ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজকে নিয়ে সমকক্ষ স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্যে সম্প্রতি একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আর এই কমিটিকে এক মাসের মধ্যে স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় গঠন করার দাবি জানিয়েছেন কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (১ জানুয়ারি) বিকাল ৫ টার দিকে ঢাকা কলেজের ক্যাফেটেরিয়ার সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এ দাবি জানান সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তরের ফোকাল পারসন ও কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী জাকারিয়া বারি সাগর।
তিনি বলেন, আমরা দীর্ঘদিন থেকে ঢাবি অধিভুক্তি বাতিল করে সাত কলেজের সমন্বয়ে যে স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি জানিয়ে আন্দোলন করে আসছিলাম, সরকার আমাদের সে দাবি আমলে নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ নিয়েছে। সরকার সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পৃথকীকরণ এবং কলেজগুলোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সমকক্ষ স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর রূপরেখা প্রণয়নের জন্য একটি উচ্চ পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেছে। সাত কলেজের জন্য গঠিত বিশেষজ্ঞ এই কমিটিকে আমরা শিক্ষার্থীরা স্বাগত জানাচ্ছি।
জাকারিয়া বারি বলেন, রাষ্ট্র আমাদের শিক্ষা বৈষম্য দূর করে মানসম্মত উচ্চশিক্ষা বাস্তবায়নে যে পদক্ষেপ নিয়েছে, তা আমরা ইতিবাচক হিসেবেই দেখছি। একই সঙ্গে আমরা এই কমিটিতে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি সংযুক্তি ও প্রয়োজনে অন্যান্য অংশীজনকে সম্পৃক্ত করার সুযোগের বিষয়টিকে সাধুবাদ জানাচ্ছি। আমরা এ কমিটিকে আশ্বস্ত করতে চাই, আমাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রতিটি শিক্ষার্থী এই কমিটিকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছে।
এই শিক্ষার্থী বলেন, কমিটির সভাপতি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজসহ সকল সদস্যদের আমাদের সমস্যার কথা জানানো হয়েছে। তবুও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশেষজ্ঞ কমিটিকে চার মাস সময় দেওয়া হয়েছে। যদিও এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, তবে এই দীর্ঘ সময়সীমাটি যৌক্তিকতার দিক থেকে প্রশ্নবিদ্ধ। বিগত চার মাসে সরকারের বিভিন্ন মহলে সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিল করে একটি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সকলেই এ বিষয়ে একমত যে, সাত কলেজে ইন্টারমিডিয়েট পর্যায় রেখে একটি পূর্ণাঙ্গ কাঠামো দেওয়া সম্ভব। বর্তমানে এই কলেজগুলোর ৭টি পৃথক ক্যাম্পাসে অনার্স ও মাস্টার্স কার্যক্রম চলছে। ফলে নতুন অবকাঠামোরও প্রয়োজন নেই বা থাকলেও তা অতি সামান্য।
তিনি আরও বলেন, সাত কলেজের এ সমস্যা সমাধানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গঠিত ১৩ সদস্যের কমিটি ৬ সপ্তাহ সময় নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। যে প্রতিবেদনটি নবগঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটিকে দেওয়ার কথা রয়েছে। এমন বাস্তবতায় আমরা শিক্ষার্থীরা নবগঠিত কমিটিকে দীর্ঘ ৪ মাস সময় দেওয়া অতিরঞ্জিত বলে মনে করছি। আমরা নবগঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটিকে ৩০ কার্যদিবস অর্থাৎ ১ মাসের মধ্যে সাত কলেজের সমন্বয়ে একটি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রজ্ঞাপন জাতির সামনে প্রকাশ করার দাবি জানাচ্ছি।
জাকারিয়া বলেন, মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনের কার্যপরিধি ২নং এ উল্লেখ আছে, ৭টি কলেজের স্বতন্ত্র সত্তা বজায় রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমকক্ষ একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোতে রূপান্তরের প্রক্রিয়া নির্ধারণ ও বিকল্পসমূহ বিবেচনা করা। এই ‘সমকক্ষ’ শব্দটি শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। আমরা বারংবার বলে এসেছি যে, সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা আর কোনো প্রকার পরীক্ষামূলক পদ্ধতির ফাঁদে পা দেবে না। সমকক্ষ কিংবা এ জাতীয় সংশয়মূলক কোনো শব্দ শিক্ষার্থীরা গ্রহণ করবে না। যেহেতু কার্যপরিধি ২-এ সমকক্ষ কিংবা বিকল্পের কথা উল্লেখ আছে, সেহেতু আমরা মনে করি এ কমিটির স্বাধীনভাবে কাজের সুযোগ রয়েছে।
জাকারিয়া বলেন, আমাদের সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের মুক্তির এ আন্দোলন গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর শুরু হয়। ঢাকা কলেজে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আমরা প্রথমবারের মতো সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আমাদের সংকট ও সমস্যার চিত্র তুলে ধরি। সমস্যা সমাধানে আমরা ঢাবি অধিভুক্তি বাতিল করে সাত কলেজের সমন্বয়ে একটি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানাই। এরপর একই দাবি জানিয়ে ২৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, ২৯ সেপ্টেম্বর ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান ও ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজকে স্মারকলিপি দিয়েছি। একই স্মারকলিপি কলেজগুলোর সম্মানিত অধ্যক্ষদেরও দেওয়া হয়েছে।
এই শিক্ষার্থী আরও বলেন, আমরা ধারাবাহিকভাবে মানববন্ধন, বিক্ষোভ, নীলক্ষেত ও সায়েন্সল্যাব মোড় অবরোধ করে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করেছি। আমরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছি। আমাদের আন্দোলনের যৌক্তিকতা উপলব্ধি করে সাত কলেজের শিক্ষার্থী ছাড়াও সর্বমহলের সমর্থন আমরা পেয়েছি। পরবর্তী সময়ে শিক্ষা উপদেষ্টার আশ্বাসে আমরা আন্দোলন সাময়িক স্থগিত করেছি।
পাশাপাশি এই শিক্ষার্থী বলেন, শিক্ষা উপদেষ্টা ঢাকা কলেজে এসে সাত কলেজকে ঢাবি অধিভুক্তি বাতিল করে স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো দেওয়ার জন্য হাইভোল্টেজ কমিটি গঠনের ঘোষণা দেন। এরপর আমরা রাষ্ট্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীলতা ও শিক্ষার্থী হিসেবে নিজেদের দায়িত্বশীলতার জায়গা থেকে মাঠ পর্যায়ের সব কর্মসূচি সাময়িক স্থগিত করে শ্রেণিকক্ষে ফিরে যাই। আমরা আর নতুন কোনো ধরনের ছলচাতুরি দেখতে চাই না, এ কমিটির মাধ্যমে যদি আমাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফল না ঘটে, আমরা ফের পড়ার টেবিল ছেড়ে রাজপথে নেবে আসতে বাধ্য হব।