ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) নবীন শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় র্যাগিং করার অভিযোগ উঠেছে কতিপয় শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় অভিযুক্তদের থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।
সোমবার (১৮ নভেম্বর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের লালন শাহ হলের ৩৩০ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটেছে।
এর আগে গত ১৬ নভেম্বর ক্যাম্পাস সংলগ্ন সাদী অ্যান্ড হাদী ছাত্রাবাসে মধ্যরাতে ডেকে নিয়ে দীর্ঘসময় ধরে ভুক্তভোগীদের র্যাগিং করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়া অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় ভুক্তভোগীদের ডেকে নিয়ে বাজে ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে।
অভিযুক্তরা হলেন, ফিন্যান্স এ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের সাব্বির হোসেন, শেহান শরীফ শেখ, লিমন হোসেন, কান্ত বড়ুয়া, সাকিব খান, শফিউল্লাহ, তরিকুল, মুকুল, কান্ত বড়ুয়া, জিহাদ এবং ল অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের একই শিক্ষাবর্ষের সঞ্চয় বড়ুয়া।
ভুক্তভোগীরা হলেন, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের সাইম, রাকিবুল, শামীম, রাকিব, আমীর হামজা, তারেক, রিশান, তানভীর এবং মামুন।
জানা গেছে, সোমবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে ভুক্তভোগীদের সাদ্দাম হোসেন হলের সামনে ডাকেন অভিযুক্ত শেহান। পরে তাদেরকে লালন শাহ হলের ৩৩০ নম্বর রুমে ডেকে নেন অভিযুক্ত দুই শিক্ষার্থী সাব্বির ও সঞ্চয়। এ সময় অ্যাসাইন্টমেন্ট লেখার কথা বললে ভুক্তভোগীদের মধ্য থেকে শামীম, সাইম, রাকিবুল ও হামজাকে রেখে বাকিদের ছেড়ে দেয় তারা। এরপর এই চারজনকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয় বলে জানান ভুক্তভোগীরা।
এ সময় ভুক্তভোগীদের পাঁচ রকম হাসি দিতে বলা, কল দিয়ে বাজে ভাষা বলা এবং নাচতে বলা হয়। পরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে সাব্বির ও সঞ্চয়কে হাতেনাতে ধরেন হলের সিনিয়র আবাসিক শিক্ষার্থী হাসানুল বান্না। পরে অভিযুক্ত শরিফ শেখ, লিমন, কান্ত বড়ুয়া ও সাকিবকে ফোন দিয়ে কৌশলে ডেকে নেওয়া হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা সেখানে উপস্থিত হয়ে তাদেরকে ইবি থানায় সোপর্দ করেন। পরে সাকিবের বিরুদ্ধে গুরুতর কোনো অভিযোগ না পাওয়ায় তাকে ছেড়ে দেন পুলিশ।
এদিকে গত ১৬ নভেম্বর রাত ১১টার দিকে ভুক্তভোগীদের ক্যাম্পাস সংলগ্ন সাদী এন্ড হাদী ছাত্রাবাসে ডাকেন অভিযুক্ত শফিউল্লাহ, তরিকুল, মুকুল, সাব্বির, সাকিব, শেহান, কান্ত বড়ুয়া এবং জিহাদ। রাত আড়াইটা পর্যন্ত তারা ভুক্তভোগীদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ সময় কয়েকজন ভুক্তভোগীকে পর্ন তারকাদের নাম জিজ্ঞেস করা হয়। এ ছাড়া কাউকে পর্ন তারকা সেজে অভিনয় করতে বলা, তিনজনকে দিয়ে অশ্লীল কবিতা পাঠ করানো ও নানাভাবে হুমকি দেওয়া হয়।
হলে র্যাগিং চলাকালীন প্রত্যক্ষদর্শী হাসানুল বান্না বলেন, আমার কাছে তথ্য আসে, হলের ৩৩০ নং রুমে র্যাগিং চলছে। আমি সেখানে গিয়ে দেখি, সাব্বির এবং সঞ্চয় দুজন মিলে ওদেরকে র্যাগ দিচ্ছে। পরে ঘটনা জিজ্ঞেস করলে তারা অস্বীকার করে। পরে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের কয়েকজন বন্ধু ঘটনাস্থলে পৌঁছালে ভুক্তভোগীরা র্যাগিং চলছিল এটা নিশ্চিত করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তাকর্মীদের সহযোগিতায় অভিযুক্তদের থানায় পুলিশি হেফাজতে সোপর্দ করা হয়।
এদিকে এ ঘটনায় অভিযুক্ত শরীফ শেহান বলেন, আমি র্যাগিং চলাকালীন হলের কক্ষে ছিলাম না। পরে ভেতরে গিয়ে বান্না ভাইকে দেখতে পাই। এর আগে গতদিন মেসে জুনিয়রদের সঙ্গে আমরা বসেছিলাম। ওইদিন ভিসি, প্রক্টর স্যারের নামসহ, বিভাগের সকল শিক্ষকের নাম জিজ্ঞেস করা হয়। না বলতে পারলে তাকে একটু ধমক দেওয়া হয়। তবে কাউকে মারধর বা শারীরিক নির্যাতন করা হয়নি। তবে বাকি অভিযোগগুলোর বিষয়ে কিছুটা সত্যতা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
ভুক্তভোগী রাকিব বলেন, তারা আমাদের হাদী অ্যান্ড সাদী ছাত্রাবাসে ডেকে নিয়ে আমাদেরকে দিয়ে নানা অশ্লীল কথা বলায়। পরে সোমবার লালন শাহ হলে ডাকলে অ্যাসাইনমেন্ট লেখার কথা বললে আমিসহ কয়েকজনকে ছেড়ে দেয়। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় আমাদেরকে বিভিন্ন জায়গায় ডেকে আমাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন তারা।
ইবি থানার ডিউটি অফিসার এস আই মাসুদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা আমাদের কাছে ছয়জনকে নিয়ে আসে। পরে তাদেরকে থানায় পুলিশি হেফাজতে নিরাপদে রাখা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান বলেন, রাতে ঘটনা শোনার পর আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। বিষয়টি নিয়ে প্রক্টরিয়াল বডি, ছাত্র উপদেষ্টা ও হল প্রশাসনের সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।