মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম শক্তিধর দেশ ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ইউরোপের তিন বড় দেশ- ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে তেহরানও নতুন কৌশল নিয়েছে। এবার তারা বিশ্বের দুই পরাশক্তি রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে। খবর তেহরান টাইমসের।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৫ সালে ইরান ও বিশ্বশক্তিগুলোর মধ্যে স্বাক্ষরিত হয় ঐতিহাসিক যৌথ সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা (জেসিপিওএ) চুক্তি। এতে যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও রাশিয়ার পাশাপাশি ইউরোপের এই তিন দেশও অংশ নেয়। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথ থেকে বিরত রাখা এবং একইসঙ্গে বিশ্বে পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ করা। এর বিনিময়ে ইরানের ওপর থেকে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হয়।
তবে ২০১৮ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একতরফাভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে ওই চুক্তি থেকে সরিয়ে নেন এবং ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করেন। যদিও ইউরোপের তিন দেশ এখনো চুক্তিতে টিকে আছে।
এদিকে চলতি বছরের জুনে ইসরায়েল হঠাৎ ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রও অংশ নেয়। ওই হামলার জবাবে ইরান তেলআবিব ও মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে পাল্টা আঘাত হানে। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) সঙ্গে সব ধরনের সহযোগিতা বন্ধ করে দেয়।
সম্প্রতি ইউরোপীয় দেশগুলো অভিযোগ করেছে, ইরান চুক্তির শর্ত ভেঙে অনুমোদিত মাত্রার চেয়ে ৪০ গুণ বেশি ইউরেনিয়াম মজুত করেছে। যদিও তেহরান এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এরপর ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে-আগস্টের মধ্যে ইরান কূটনৈতিক সমাধানে না এলে তারা তেহরানের বিরুদ্ধে পুরোনো নিষেধাজ্ঞা ফিরিয়ে আনবে।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, তেহরান এই নিষেধাজ্ঞা ঠেকাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে এবং এজন্য রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে সমন্বয় করছে। তবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ হলে তার জবাব দেওয়ার মতো প্রস্তুতি ইরানের রয়েছে।
অন্যদিকে ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ-নোয়েল বারো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সতর্ক করে বলেছেন, ইরান আন্তর্জাতিক নিয়ম না মানলে আগস্টের শেষ নাগাদ ইউরোপীয় দেশগুলো অস্ত্র, পরমাণু প্রযুক্তি ও ব্যাংকিং খাতে কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করবে, যা এক দশক আগে তুলে নেওয়া হয়েছিল।
এ বিষয়ে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল হলে তার ফলাফল কারও জন্যই ভালো হবে না।