ইউক্রেনের স্বাধীনতার বিনিময়ে যুদ্ধবিরতি চান না মাখোঁ
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের অবসান মানে ইউক্রেনের আত্মসমর্পণ হওয়া উচিত নয় বলে মন্তব্য করেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ। তিনি বলেছেন, যেকোনো শান্তি চুক্তিতে ইউক্রেনের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা থাকতে হবে এবং রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে একটি স্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করাই হবে মূল লক্ষ্য।
মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র সফরে রয়েছেন। সেখানে হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই মন্তব্য করেন।
স্থানীয় সময় সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) অনুষ্ঠিত বৈঠকে ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান পরিস্থিতি ও সম্ভাব্য শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে মাখোঁ বলেন, এই শান্তি অর্জন মানে ইউক্রেনের আত্মসমর্পণ হওয়া উচিত নয়। যুদ্ধবিরতি হতে হলে অবশ্যই নিরাপত্তার নিশ্চয়তা থাকতে হবে।
যদিও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইউক্রেনের নিরাপত্তা গ্যারান্টির বিষয়ে সরাসরি কিছু বলেননি, তবে তিনি উল্লেখ করেন যে ইউক্রেনে শান্তি রক্ষার জন্য ব্যয় বহন শুধু যুক্তরাষ্ট্রের একার দায়িত্ব নয়, ইউরোপীয় দেশগুলোকেও এতে অংশ নিতে হবে।
এর জবাবে মাখোঁ বলেন, ইউরোপ এখন বুঝতে পারছে যে নিরাপত্তার বোঝা আরও ন্যায্যভাবে ভাগ করা প্রয়োজন। রাশিয়ার আক্রমণের তৃতীয় বার্ষিকীতে এই আলোচনার মাধ্যমে একটি ইতিবাচক অগ্রগতির পথ তৈরি হয়েছে।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট জানান, ইউরোপীয় দেশগুলো প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বৃদ্ধি করতে প্রস্তুত এবং প্রয়োজনে শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন করতেও রাজি রয়েছে। তিনি বলেন, আমরা একটি দৃঢ় ও দীর্ঘস্থায়ী শান্তি চাই। ইউরোপ তার দায়িত্ব পালনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
এদিকে, ট্রাম্প বলেছেন যে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যুদ্ধের অবসানের জন্য ইউক্রেনে ইউরোপীয় শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েনের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করতে রাজি হয়েছেন। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি।
সংবাদমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই বৈঠকের মাধ্যমে ইউক্রেন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের মধ্যে স্পষ্ট মতপার্থক্য প্রকাশ্যে এসেছে। ট্রাম্প রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত যুদ্ধবিরতির পক্ষে, কিন্তু মাখোঁ চান নিরাপত্তা গ্যারান্টি নিশ্চিত করে ধাপে ধাপে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা।
গত সপ্তাহে ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে স্বৈরশাসক হিসেবে আখ্যা দিলেও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনকে নিয়ে এমন মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান। তবে মাখোঁ তার বক্তব্যে স্পষ্ট করে বলেন, এই সংঘাতে রাশিয়াই হচ্ছে আগ্রাসী শক্তি।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি যত দ্রুত সম্ভব যুদ্ধবিরতি চান এবং এ জন্য রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে আলোচনার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, যদি একটি চুক্তির বিষয়ে সমঝোতা হয়, তাহলে আমি মস্কোতে গিয়ে পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করব।
অন্যদিকে, মাখোঁ মনে করেন, দ্রুত যুদ্ধবিরতির পরিবর্তে ধাপে ধাপে সমাধানের দিকে এগোনো উচিত। তিনি বলেন, প্রথমে যুদ্ধবিরতি, তারপর নিরাপত্তা গ্যারান্টিসহ একটি স্থায়ী শান্তিচুক্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
এখন পর্যন্ত ইউক্রেনের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে পশ্চিমা নেতাদের মধ্যে যুদ্ধের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভিন্নমত থাকায় রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার গতি কোন দিকে মোড় নেয়, তা এখন সবার নজরে।