দুবাই ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে নিউজিল্যান্ডকে চার উইকেটে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারত। ভারতীয় স্পিনারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিং আর রোহিত শর্মার দায়িত্বশীল-দৃঢ়তাপূর্ণ ব্যাটিং ভারতকে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি উপহার দেয়। দারুণ এ সাফল্যে সবাই প্রশংসায় ভাসাচ্ছে ভারতকে।
কিন্তু ফাইনাল শেষে দুবাই ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামের পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে দেখা গেলো না মূল আয়োজক পাকিস্তানের কোনো প্রতিনিধিকে। যা বিস্ময় উদ্রেক করেছে পুরো ক্রিকেট বিশ্বে। জন্ম দিয়েছে নতুন বিতর্কের। আয়োজক হওয়ার পরও কেন উপেক্ষিত পাকিস্তান, সে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
আইসিসি চেয়ারম্যান জয় শাহ’র হাত থেকে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শিরোপা তুলে নেন ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা। এ সময় মঞ্চে ছিলেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড- বিসিসিআই সভাপতি রজার বিনি, সেক্রেটারি দেবজিৎ সাইকিয়া, নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের (এনজেডসি) ডিরেক্টর রজার তৌজ, অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক অ্যারোন ফিঞ্চ। অথচ, এখানে দেখা গেলো না পাকিস্তানের কাউকে। এমনকি ম্যাচ চলাকালীন গ্যালারিতেও কাউকে দেখা যায়নি।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ী দলের ক্রিকেটারদের সাদা রঙয়ের একটি বিশেষ ব্লেজার পরানো হয়। ভারতীয় ক্রিকেটারদের সেই ব্লেজার পরিয়ে দেন বিসিসিআই সভাপতি রজার বিনি। পরে রোহিত শর্মার হাতে ট্রফি তুলে দেন জয় শাহ। পাকিস্তান যে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আয়োজন করেছে, তা এই পুরস্কার বিতরণী মঞ্চ দেখে বোঝার উপায়ই ছিল না।
পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) সভাপতি মাহসিন নাকভি দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও বটে। রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব থাকার ফলে তিনি দুবাই আসতে পারেননি। পিটিআই জানিয়েছে, মাহসিন নাকভি দুবাই যেতে না পারলেও তিনি পিসিবির প্রতিনিধি হিসেবে পাঠিয়েছিলেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এবং আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি এবারের আয়োজনের টুর্নামেন্ট ডিরেক্টর সুমাইর আহমেদকে। তিনি তখন গ্যালারিতে উপস্থিত ছিলেন। অথচ, গ্যালারিতে থাকা সত্ত্বেও পিসিবি সিইউকে পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে ডাকাই হয়নি।
This is literally beyond my understanding.
How can this be done???#championstrophy2025 pic.twitter.com/CPIUgevFj9
পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে আয়োজক দেশ পাকিস্তানের কাউকে দেখা গেল না কেন, সে প্রশ্ন তুলেছেন দেশটির গতি তারকা শোয়েব আখতার। বিশেষতঃ এ ঘটনা দুঃখ দিয়েছে শোয়েবকে। এক্স হ্যান্ডলে দেয়া এক বার্তায় জানিয়েছেন, তার কাছে বিষয়টা মোটেও বোধগম্য নয়। সেখানে পোস্ট করা ভিডিয়োবার্তায় তিনি বলেন, ‘ভারত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতেছে। ওদের অভিনন্দন। কিন্তু একটা অদ্ভুত ব্যাপার আমি লক্ষ করলাম। পুরস্কার দেওয়ার সময় পাকিস্তানের কোনও প্রতিনিধিকে দেখা গেল না। পাকিস্তান আয়োজক দেশ। অথচ আমাদেরই কেউ সেখানে নেই। আমি ভাবতেই পারছি না। পুরো বিষয়টা আমার মাথার উপর দিয়ে গেছে। আমরাই আয়োজন করলাম। অথচ আমাদেরই কাউকে দুবাইয়ে দেখা গেল না। খুব হতাশ লাগছে।’
রাজনৈতিক বৈরিতার কারণে পাকিস্তান আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি আয়োজন করা নিয়ে শুরু থেকেই আপত্তি তুলেছিল ভারত। তারা পাকিস্তান গিয়ে খেলবে না। যে কারণে শেষ পর্যন্ত প্রতিযোগিতাটি অনুষ্ঠিত হলো হাইব্রিড মডেলে। ভারত তাদের সব ম্যাচ খেলেছে দুবাইয়ে। সেখানেই হলো ফাইনাল। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে মাহসিন নকভিকে দেখা গিয়েছিল দুবাইয়ে; কিন্তু ফাইনালে কাউকে দেখা গেল না। এই ঘটনা অবাক করেছে শোয়েব আখতারের মত সবাইকে।
এনডিটিভির রিপোর্ট মতে, পাকিস্তানের সাবেক কিছু ক্রিকেটার মনে করেন, ভারত ফাইনালে পৌঁছেছিল এবং চূড়ান্ত বিজয়ী হয়েছিল বলে পিসিবি চেয়ারম্যান এই অনুষ্ঠানে যোগ দেননি- এমন ভুল ধারণা হয়তো ভারতের কাছে পৌঁছে যাবে।
টুর্নামেন্টটা আইসিসির। যে কারণে পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে কে থাকবে সে সিদ্ধান্ত নেয় আইসিসিই। ২৯ বছর পর পাকিস্তানে একটি আইসিসি ইভেন্টের আয়োজক, সেখানে কিন্তু পিসিবি চেয়ারম্যান মাহসিন নাকভির প্রতিনিধি এবং টুর্নামেন্ট ডিরেক্টর সুমাইর আহমেদ গ্যালারিতে থাকার পরও তাকে কেন পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে ডাকা হলো না? এ নিয়েই মূলত বাড়ছে বিতর্ক।
আইএইচএস/