ভারতের আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের (এএমইউ) উপাচার্য হিসেবে অধ্যাপক নাইমা খাতুনের নিয়োগকে চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা সব পিটিশন খারিজ করে দিয়েছেন এলাহাবাদ হাইকোর্ট। এর ফলে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০০ বছরেরও বেশি ইতিহাসে প্রথম নারী উপাচার্য হিসেবে তার নিয়োগ আইনি বৈধতা পেলো।
শনিবার (১৭ মে) বিচারপতি অশ্বিনী কুমার মিশ্র ও বিচারপতি দোনাদি রমেশের ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোনো ধরনের আইন লঙ্ঘন বা প্রক্রিয়াগত ত্রুটি হয়নি। আদালত মন্তব্য করে, এই ঐতিহাসিক নিয়োগ শুধু একটি প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নয়, বরং এক গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক অগ্রগতি, যা ‘লিঙ্গ প্রতিনিধিত্ব ও সাংবিধানিক মূল্যবোধকে’ আরও দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করে।
নাইমা খাতুন এর আগে এএমইউয়ের মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বিচারপতিরা রায়ে বলেন, উপাচার্য নিয়োগে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা ‘ভিজিটর’ এর (রাষ্ট্রপতির) অধীনে থাকে ও ওই স্তরে কোনো অসৎ উদ্দেশ্যের প্রমাণ মেলেনি।
২০২৩ সালের শেষের দিকে জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার অধ্যাপক সৈয়দ আফজাল মুর্তাজা রিজভি, এএমইউয়ের মেডিসিন বিভাগের মুজাহিদ বেগ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক এম ইউ রাব্বানি- এই তিনজন আদালতে আবেদন জানান। তাদের অভিযোগ ছিল, নাইমা খাতুন যেহেতু তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ গুলরেজের স্ত্রী, তাই তার নাম তালিকাভুক্ত করার প্রক্রিয়াটি পক্ষপাতদুষ্ট এবং অনিয়মপূর্ণ ছিল।
আদালত এসব যুক্তি প্রত্যাখ্যান করে জানায়, বিশ্ববিদ্যালয় কোর্ট তিনটি নাম মন্ত্রণালয় ও রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়েছিল, যার মধ্যে একটি ছিল অধ্যাপক নাইমা খাতুনের। রাষ্ট্রপতি তার বিচারবিবেচনার ভিত্তিতে তাঁকে নিয়োগ দিয়েছেন। এই প্রক্রিয়া সংবিধান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী সম্পূর্ণ বৈধ।
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় অধ্যাপক নাইমা খাতুন বলেন, আমি আমাদের বিচারব্যবস্থার প্রতি সব সময় গভীর শ্রদ্ধা ও আস্থা রেখেছি। এই রায় কেবল আমার ব্যক্তিগত ন্যায়প্রাপ্তি নয়, বরং আমাদের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ও প্রতিষ্ঠানগত সততার এক দৃঢ় স্বীকৃতি।
২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে এএমইউয়ের এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল পাঁচজনের একটি সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা তৈরি করেছিল। পরবর্তী সময়ে এএমইউ কোর্ট সেই তালিকা থেকে তিনটি নাম শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠায়, যার মধ্যে নাইমা খাতুনের নামও ছিল। পরে এই নিয়োগ প্রক্রিয়াকে ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয় ও বিষয়টি আদালতে গড়ায়।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
এসএএইচ