সমাজে এমন অসংখ্য মানুষ আছেন যারা সব হারিয়েও হাল ছাড়েন না। তাদেরই একজন কুয়াকাটা পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের জেলে ছোরাফ (৩০)। পরিবারের মুখে দুবেলা খাবার তুলে দিতে এক পা নিয়েই গভীর সমুদ্রে মাছ শিকার করেন তিনি। দৃঢ় মনোবল ও কঠোর শ্রমেই আজও লড়ে যাচ্ছেন জীবনের সঙ্গে। যেন তার পরিবার বেঁচে থাকে সম্মানের সঙ্গে।
২০১৫ সালে কুয়াকাটা থেকে আলিপুর যাওয়ার পথে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় বাঁ পা হারান ছোরাফ। সন্তানকে বাঁচাতে সর্বস্ব বিক্রি করে চিকিৎসা করান বাবা কালাম মাঝি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চিকিৎসকদের সিদ্ধান্তে কেটে ফেলতে হয় ছেলের পা। সেই থেকেই শুরু হয় পরিবারের অন্ধকার দিন।
এক পা নিয়েই জাল সেলাই, নৌকা ওঠানো-নামানো এমনকি গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যাচ্ছেন ছোরাফ। তার উপার্জনেই চলছে পুরো পরিবারের জীবনযুদ্ধ।
ছোরাফের বাবা কালাম মাঝি বলেন, ‘নিজের সম্বল বিক্রি করে চিকিৎসা করেছি। এখন সংসারের সমস্ত দায়ভার ছোরাফের কাঁধে। আমি আগের মতো আর কাজ করতে পারি না। যদি সমাজ বা সরকার একটু সহযোগিতা করত, তাহলে আমাদের কষ্ট কিছুটা লাঘব হতো।’
অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে মা ফাতেমা বেগম বলেন, ‘দুই মাস হাসপাতালে রুটি খেয়ে থেকেছি, রোজা রেখেছি, তবুও ছেলের পাশে ছিলাম। এখনো ভয় হয়, যদি আবার কোনো বড় বিপদ আসে! আমি দেশের মানুষের কাছে আমার ছেলের জন্য সাহায্য চাই।’
স্ত্রী হালিমা বেগম জানান, পা হারানোর পরও ছোরাফকে ছেড়ে যাইনি। ২০১৬ সালে বিয়ে করেছি। এখন আমাদের তিন সন্তান। বড় ছেলে বাবাকে সাহায্য করতে ছোট্ট একটা চায়ের দোকান চালায়।
জানা গেছে, সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রের একটি ঘরে বসবাস করছেন তারা। এনজিও থেকে অল্প ঋণ নিয়ে একটি ছোট নৌকা তৈরি করেছেন ছোরাফ। ছোট ভাইকে নিয়ে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যান তিনি। কৃত্রিম পা ও ক্র্যাচই তার একমাত্র ভরসা।
নিজের সংগ্রামের কথা বলতে গিয়ে ছোরাফ বলেন, ‘জীবন বাজি রেখে সমুদ্রে যাই। স্রোতের বিপরীতে লড়াই করতে করতে এটা এখন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। চাই সরকার আমাকে সহযোগিতা করুক, যাতে আমার সন্তানদের মুখে হাসি থাকে।’