উদ্বোধনের পরদিনই ৯২৫ কোটি টাকার সেতু থেকে ল্যাম্পপোস্টের তার চুরি

2 hours ago 2

গাইবান্ধার হরিপুর-চিলমারী সংযোগ সড়কে তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত বহুল প্রতীক্ষিত ‘মাওলানা ভাসানী সেতু’ উদ্বোধনের রাত থেকেই পড়েছে চরম নিরাপত্তাহীনতায়। সেতুর ল্যাম্পপোস্টে বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকায় পুরো সেতুটি অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল। এতে যানবাহন ও পথচারীরা ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন, আর দুর্ঘটনার আশঙ্কা বেড়েছে কয়েকগুণ। তবে স্থানীয় ও ফেসবুক ব্যবহারকারীরা বলছেন ল্যাম্পপোস্টের তার চুরির ঘটনা ঘটেছে।

শুক্রবার (২২ আগস্ট) সকালে গাইবান্ধা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী উজ্জল চৌধুরী কালবেলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

তিনি বলেন, বিষয়টি আমরা উদ্বোধনের পরদিন রাতেই জানতে পারি। উদ্বোধনের পরদিন কোনো এক সময়ে দুর্বৃত্তরা সেতুর ল্যাম্পপোস্টের বৈদ্যুতিক তার চুরি করেছে। উদ্বোধনের দিন ল্যাম্পপোস্টে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া ছিল না। আমরা দুষ্কৃতকারীদের শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেব। একই সঙ্গে দ্রুত নতুন করে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার কাজ শুরু হবে। পাশাপাশি সেতুতে সার্বক্ষণিক পুলিশি নিরাপত্তা দেওয়ার বিষয়টিও বিবেচনা করা হচ্ছে।

এর আগে, গত বুধবার (২০ আগস্ট) রাতেই সেতুটি অন্ধকারে ডুবে যায়। অনেক যাত্রী ও স্থানীয়রা লাইট বন্ধ অবস্থার ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। ফেসবুকে ভাইরাল হয় ল্যাম্পপোস্টের তার কেটে নেওয়ার ছবিও।

এদিকে আমাদের গাইবান্ধা ও বেশ কয়েকটি ফেসবুক ভেরিফায়েড পেজের পোস্টে দেখা যায়, ‘মওলানা ভাসানী ব্রিজের’ ল্যাম্পপোস্টের বিদ্যুতের কেবল (ইলেকট্রিক তার) চুরি হওয়ার কারণে ব্রিজটিতে বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ ছাড়া তার সংযোগ বিচ্ছিন্ন স্থলের দুটি ছবি আপলোড করেন ফেসবুক ব্যবহারকারীরা। এ ধরনের পোস্ট করেছেন আমাদের গাইবান্ধা ফেসবুক পেজ ও কয়েকটি ফেসবুক আইডি।

এসব পোস্টের মধ্যে ইয়াসিন আরাফাত নামের এক ফেসবুক ব্যবহারকারী পোস্ট করেন। তার পোস্টে সাগর মিয়া নামের এক ফেসবুক ব্যবহারকারী মন্তব্য করেন, ‘এরা কেমন মানুষ ভাই নিজেদের ভালো নিজেরাই বোঝে না।’ আরেকজন ফেসবুক ব্যবহারকারী আতিকুর রহমান মণ্ডল মন্তব্য করেন, ‘ভাই তার চুরি এবং অসম্ভব ওরা কানেকশন করে নাই। এখন চুরি বলতেছে’ এরকম নানান বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানান ফেসবুক ব্যবহারকারীরা।

স্থানীয় হাসান নামের এক ব্যক্তি বলেন, উদ্বোধনের আগে কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল ল্যাম্পপোস্টের লাইন সংযোগ দিয়ে পুরো ব্রিজ আলোকিত করা। তা না করায় মূলত এ কারণেই মানুষের মধ্যে নানা প্রশ্ন ও ফেসবুকে পোস্ট-কমেন্ট। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে বের করা উচিত হবে, তার আদৌ চুরি হয়েছে কি না? আর কেনই বা সংযোগ দেওয়া হলো না। ল্যাম্পপোস্টে লাইট না জ্বালানোর বিষয়টি আমার কাছেও বোধগম্য হচ্ছে না। এত কোটির ব্রিজে জ্বলছে না কেন আলো?

পথচারী, চালক ও স্থানীয়রা জানান, আলো না থাকায় সন্ধ্যার পর থেকে সেতুতে চলাচল করা কঠিন হয়ে পড়েছে। দুর্ঘটনার ভয় মাথায় নিয়ে প্রতিনিয়ত পারাপার হতে হচ্ছে। তাদের দাবি, দ্রুততম সময়ের মধ্যে ল্যাম্পপোস্টে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে সেতুটি আবার আলোকিত করা হোক। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে এ ধরনের চুরি বা নাশকতার ঘটনা রোধে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতে হবে।

তাদের মতে, ভাসানী সেতুটি এখন কেবল একটি সড়ক যোগাযোগ প্রকল্প নয়; বরং একটি দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ সেতুটি দেখতে ভিড় করছেন। তাই দর্শনার্থীদের নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় পরিবেশে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ নিশ্চিত করা জরুরি।

এ বিষয়ে সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি আব্দুল হাকিম আজাদ বলেন, কর্তৃপক্ষের চুরি সংক্রান্ত অভিযোগ পেলে গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হবে। দুর্বৃত্তদের শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, সেতুর শৃঙ্খলা রক্ষায় আজ থেকেই সেখানে পর্যাপ্ত পুলিশ সদস্য রাখা হচ্ছে। শিগগির একটি অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হবে এবং স্থায়ী ক্যাম্পের জন্যও আবেদন করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, এক মাসের মধ্যেই অনুমোদন মিলবে।

প্রসঙ্গত, গত বুধবার (২০ আগস্ট) দুপুরে উত্তরাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে ‘মাওলানা ভাসানী সেতু’ উদ্বোধন করেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। উদ্বোধনের পর থেকেই প্রতিদিন হাজারো মানুষ সেতুটি দেখতে ভিড় করছেন।

বাংলাদেশ সরকার (জিওবি), সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট (এসএফডি) এবং ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ওফিড) অর্থায়নে সেতুটি নির্মাণে মোট ব্যয় হয়েছে ৯২৫ কোটি টাকা। ১৪৯০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৯ দশমিক ৬ মিটার প্রস্থের সেতুটির লেন সংখ্যা ২টি এবং মোট স্প্যান সংখ্যা ৩১টি। প্রকল্পে সংযোগ সড়ক, নদীশাসনসহ প্রায় ১৩৩ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে।
 

Read Entire Article