রাজধানী উত্তরায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে মো. আলী হুসেন (৪৪) নামের এক ব্যক্তি গুলিতে নিহতের ঘটনায় রোববার (৮ ডিসেম্বর) শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদেরসহ ১৮৯ জনকে আসামি করে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় আওয়ামী লীগের প্রায় ৭০০ থেকে ৮০০ জনকে অজ্ঞাত হিসেবে আসামি করা হয়েছে।
এ মামলায় মেহেরপুর জেলার ১১ ব্যক্তির নাম রয়েছে। তাদের মধ্যে ৯ জন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা। বাকি দুজনের মধ্যে ১ জন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট এবং অপরজন স্থানীয় বিএনপি নেতার ছেলে।
নিহতের আত্মীয় খুলনার পাইকগাছা উপজেলার উত্তর ওয়াবদা বাতিখালি গ্রামের মমিন সানার ছেলে মফিজুল ইসলাম সানা বাদী হয়ে ঢাকার চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট (উত্তরা পূর্ব) আমলী আদালতে মামলাটি দায়ের করেন।
কালবেলা অনলাইনে প্রকাশিত নিউজটির লিংক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করে, মামলাশ তাদের আসামি করাতে ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন মাহফুজুর রহমান নবাব ও মোর্শেদ আলম লিপু। জেলা বিএনপি, ছাত্রদল ও যুবদলের একাধিক নেতাকর্মী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মাহফুজুর রহমান নবাবকে মামলার আসামি করার নিন্দা জানিয়ে পোস্ট করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে আরও লিখেছেন কেন্দ্রীয় যুবদল নেতা ইমরান আহমেদ প্রিন্স।
মোরশেদ আলম লিপু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোন এক নেতাকে উদ্দেশ্য করে লিখেছেন, ‘আর কত কি দেখব? এতদিন ছিলাম চাঁদাবাজ, এবার আবার হত্যাকারী? এগুলোর জন্য নিন্দা না ক্ষোভ জানাবো তাই ভাবার বিষয়। অসংখ্য ধন্যবাদ লিডার মহোদয়।
অন্যদিকে দুবাই প্রবাসী মাহফুজুর রহমান নবাব লিখেছেন, দীর্ঘ ঊনিশ বছর বিএনপি রাজনীতি করে স্বাধীন দেশে আমাকে আওয়ামী লীগ বানায় দেওয়া হলো! আমি বিএনপির জন্য কতটুকু ত্যাগ স্বীকার করেছি সেটা মেহেরপুর জেলা বিএনপি এবং দেশ নায়ক তারেক রহমান জানে। এই নোংরা কার্যকলাপের বিচার কি চাইবনা? যে বা যারা এই জঘন্য কাজটা করছেন তাদেরকে খুব দ্রুত সামনে আনবো। দেশ নায়ক তারেক রহমানের কাছে তাদের বিচার দাবি করছি!!
এবিষয়ে মেহেরপুর জেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা মাহফুজুর রহমান নবাব দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে দাবি করেন।
নবাব ও লিপুর সঙ্গে ফেসবুক মেসেঞ্জারে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে নবাব এতে সাড়া দেয়নি। তবে মুর্শিদ আলম লিপুর সঙ্গে কথা হয় কালবেলা প্রতিনিধির।
মুর্শিদ আলম লিপু বলেন, আমি কোনো রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট না। রাজনীতি আমি পছন্দ করি না। তবে আমার পরিবারের সদস্যরা সকলেই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। হয়রানি করার জন্যই আমাকে এই মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি। খোঁজ নিয়ে জেনেছি, এটা জিআর মামলা। তদন্তে গেলে এমনিই আমার নাম বাদ পড়ে যাবে।
মেহেরপুর জেলা যুবদলের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক হুজাইফা ডিক্লেয়ার কালবেলাকে বলেন, আমি দীর্ঘ ঊনিশ বছর ধরে বিএনপির রাজনীতিতে নবাবকে থাকতে দেখেছি। স্বাধীন দেশে তাকে আওয়ামী লীগ বানিয়ে দেওয়া হলো। গত বছরেও ২৮ অক্টোবর থেকে রাজপথে আমার সঙ্গে আন্দোলনে ছিল নবাব। সে বিএনপির জন্য কতটুকু ত্যাগ স্বীকার করেছে সেটা মেহেরপুর জেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা জানে।
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম মেহেরপুর জেলা শাখার সদস্য এ্যাডভোকেট সেলিম রেজা কল্লোল বলেন, মাহফুজুর রহমান নবাবকে আমি দীর্ঘদিন ধরে ছিনি। তাকে আমি মামা বলে ডাকি। নবাব ও তার পরিবারের সদস্যরা কয়েক যুগ ধরে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। কার ইন্ধনে এবং কিভাবে এই মামলার আসামীর তালিকায় তার নাম আসলো সেটা খুঁজে বের করা উচিৎ।
ঢাকা মহানগর উত্তর জাতীয়তাবাদী যুবদলের নেতা ইমরান আহমেদ প্রিন্স কালবেলাকে বলেন, একজন নবাব একদিনে তৈরি হয় নাই। জেলা পর্যায় থেকে ছাত্রদলের রাজনীতি শুরু করে তিলে তিলে গড়ে উঠেছে। আমার ধারণা কেউ হয়তো কোনো ধান্দাবাজির উদ্দেশ্যে এই মামলার আসামির তালিকায় নবাবের নাম ঢুকিয়েছে। চাঁদাবাজ ও ধান্দাবাজদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করতে আমাদের খুব বেশি সময় লাগবে না।
মেহেরপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মাসুদ অরুণ কালবেলাকে বলেন, মাহফুজুর রহমান নবাব ছাত্র থাকাকালীন সময় থেকেই জাতীয়তাবাদী রাজনীতির সঙ্গে সংযুক্ত। বিএনপির কেন্দ্রীয় অনেক নেতার সঙ্গেই তার সখ্যতা রয়েছে। উত্তরার মামলাটিতে হয়তো কোনো ভুল তথ্যের কারণে আসামির তালিকায় তার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বর্তমান সময়ে সারা দেশেই এরকম একাধিক ঘটনা আমাদের চোখে পড়েছে।
এ বিষয়ে মামলার বাদী এবং আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভুলে তাদের নাম দেওয়া হয়েছে। দ্রুত তাদের নাম মামলা থেকে প্রত্যাহার করা হবে জানান তিনি।