নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি আসনের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার)। স্বাধীনতা পরবর্তীসময় থেকে এই আসনটিতে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি প্রায় সমানভাবেই নেতৃত্ব দিয়েছে। তবে আওয়ামী লীগের বিতর্কিত নির্বাচনগুলোতে ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাবু বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে আসছিলেন।
এরইমধ্যে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই নজরুল ইসলাম বাবু দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। এ অবস্থায় নারায়ণগঞ্জ-২ আসনটিতে একেবারেই যেন ফাঁকা মাঠে রয়েছে বিএনপি। তবে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে এই আসনটিতে বিএনপি দলীয় মনোনয়নের জন্য লড়াইয়ে রয়েছেন দলটির হেভিওয়েট নেতারা। দলীয় মনোনয়নের জন্য তারা বেশ সরব অবস্থানে রয়েছেন।
আরও পড়ুন
গাজীর আসনে বিএনপিতে প্রার্থীজট, সুসংগঠিত জামায়াত
আ’লীগের ঘাঁটিতে বিএনপির কোন্দল, সুবিধা পেতে পারে জামায়াত
১৯৮৪ সালে জেলা ঘোষণার পর এ আসনে ১৯৮৬ সালে এম এ আউয়াল আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করেন। এরপর ১৯৮৮ সালে তিনি জাতীয় পার্টি থেকে ফের সংসদ সদস্য হন। ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিএনপির আতাউর রহমান খান আঙ্গুর নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের জুনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এমদাদুল হক ভূঁইয়া নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে আবারো আতাউর রহমান খান আঙ্গুর বিএনপি থেকে নির্বাচিত হন। এরপর ২০০৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নজরুল ইসলাম বাবু এ আসন দখলে রাখেন।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে এই আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন কেন্দ্রীয় কমিটির ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ, সহ-অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন, জাতীয়তাবাদী কেন্দ্রীয় মহিলা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক পারভীন আক্তার ও বিএনপির দলীয় প্রতীকে বিগত কয়েকবারের সংসদ সদস্য আতাউর রহমান খান আঙ্গুর।
আরও পড়ুন
বিএনপির ঘাঁটিতে জয়ের স্বপ্ন জামায়াতের
জামায়াতসহ ৫ দলে একজন করে প্রার্থী, বিএনপিতে ছড়াছড়ি
এছাড়া জামায়াতে ইসলামী, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ও ইসলামী ঐক্যজোটের দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। তাদের মধ্যে জামায়াতে ইসলামী এবং খেলাফত মজলিসের মনোনীত প্রার্থী ছাড়া অন্যদের নিয়ে তেমন আলোচনা নেই। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) থেকেও এখানে কেউ আপাতত আলোচনায় নেই। যদি কেউ আসেন তাহলে সিনিয়র কেউ আসবেন বলে এনসিপি নেতারা জানিয়েছেন।
দুটি পৌরসভা ও ১০টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার) আসনটির মোট ভোটার ৩ লাখ ৫৯ হাজার ৭৬। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৮৪ হাজার ৪৬১ এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৭৪ হাজার ৬১০। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন পাঁচজন।
নির্বাচন প্রসঙ্গে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ বলেন, ২০১৮ সালে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছি। সে হিসেবে আমি প্রত্যাশা করি দল আমাকে মনোনীত করবে। তবে এটা দলের বিষয়। ম্যাডাম এবং তারেক রহমান ছাড়া আর কারও মনোনয়ন নিশ্চিত আছে বলে মনে করি না। উনারা যে সিদ্ধান্ত নেবেন সেটাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। নির্বাচনের ব্যাপারে আমার পূর্ণ প্রস্তুতি রয়েছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন বলেন, বিগত ১৫ বছর সংগ্রাম করলাম নির্বাচনের জন্য। আমরা প্রস্তুত। আমি দীর্ঘদিন রাজনীতি করে আসছি, আমার পরিবার রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, বাবা বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ছিলেন, নির্বাচন করেছেন জনপ্রিয়তা আছে। যেখানে যাই সেখানেই আমার বাবার কথা স্মরণ করে মানুষ কাঁদে। মানুষ চায় আমি নির্বাচন করি। এজন্য আমি আশাবাদী। যদি জনপ্রিয়তা, সততা ও আদর্শের দিক দিয়ে হয় তাহলে আমার বিকল্প নেই। আমার মনে হয় একশর মধ্যে ৯৯টি ভোটই পাবো।
আরও পড়ুন
প্রবাসে বিএনপির ওসমান ফারুক, মাঠে সরব জামায়াতের জেহাদ খান
দলীয় কোন্দলে বিএনপি, সরব জামায়াতের প্রার্থী
জাতীয়তাবাদী কেন্দ্রীয় মহিলা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক পারভীন আক্তার বলেন, দল যেহেতু বলেছে ক্লিন ইমেজের লোককে মনোনয়ন দেবে, বিতর্কিত চাঁদাবাজ সন্ত্রাসীকে মনোনয়ন দেবে না। সে হিসেবে একজন নারী নেত্রী হিসেবে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার আলোকে আমি অগ্রাধিকার পাবো। আন্দোলন-সংগ্রামে আমার থেকে বড় ত্যাগ আড়াইহাজারে আর কেউ স্বীকার করেনি। অগণিত মামলা-মোকদ্দমায় পুরো পরিবার জেল-জুলুমের শিকার। আমরাই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি। আমরা কখনো পালিয়ে যাইনি। যেহেতু স্থানীয় সরকারের তিনটি নির্বাচন এবং পরপর দুবার মেয়র নির্বাচন করেছি দলীয় টিকিটে এবং অগণিত নেতাকর্মী ও সমর্থক আমার আছে, সে হিসেবে জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে আমাকে মনোনীত করবে।
এদিকে আতাউর রহমান খান আঙ্গুর নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার) আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে ১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদে, ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ সালের ষষ্ঠ ও ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে আলোচিত এক/এগারোর সরকারের সময় সংস্কারপন্থি হিসেবে পরিচিতি পাওয়ায় তিনি মূলধারা থেকে ছিটকে পড়েন। পরে অবশ্য দলে ফিরে আসেন। এ কারণে তিনি কিছুটা ব্যাকফুটে রয়েছেন।
আতাউর রহমান খান আঙ্গুর বলেন, আমি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। আমি যেহেতু কয়েকবার এমপি ছিলাম, জনগণ আমার সঙ্গে আছে। মনোনয়ন আমাকে দেবে আশা করি। আমি সবাইকে নিয়ে নির্বাচন করবো।
অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী জেলা জামায়াতের সমাজকল্যাণ সম্পাদক অধ্যাপক ইলিয়াস মোল্লা বলেন, আমরা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত রয়েছি। জনগণের কাছ থেকে সাড়া পাচ্ছি। যেখানেই যাওয়া হয় লোকজন ছুটে আসে। আসলে আমরা সবসময় জনগণের পাশে আছি।
খেলাফত মজলিসের প্রার্থী, দলটির জেলা সভাপতি হাফেজ মাওলানা আহমদ আলী বলেন, আড়াইহাজারের মানুষ দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের কারণে বরাবরই উন্নয়নবঞ্চিত হয়ে আসছে। এবার জনগণ দুর্নীতি ও সন্ত্রাসমুক্ত স্বচ্ছ ইমেজের প্রার্থীকেই বিজয়ী করবে। আমরা আমাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। সব ইসলামী দলের ঐক্যের আলাপও চালিয়ে যাচ্ছি। যাকেই প্রার্থী ঘোষণা করা হবে, আমরা সম্মিলিতভাবে কাজ করবো।
এফএ/এমএমএআর/এমএফএ/জিকেএস