ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) লালন শাহ হলে র্যাগিংয়ের ঘটনায় চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে হল প্রশাসন। মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আকতার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
কমিটির আহ্বায়ক ড. আকতার হোসেনের নেতৃত্বে অন্য সদস্যরা হলেন সহকারী প্রক্টর ও লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. ফকরুল ইসলাম ও হলটির আবাসিক শিক্ষক ও ফার্মেসি বিভাগের প্রভাষক রসূল করীম। সদস্য সচিব হিসেব রয়েছেন হলটির সহকারী রেজিস্ট্রার জিল্লুর রহমান। কমিটিকে আগামী ২৪ নভেম্বরের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
এ দিকে এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী তারেক বাদী হয়ে অভিযুক্ত ৯ শিক্ষার্থীর বিরদ্ধে ইবি থানায় মামলা দায়ের করেন। বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৩২৩ ও ৫০৬ ধারায় এই মামলায় দায়ের করা হয়। মামলার বিবাদীরা হলেন ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শরিফ শেখ, লিমন, কান্ত বড়ূয়া, সাব্বির ও সঞ্চয়, জিহাদ, শফিউল্লাহ, তরিকুল ও মুকুল। এ সময় থানায় সোমবার রাত থেকে পুলিশী হেফাজতে থাকা অভিযুক্ত পাঁচজনকে কুষ্টিয়া কোর্টে চালান করা হয়। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নাছির উদ্দীন।
ইবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ ফরিদ উদ্দীন বলেন, মামলার পর আটককৃত পাঁচজনকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। বাকি কার্যক্রম আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী পরিচালনা করা হবে।
জানা যায়, সোমবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে ভুক্তভোগীদের সাদ্দাম হোসেন হলের সামনে ডাকেন অভিযুক্ত শেহান। পরে তাদেরকে লালন শাহ হলের ৩৩০ নম্বর রুমে ডেকে নেন অভিযুক্ত দুই শিক্ষার্থী সাব্বির ও সঞ্চয়। এ সময় অ্যাসাইন্টমেন্ট লেখার কথা বললে ভুক্তভোগীদের মধ্য থেকে শামীম, সাইম, রাকিবুল ও হামজাকে রেখে বাকিদের ছেড়ে দেয় তারা। এরপর এই চারজনকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয় বলে জানান ভুক্তভোগীরা।
পরে ভুক্তভোগীদের পাঁচ রকম হাসি দিতে বলা, কল দিয়ে বাজে ভাষা বলা এবং নাচতে বলা হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে সাব্বির ও সঞ্চয়কে হাতেনাতে ধরে ফেলেন হলের সিনিয়র আবাসিক শিক্ষার্থী হাসানুল বান্না। অভিযুক্ত শরিফ শেখ, লিমন, কান্ত বড়ূয়া ও সাকিবকে ফোন দিয়ে কৌশলে ডেকে নেওয়া হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা সেখানে উপস্থিত হয়ে তাদেরকে ইবি থানায় সোপর্দ করেন। সাকিবের বিরুদ্ধে গুরুতর কোনো অভিযোগ না পাওয়ায় তাকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।
এর আগে গত ১৬ নভেম্বর রাত ১১টার দিকে ভুক্তভোগীদের ক্যাম্পাস সংলগ্ন সাদী অ্যান্ড হাদী ছাত্রাবাসে ডাকেন অভিযুক্ত শফিউল্লাহ, তরিকুল, মুকুল, সাব্বির, সাকিব, শেহান, কান্ত বড়ুয়া এবং জিহাদ। রাত আড়াইটা পর্যন্ত তারা ভুক্তভোগীদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ সময় কয়েকজন ভুক্তভোগীকে পর্ন তারকাদের নাম জিজ্ঞেস করা হয়। এ ছাড়া কাউকে পর্ন তারকা সেজে অভিনয় করতে বলা, তিনজনকে দিয়ে অশ্লীল কবিতা পাঠ করানো ও নানাভাবে হুমকি দেওয়া হয়।