন্য যুদ্ধের খরচ বাড়ানোর কৌশল তুলে ধরেছে। তিনি এক্সে এক পোস্টে লিখেছেন, আমরা শান্তি চাই, তাই রাশিয়ার অন্তরে শক্তি প্রদর্শন করতেই হবে।
ইউক্রেনীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, জেলেনস্কি বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছে দেশটির জ্বালানি ও প্রতিরক্ষা খাতের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন।
টিটিএন