ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে টানা ১২ দিনের যুদ্ধে মোসাদের হয়ে তথ্য পাচারের চেষ্টার অভিযোগে আটজনকে গ্রেফতার করেছে ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি)। সংস্থাটি জানিয়েছে, এই ব্যক্তিরা ইরানের সংবেদনশীল স্থানের অবস্থান ও শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের তথ্য ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন।
শনিবার (৩০ আগস্ট) আইআরজিসি এক বিবৃতিতে জানায়, সন্দেহভাজনরা অনলাইনের মাধ্যমে মোসাদের কাছ থেকে বিশেষ প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। তাদের ইরানের উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে পরিকল্পনা কার্যকর করার আগেই আটক করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে রকেট লঞ্চার, বোমা, বিস্ফোরক ও ফাঁদ পেতে হামলার সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে।
এর আগে দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছিল, গত জুনের সংঘাত চলাকালে ইরানি পুলিশ অন্তত ২১ হাজার ‘সন্দেহভাজনকে’ আটক করেছে। তবে তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ জানানো হয়নি।
যুদ্ধ শুরুর প্রেক্ষাপট ছিল ১৩ জুন ইসরায়েলের ব্যাপক সামরিক হামলা, যেখানে শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা ও বিজ্ঞানীদের পাশাপাশি কয়েক শতাধিক সাধারণ মানুষ নিহত হন। এর জবাবে ইরান ইসরায়েলি সামরিক ঘাঁটি, অবকাঠামো ও শহরে শত শত ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রও ইসরায়েলের পক্ষ নিয়ে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে ব্যাপক বিমান হামলা চালায়, যা ১৯৮০’র দশকে ইরাকের সঙ্গে যুদ্ধের পর ইসলামি প্রজাতন্ত্রের জন্য সবচেয়ে বড় আঘাত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
১২ দিনের ওই সংঘাত চলাকালে ইরানি নিরাপত্তা বাহিনী ব্যাপক গ্রেফতার অভিযান শুরু করে। রাজধানীসহ বিভিন্ন শহরে চেকপোস্ট বসিয়ে কড়া নজরদারি চালানো হয় ও নাগরিকদের সন্দেহজনক আচরণকারীদের সম্পর্কে ‘অভিযোগ জানাতে’ আহ্বান জানানো হয়। শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ও কাতারের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়।
সম্প্রতি ইরান অন্তত আটজনকে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে, যাদের মধ্যে রয়েছেন পারমাণবিক বিজ্ঞানী রুজবেহ ভাদি। গত ৯ আগস্ট তাকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয় ইসরায়েলের কাছে আরেক বিজ্ঞানীর তথ্য সরবরাহের অভিযোগে, যিনি পরে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হন। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, ইরান প্রায়শই গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ ও দ্রুত মৃত্যুদণ্ডের প্রক্রিয়াকে রাজনৈতিক দমনপীড়নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে।
এদিকে, ওই যুদ্ধ ইরানে অবস্থানরত আফগান শরণার্থী ও অভিবাসীদের জন্যও ভয়াবহ পরিণতি ডেকে এনেছে। ইরানে অবৈধভাবে বসবাস করছে বলে সন্দেহে হাজার হাজার আফগানকে দ্রুত গতিতে আটক ও নির্বাসিত করা হচ্ছে। কিছু আফগান নাগরিকের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগও তোলা হয়েছে।
ইরানি পুলিশের মুখপাত্র সাঈদ মন্তাজেরুলমাহদি জানিয়েছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ২ হাজার ৭৭৪ জন অবৈধ অভিবাসীকে আটক করেছে ও তাদের মোবাইল ফোন পরীক্ষা করে ৩০টি বিশেষ নিরাপত্তা সংক্রান্ত মামলা চিহ্নিত করেছে। তার ভাষায়, এর মধ্যে ২৬১ জন গুপ্তচরবৃত্তির দায়ে ও ১৭২ জন অনুমতি ছাড়া ভিডিও ধারণের দায়ে গ্রেফতার হয়েছে। তবে এদের মধ্যে কতজন পরবর্তীতে মুক্তি পেয়েছে তা তিনি জানাননি।
মন্তাজেরুলমাহদি আরও বলেন, যুদ্ধ চলাকালে পুলিশ ৫ হাজার ৭০০টিরও বেশি সাইবার অপরাধের মামলা তদন্ত করেছে, যার মধ্যে অনলাইন জালিয়াতি ও অবৈধ অর্থ উত্তোলনের মতো অভিযোগ রয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, এই যুদ্ধে সাইবারস্পেস একটি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধক্ষেত্রে রূপ নিয়েছিল।
সূত্র: আল জাজিরা
এসএএইচ