ইসলামে স্ত্রীর মর্যাদা ও অধিকার

2 hours ago 5
ইসলাম আবির্ভাবের আগে আরবের মানুষরা স্ত্রীদের সঙ্গে অত্যন্ত নিকৃষ্ট আচরণ করত। তাদের শুধু কাম-চরিতার্থের জন্য ব্যবহার করা হতো। হাজারবার তালাক দিয়েও তাদের সঙ্গে মেলামেশা করত। তাদের সাধারণ মানুষের কাতারে গণ্য করা হতো না। আল্লাহর রাসুল (সা.) বিদ্যমান এসব অসামাজিক কুসংস্কারের মূলে কুঠারাঘাত করেছেন। তিনি পুরুষদের নির্দেশ দিয়েছেন, ‘তুমি যখন খাবে, তাকেও খাওয়াবে এবং তুমি যখন পরবে, তাকেও পরাবে। চেহারায় কখনো প্রহার করবে না, অসদাচরণ করবে না।’ (আবু দাউদ: ২১৪২; মুসনাদে আহমাদ: ১৮৫০১)। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেছেন, ‘আর তোমরা স্ত্রীদের সঙ্গে উত্তম আচরণ করো। আর যদি তাকে তোমার অপছন্দও হয়, তবু তুমি যা অপছন্দ করছ, আল্লাহ তাতে সীমাহীন কল্যাণ দিয়ে দেবেন।’ (সুরা নিসা: ১৯) আল্লাহর রাসুল (সা.) স্ত্রীদের অধিকার ও মর্যাদার ব্যাপারে সোচ্চার ছিলেন। তাই তিনি বিদায় হজের ভাষণে দীর্ঘ বয়ানের একপর্যায়ে বলেছিলেন, ‘নারীদের বিষয়ে তোমরা আল্লাহকে ভয় করো! কারণ, তোমরা তাদের আল্লাহর আমানত হিসেবে গ্রহণ করেছ আর আল্লাহর বাণীর দ্বারাই তোমরা তাদের হালাল করেছ। তাদের ওপর তোমাদের বিষয়ে দায়িত্ব হলো, তারা খেয়াল রাখবে যাতে তোমাদের বিছানায় এমন কোনো লোক না অবস্থান করে যাকে তোমরা অপছন্দ করো। যদি তারা এ ধরনের কোনো কাজ করে তোমরা তাদের প্রহার করো। তবে তা হবে সহনীয় পর্যায়ে, অমানবিক নয়। তাদের জন্য তোমাদের দায়িত্ব হলো, তোমরা তাদের উত্তমরূপে রিজিক ও ভরণপোষণ দেবে।’ (মুসলিম: ১২১৮) ইসলামী শরিয়তে স্বামীর ওপর স্ত্রীর জন্য যে অধিকার সাব্যস্ত করেছে, তার সার কথা হচ্ছে—১. পূর্ণ মোহরানা আদায় করে দেওয়া; ২. প্রয়োজনমাফিক অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থানের ভালো ব্যবস্থা করা; ৩. স্ত্রীর সঙ্গে সদাচরণ করা; ৪. মাঝেমধ্যে মাহরাম আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ দেওয়া; ৫. প্রয়োজনমাফিক দ্বীন শেখানোর ব্যবস্থা করা; ৬. ইসলামী শরিয়ত কর্তৃক নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত রাখা; ৭. প্রয়োজনমতো সহবাস ও জৈবিক চাহিদা পূরণ করা ইত্যাদি। (সুরা নিসা: ১৯; আল-কাবায়ের, ইমাম জাহাবি, পৃষ্ঠা: ১৭৫) স্ত্রীর মন প্রফুল্ল রাখাও স্বামীর দায়িত্ব এবং স্ত্রীর প্রাপ্য অধিকার। বৈধতার সীমারেখায় স্ত্রীকে যথাসম্ভব আনন্দে ও প্রফুল্ল রাখা শরিয়তের নির্দেশ। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘মুসলমানের জন্য সব খেল-তামাশা নিষিদ্ধ, তবে তার ধনুক থেকে তীর চালনা, ঘোড়া চালনা, স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের রসিকতা, কেননা এগুলো ন্যায়সংগত।’ (তিরমিজি: ১৬৩৭)। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, একদা মসজিদের কাছে হাবশি ছেলেরা যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে খেলা করছিল। রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে আড়াল করে দাঁড়িয়ে ছিলেন আর আমি হাবশিদের খেলা দেখছিলাম। যতক্ষণ না আমার খেলা দেখার শখ পূর্ণ হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) ততক্ষণ কষ্ট করে আমার জন্য পূর্ণ সময় দাঁড়িয়ে ছিলেন। তোমরা ভেবে দেখো! একজন অল্পবয়সী খেলাপাগল মেয়ে কতক্ষণে তার শখ পূরণ হবে?’ (বুখারি: ৫২৩৬) একসঙ্গে দীর্ঘ একটা সময় স্বামী-স্ত্রী রূপে দুজন মানুষ পার্থিব জীবন কাটিয়ে দেয়। একসঙ্গে চলতে গিয়ে ছোটখাটো ঝগড়া, মনোমালিন্য, রাগ-অনুরাগ ইত্যাদি খুবই স্বাভাবিক। পুরুষের কর্তব্য হচ্ছে স্ত্রীদের সঙ্গে বিনম্র আচরণ করা এবং তাদের চারিত্রিক ত্রুটি ও অসৌজন্যমূলক আচরণের ওপর ধৈর্যধারণ করে তাদের ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখা। এ নির্দেশ দিয়ে রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা নারীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করো। কেননা নারী জাতিকে পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর পাঁজরের হাড়গুলোর মধ্যে ওপরের হাড়টি বেশি বাঁকা। তুমি যদি তা সোজা করতে যাও, তাহলে তা ভেঙে যাবে আর যদি ছেড়ে দাও, তাহলে সবসময় তা বাঁকাই হতে থাকবে। তাই নারীদের সঙ্গে ভালো ও কল্যাণময় ব্যবহার করেবে।’ (বুখারি: ৫১৮৬)। অন্যত্র এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কোনো মুমিন পুরুষ কোনো মুমিন নারীর প্রতি বিদ্বেষ-ঘৃণা পোষণ করবে না; কেননা তার কোনো চরিত্রকে অপছন্দ করলে অন্য কোনো চরিত্র সে পছন্দ করবে।’ (মুসলিম: ১৪৬)। আল্লাহতায়ালা আমাদের স্ত্রীর মর্যাদা ও অধিকার উপলব্ধি করে তা বাস্তবায়ন করার তওফিক দান করুন। কেননা হাদিসে এসেছে, ‘স্মরণ রেখো, তোমরা সবাই দায়িত্বপ্রাপ্ত, তোমরা সবাই নিজ নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে, রাষ্ট্রপ্রধান তার প্রজাদের হকের ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবেন, পুরুষ তার পরিবার-পরিজনের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে।’ (বুখারি: ৮৯৩) লেখক: ইমাম ও খতিব
Read Entire Article