বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিনের পদত্যাগের দাবিতে সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে পদত্যাগ না করায় কার্যালয়ে তালা দেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় বিক্ষোভ করেন তারা।
বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।
এদিন বিকেলে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের স্মরণে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্মরণসভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। এই অনুষ্ঠানে উপাচার্য শুচিতা শরমিন প্রধান অতিথি থাকার কথা থাকলেও তাকে বর্জনের ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে ওই অনুষ্ঠানের ব্যানারে প্রধান অতিথি হিসেবে তার নাম মুছে সেখানে সহউপাচার্য অধ্যাপক গোলাম রব্বানীকে প্রধান অতিথি করে অনুষ্ঠান করা হয়। তবে শিক্ষক-কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীদের বৃহৎ একটি অংশ সেখানে অনুপস্থিত থাকতে দেখা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্র জানায়, উপাচার্য গত মঙ্গলবার রাত থেকেই ক্যাম্পাসে নেই। তিনি মুঠোফোনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করলেও গণমাধ্যমকর্মীদের এড়িয়ে চলছেন। আবার তিনি ফলাফল শিটে সঠিক সময়ে স্বাক্ষর না করা নিয়েও শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। পরে যদিও শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে ইংরেজি ও ফিন্যান্স বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের ফলাফলে স্বাক্ষর করেন তিনি। এ ছাড়া সহউপাচার্যকে অসহযোগিতা করারও অভিযোগ উঠেছে উপাচার্যের বিরুদ্ধে।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ছাত্রদলের বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি রেজা শরিফ বলেন, এই উপাচার্য আওয়ামী লীগের দোসরদের পুনর্বাসনের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সর্বশেষ বিতর্কিত ব্যক্তিকে কোষাধ্যক্ষ হিসেবে যোগদানে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবার বিরোধিতা সত্ত্বেও সহযোগিতা করেছেন উপাচার্য। তিনি যোগদানের পর কোনো কাজই সময়মতো ও ঠিকঠাকভাবে করছেন না। তিনি নিজের ইচ্ছামাফিক সবকিছু চালাতে চাইছেন। ফলে শিক্ষার্থীরা সময়মতো পরীক্ষার রেজাল্ট পাচ্ছেন না, মেডিকেলে গেলে ওষুধ মিলছে না। সব বিষয় মিলিয়ে তারা উপাচার্যের পদত্যাগের আন্দোলন করছেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর এ টি এম রফিকুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে উপাচার্যের কার্যালয় তালাবদ্ধ করেছেন। বিষয়টি আমরা অবগত আছি।
এর আগে অর্থাৎ গত ২৬ নভেম্বরে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক- শিক্ষার্থীদের একটি অংশের বাধার মুখে যোগদান করতে এসেও ক্যাম্পাস ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন নতুন নিয়োগ পাওয়া কোষাধ্যক্ষ কর্নেল (অব.) আবু হেনা মোস্তফা কামাল খান। পরে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় এক দফা দাবিতে উপনীত হয়ে উপাচার্যের পদত্যাগ চায় শিক্ষার্থীরা।
উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি ও শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে সংহতি প্রকাশ করা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সিরাজিস সাদিক বলেন, খুবই দুঃখজনক যে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পতিত স্বৈরাচার ও ফ্যাসিস্টদের দোসরদের পক্ষের শক্তিকে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে এবং তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনমতকে তোয়াক্কা না করে তারা বিভিন্নভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থবিরতা তৈরি করেছে। উদ্বেগজনকভাবে এটা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, বর্তমান প্রশাসন তাকে গভীর রাতে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদান সংবলিত নির্দেশনা জারি করে তাকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছে। সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে অবহিত। এ বিষয়টি নিন্দনীয় বলে মনে করি বলে আমরা শিক্ষকরা আন্দোলনে শরীক হয়েছি।
কোস্টাল স্টাডিজ অ্যান্ড ডিজাস্টার বিভাগের চেয়ারম্যান হাফিজ আশরাফুল হক বলেন, উপাচার্য শুচিতা শরমিন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সাবেক উপচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর ঘনিষ্ঠজন। তার আরেক সহযোগী কর্নেল (অব.) আবু হেনা মোস্তফা কামাল খানকে এখানে কোষাধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগেও অধ্যাপক কলিমুল্লাহ ও বর্তমান উপাচার্য শুচিতা শরমিনের হাত রয়েছে। অধ্যাপক কলিমুল্লাহ ও আবু হেনা মোস্তফা কামাল-এরা ফ্যাসিস্টদের সহযোগী এবং নানাকাজে বিতর্কিত। আমরা ৫৩ জন শিক্ষক এবং অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী স্বৈরাচার পুনর্বাসনের বিরুদ্ধে সংহতি প্রকাশ করেছি। আমরা এই দাবিতে অনড় আছি এবং থাকবে।
প্রসঙ্গত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের পর অপসারণ করা হয় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের। শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে গত ২০ আগস্ট পদত্যাগের করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া। পরবর্তীতে ২৩ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিন। পরেই বিতর্ক হয় শিক্ষার্থীদের মাঝে।