একাধিক ছেলের সঙ্গে কথা বলায় মেয়েকে হত্যা করলেন মা-বাবা

3 hours ago 5

ভারতের উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে (এলাহাবাদ) প্রকাশ পেয়েছে এক নৃশংস ‘অনার কিলিং’র ঘটনা। একাধিক ছেলের সঙ্গে কথা বলা ও সম্পর্কে জড়ানোয় ক্ষুব্ধ হয়ে মেয়েকে হত্যা করেছেন তারই মা-বাবা।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, প্রথমে মা মেয়েকে খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করেন। এরপর মেয়েকে কোলে তুলে ২০০ মিটার দূরের একটি ক্ষেতে নিয়ে গিয়ে গলা কেটে হত্যা করেন বাবা। পুরো ঘটনা চুপচাপ দেখেন মা।

লাশটি ফেলে রেখে ওই দম্পতি বাড়ি ফিরে এসে সকালে প্রতিবেশীদের জানান, ভোর সাড়ে ৫টার দিকে নাকি মেয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আর ফেরেনি। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই গ্রামবাসীরা ক্ষেতে মেয়ের লাশ দেখতে পান। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে মা-বাবা শোকে ভেঙে পড়ার নাটক করেন। প্রথমদিকে পুলিশও তাদের কথায় বিশ্বাস করেছিল। কিন্তু ময়নাতদন্তেই বেরিয়ে আসে সত্য।

পুলিশ জানায়, ৫ নভেম্বর ঘুরপুর থানার অন্তর্গত কানতি গ্রামে সরিতা নামের ওই মেয়ের লাশ উদ্ধার হয়। ফরেনসিক টিম ও কুকুর বাহিনী ঘটনাস্থলে এসে অনুসন্ধান চালালে কুকুরটি সরাসরি মেয়েটির বাড়ির সামনে গিয়ে থেমে যায়। এতে সন্দেহ হয় তদন্ত কর্মকর্তাদের।

পরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মেয়েটির বাবা রমেশকে ডাকা হয়। প্রথমে তিনি জানান, মেয়ে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বেরিয়ে গিয়েছিল, আর ফেরেনি। কিন্তু ময়নাতদন্তের রিপোর্টে জানা যায়, মৃত্যু ঘটেছে আগের রাতেই, প্রায় ১৬ ঘণ্টা আগে। মেয়ের পাকস্থলীতে হজম না হওয়া ভাতও পাওয়া যায়, যা প্রমাণ করে, খাওয়ার পরপরই তাকে হত্যা করা হয়েছে। ফলে পরিবারের দেওয়া বয়ান মিথ্যা বলে নিশ্চিত হয় পুলিশ।

এরপর কৌশলে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় মেয়েটির ভাইকে। সে জানায়, আমি বাবাকে থামাতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তিনি শোনেননি। বরং আমাকে চুপ থাকতে ও নিজের কাজে মন দিতে হুমকি দেন।

শেষে ৭ নভেম্বর সন্দেহভাজন হিসেবে রমেশকে হেফাজতে নেয় পুলিশ। জেরা শুরু হলে প্রথমে তিনি গা বাঁচানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু ময়নাতদন্ত রিপোর্ট ও সাক্ষীদের জবানবন্দি দেখানোর পর কান্নায় ভেঙে পড়েন ও অপরাধ স্বীকার করেন।

রমেশ বলেন, আমার মেয়ে অনেক ছেলের সঙ্গে কথা বলতো। দুই বছর আগে সে গর্ভবতীও হয়েছিল, পরে গর্ভপাত করাতে হয়। অনেক বুঝিয়েছি, মেরেছিও, কিন্তু সে শোনেনি। তাই মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নিই। স্ত্রীকেও জানাই পরিকল্পনাটি।

তিনি আরও বলেন, স্ত্রী মেয়েকে খাবারে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেয়। অচেতন হলে আমি আগেই ক্ষেতে অপেক্ষা করছিলাম। ২০০ মিটার দূরে নিয়ে গিয়ে তার গলা কেটে দিই। আমার স্ত্রী তখন পাশে ছিল। এরপর আমরা দুজনই লাশ ফেলে বাড়ি ফিরে আসি।

স্থানীয় পুলিশের ডেপুটি কমিশনার বিবেকচন্দ্র যাদব বলেন, ঘটনাটি সম্পূর্ণ অনার কিলিং। বাবা অপরাধ স্বীকার করেছেন, মায়ের সংশ্লিষ্টতাও স্পষ্ট। দুজনকেই গ্রেফতার করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

সূত্র: এনডিটিভি

এসএএইচ

Read Entire Article