এক দল বিশ্বকাপে চারবার চ্যাম্পিয়ন। অন্য দলটি বিশ্বকাপই খেলেছে মাত্র একবার। ফিফা র্যাংকিংয়েও আকাশ-পাতাল পার্থক্য। ১১ এবং ৭৫। যে দুটি দলের আলোচনা হচ্ছে, তার একটি ইতালি, অন্যটি ইসরায়েল।
কিন্তু সোমবার বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের ম্যাচ খেলতে গিয়ে দুই দলের মধ্যে যে রোমাঞ্চকর প্রতিদ্বন্দ্বীতা তৈরি হলো, তাতে কেউ বলবে না- তাদের মধ্যে এত বড় ব্যবধান রয়েছে। ‘আই’ গ্রুপে ইতালি এবং ইসরায়েলের এই ম্যাচটিতে গোল হয়েছে ৯টি। সর্বশেষ ইনজুরি টাইমে গিয়ে সান্দ্রো টোনালির দুর্দান্ত এক গোলে ইতালি নাটকীয় এক জয় নিয়ে ফিরেছে ৫-৪ গোলের ব্যবধানে।
সোমবার হাঙ্গেরির ডেবরেকেনের নাগিয়েরদি স্টেডিয়ামে (নিরপেক্ষ ভেন্যু) অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে নয় গোলের থ্রিলার শেষে ২০২৬ বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে খেলার আশা বাঁচিয়ে রাখে আজ্জুরিরা। ‘আই’ গ্রুপে ৪ ম্যাচ শেষে ৯ পয়েন্ট নিয়ে এখনও ২য় স্থানে ইতালি। ১২ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে রয়েছে নরওয়ে। মঙ্গলবার তারা মুখোমুখি হবে সর্বনিম্ন অবস্থানে থাকা মলদোভার। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হতে না পারলে হয়তো টানা তৃতীয়বারের মত বিশ্বকাপই খেলা হবে না ইতালির।
মূলতঃ গত জুনে নরওয়ের কাছে ৩-০ গোলের হারের পরই বিপাকে পড়ে ইতালির বিশ্বকাপের স্বপ্ন। ইসরায়েলের বিপক্ষে ম্যাচেও শুরু থেকেই সমস্যায় পড়ে তারা। ইসরায়েলের ৪ গোলের দুটি নিজেদের জালে নিজেরাই জড়িয়েছে ইতালিয়ানরা। অর্থ্যাৎ, ৯ গোলের মধ্যে ৭টি গোলই করেছে ইতালির ফুটবলাররা। যার দুটি নিজেদের জালে,তথা আত্মঘাতি।
ম্যাচে দু’বার এগিয়ে যায় ইসরায়েল। তবে দুই অর্ধে দুইবারই গোল করে সমতায় ফেরান মোইজে কিয়েন। প্রথমে ১৬ মিনিটেই ম্যানুয়েল লোকাতেল্লির আত্মঘাতি গোলে পিছিয়ে পড়ে আজ্জুরিরা। ৪০তম মিনিটে গোল করে দলকে সমতায় ফেরান মোইজে কিয়েন। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে, ৫২তম মিনিটে আবারও ইসরায়েল এগিয়ে যায়। গোল করেন ডর পেরেৎজ। এর দুই মিনিট পর আবারও গোল করে ইতালিকে সমতায় ফেরান মোইজে কিয়েন।
এরপর ৫৮তম মিনিটে মাতেও রেতেগুইয়ের ব্যাকহিল অ্যাসিস্ট থেকে গোল করেন মাত্তেও পলিতানো, ৮১তম জিয়াকোমো রাসপাদোরি গোল করে ব্যবধান বাড়িয়ে করেন ৪-২।
ম্যাচের শেষ দিকে হঠাৎ করেই নাটকীয় মোড় নেয়। দুই মিনিটের ব্যবধানে দুটি গোল করে বসে ইসরায়েল। ৮৭তম মিনিটে নিজেদের জালেই বল জড়িয়ে দেন ইতালির আলেসান্দ্রো বাস্তোনি। ৮৯তম মিনিটে ডর পেরেৎজ নিজের দ্বিতীয় এবং দলের হয়ে চতুর্থ গোল করেন। স্কোরলাইন হয়ে যায় ৪-৪। সমতায় পৌঁছে যায় ইসরায়েল।
তবে ইনজুরি টাইমে এসে ইতালির ত্রাতা হয়ে দাঁড়ান সান্দ্রো টোনালি। বক্সের বাইরে থেকে তার একটি বাঁকানো শট ডিফেন্ডারদের ভিড় পেরিয়ে জালে জড়ালে জয় নিশ্চিত হয় ইতালির।
ম্যাচে একাধিকবার বড় ভুল করে সমালোচনার মুখে পড়েন ইতালির নতুন গোলরক্ষক ও ম্যানচেস্টার সিটির খেলোয়াড় জিয়ানলুইজি দোন্নারুমা।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটও ছাপ ফেলে এই ম্যাচে। গাজা যুদ্ধ নিয়ে বিতর্কের জেরে ম্যাচের আগে ইতালির কোচদের একটি সমিতি ইসরায়েলের স্থগিতাদেশ চেয়ে আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়েছিল। মোটামুটি খালি স্টেডিয়ামে যে ক’জন দর্শক ছিলেন, তাদের কেউ কেউ ইসরায়েলের জাতীয় সঙ্গীত বাজানোর সময় শিস বাজান।
এই ম্যাচে ইসরায়েলের খেলোয়াড়রা কালো আর্মব্যান্ড পরে মাঠে নামেন, কারণ একইদিন জেরুজালেমে ফিলিস্তিনি হামলায় ছয়জন নিহত ও আরও ১২ জন আহত হন।
আইএইচএস/