আম গাছের কচি পাতা কাটা উইভিল পোকা মারাত্মক ক্ষতিকর। যা কচি পাতা, কলি ও নতুন ডগা কেটে খায়। এরা মূলত গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত করে এবং ফলন কমিয়ে দেয়। উইভিল পোকার আক্রমণে পাতা কেটে টুকরো টুকরো হয়ে ঝরে যায়। ফলে গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে এবং নতুন ডালপালা সঠিকভাবে গজাতে পারে না।
এ পোকা সাধারণত বসন্ত ও বর্ষাকালে বেশি সক্রিয় থাকে, যখন গাছে নতুন পাতা বের হয়। এদের স্ত্রী পোকা পাতার মধ্যে ডিম পাড়ে এবং ডিম ফুটে শূককীট বের হয়ে গাছের কোষ নষ্ট করে। দীর্ঘমেয়াদে এর প্রভাবে গাছের উৎপাদনশীলতা হ্রাস পায়। তাই সময়মতো প্রতিরোধ ও দমন ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।
এ পোকার প্রতিকারের জন্য গাছের নিচে পড়ে থাকা ক্ষতিগ্রস্ত পাতা অপসারণ করা, নতুন পাতা বের হলে সেগুলোতে কীটনাশক স্প্রে করা এবং গাছের গোড়ায় আঠালো বেস্টনি তৈরি করে পোকা গাছে ওঠা বন্ধ করা যেতে পারে।
শারীরিক বৈশিষ্ট্য
পোকাটি লম্বা ও শুঁড়ের মতো দেখতে হয়, যার মুখের সামনে একটি লম্বা শুঁড় থাকে। এর শরীর সাধারণত ধূসর বাদামি রঙের হয় এবং লার্ভার রং ময়লা সবুজ হয়।
ক্ষতির লক্ষণ
প্রাপ্তবয়স্ক স্ত্রী পোকা কচি পাতার ওপর ডিম পাড়ে এবং এরপর পাতাটি কেটে দেয়। ফলে কাঁচি দিয়ে কাটার মতো করে পাতা কেটে গাছের নিচে পড়ে যায়।
প্রভাব
এ পোকার আক্রমণে গাছের নতুন পাতা নষ্ট হয় এবং বেশি আক্রমণে একটি ছোট গাছ পাতাশূন্য হয়ে যেতে পারে, যা গাছের বৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করে।
জৈব ব্যবস্থাপনা
> আক্রান্ত পাতা সংগ্রহ ও নষ্টকরণ
> আলোক ফাঁদ ব্যবহার
> কাঁপানো বা ঝাঁকুনি দেওয়া
> জৈব কীটনাশক প্রয়োগ
> আলোর প্রতি আকৃষ্ট হওয়া দমন কৌশল
> প্রাকৃতিক শত্রু সংরক্ষণ
> জৈব সার ও সঠিক পরিচর্যা
> বাগান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা
> গাছের নিচে পড়ে থাকা ক্ষতিগ্রস্ত পাতা সংগ্রহ করে অপসারণ করা
> সংগৃহীত পাতা পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
রাসায়নিক ব্যবস্থাপনা
উইভিল পোকার আক্রমণ দেখা দিলে ইমিডাক্লোপ্রিড (১৭.৮% এসএল) প্রতি লিটার পানিতে ০.৩ মিলিলিটার মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। সকালে বা বিকেলে, বাতাস কম থাকলে স্প্রে করতে হবে। কচি পাতায় সরাসরি স্প্রে করতে হবে। যেন পাতার ভেতর ও বাইরে কীটনাশক লাগে। প্রয়োজন অনুযায়ী ১০-১৫ দিন অন্তর পুনরায় স্প্রে করা যায়।
সতর্কতা
একই কীটনাশক বারবার ব্যবহার না করে পরিবর্তন করে ব্যবহার করা ভালো, যাতে পোকা প্রতিরোধী না হয়। কীটনাশক ব্যবহারের সময় সঠিক পিপিই যেমন মাস্ক, গ্লাভস, চশমা ব্যবহার করতে হবে। স্প্রে শেষে নির্দিষ্ট কারেন্সি পিরিয়ড মেনে আম সংগ্রহ করতে হবে।
আঠালো বেস্টনি
গাছের গোড়ায় (মাটি থেকে এক ফুট ওপরে) আঠালো পদার্থ দিয়ে বেস্টনি তৈরি করলে পোকা গাছ বেয়ে ওপরে উঠতে পারবে না।
আম গাছের কচি পাতা কাটা উইভিল পোকা আম উৎপাদনের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সঠিক সময়ে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নিলে এরা ব্যাপক ক্ষতি করতে পারে। তাই সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি অনুসরণ করে পোকার জীবনচক্র অনুযায়ী দমন করা জরুরি। কৃষককে সচেতনতা বৃদ্ধি ও নিয়মিত পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে এ পোকা নিয়ন্ত্রণে আনলে আম গাছ সুস্থ থাকবে এবং ফলনের পরিমাণ ও গুণগত মান বৃদ্ধি পাবে।
এসইউ/জেআইএম