একীভূত হয়ে সরকারের নিয়ন্ত্রণে আসছে দুর্বল ছয়টি ব্যাংক। এরই মধ্যে ব্যাংকগুলোর সম্পদ পর্যালোচনা করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এই প্রক্রিয়া আগামী জুলাইয়ের মধ্যে শেষ হবে বলে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল টোয়েন্টিফোরকে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
গত দেড় দশকে লুটপাট আর অনিয়মে যে পরিমাণ অর্থ খোয়া গেছে, তা ইতিহাসে বিরল। এ কারণে ভয়াবহ অবস্থায় এক সময়ের ভালো প্রতিষ্ঠানগুলোও। নতুন গভর্নর দায়িত্ব নেওয়ার পর দুর্বল ১১টি ব্যাংক চিহ্নিত করে সেগুলোর বিপরীতে নেওয়া হয় অর্থ সহায়তার মতো উদ্যোগও। এরপর সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড (এসআইবিএল), ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের সম্পদ পর্যালোচনা করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
- আরও পড়ুন
- দুর্বল ব্যাংক একীভূত করতে সহায়তা দিতে প্রস্তুত বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ
- একীভূত হলে দুর্বল ব্যাংকের খারাপ সম্পদের দায় জনগণের ওপর চাপবে
- ৯ দুর্বল ব্যাংককে ২৯ হাজার কোটি টাকা ধার দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক
এই ছয়টি ব্যাংকের মধ্যে পাঁচটি ব্যাংকই আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এস আলম গ্রুপের কর্ণধার আলোচিত ব্যবসায়ী মোহাম্মদ সাইফুল আলমের নিয়ন্ত্রণে ছিল। বাকি একটি ব্যাংক নজরুল ইসলাম মজুমদারের নিয়ন্ত্রণে ছিল।
গভর্নর আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, আসছে জুলাইয়ের মধ্যে এসব ব্যাংকগুলোকে সরকারি মালিকানায় নিয়ে প্রয়োজনীয় পুঁজি যোগান দেয়া হবে। এরপর ভিত্তি শক্ত হওয়ার পর বিদেশি বিনিয়োগকারী খোঁজা হবে।
গভর্নর বলেন, ‘সরকার তো টেমপোরারি এগুলোকে নিয়ে নেবে। একই সঙ্গে এখানে ক্যাপিটাল ইনজেকশন করবে। বাংলাদেশ ব্যাংক অলরেডি তাদের লিক্যুইডিটি (তারল্য) সাপোর্ট দিয়েই রেখেছে। তারপরে আমরা এই শেয়ারগুলোকে পাবলিকের কাছে না, আমরা ইন্টারন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক ইনভেস্টরের কাছে হস্তান্তর করব রিঅর্গানাইজেশন হওয়ার পরে। রিঅর্গানাইজেশনের সময়টা আমরা অনারশিপটা রাখবো।’
- আরও পড়ুন
- ঋণ পরিশোধে আরও ৩ মাস সময় পাচ্ছে দুর্বল ব্যাংক
- একীভূত হলে ক্ষতি নয় বরং দুর্বল ব্যাংক শক্তিশালী হবে: বিএবি
- দুর্বল তিন ব্যাংক পেলো আরও ২৬৫ কোটি টাকা
‘ক্যাপিটাল অ্যাডিকুয়েসি এখন যেটা নেগেটিভ আছে যেসব ব্যাংকে, সেটাকে আমরা ১২ দশমিক ৫ থেকে ১৫ শতাংশে নিয়ে যাবো, আমাদের টার্গেট হচ্ছে চার বছরের মধ্যে’, বলেন আহসান এইচ মনসুর।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, একটি ব্যাংকের জন্য তার রিস্ক-ওয়েটেড অ্যাসেটের বিপরীতে কমপক্ষে ১০ শতাংশ মূলধন সংরক্ষণ করা বাধ্যতামূলক। এছাড়াও ক্যাপিটাল কনজারভেশন বাফার হিসেবে অতিরিক্ত ২.৫ শতাংশ মূলধন রাখতে হয়। ফলে, মোট মূলধন সংরক্ষণের হার দাঁড়ায় ১২.৫ শতাংশ।
ব্যাংক খাতে দুরাস্থার পেছনে যাদের দায় রয়েছে, সেই বিশেষ ১০ গোষ্ঠীর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ চলছে সমান তালে। আর্থিক অপরাধ সংক্রান্ত তদন্তে চলছে তিন সংস্থার কার্যক্রম। পাচারের অর্থ ফেরাতেও যোগাযোগ চলছে বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে, যার মাধ্যমে অল্প সময়ে দৃশ্যমান ফল আশা করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘এই জাজমেন্টটা এখনো করা হয়নি। অ্যাভিডেন্স গ্যাদারিং এখনো চলছে। আমি মনে করি এখানে আমাদের একটু দ্রুততা প্রয়োজন আছে অবশ্যই। সাথে যেটা হচ্ছে আমরা কিছু রেজাল্ট তো পাচ্ছি। যারা টাকা নিয়ে গেছে তাদেরও ঘুম হারাম করতে হবে। তারাও যেন শান্তিতে না থাকে। আমরাও আমাদের ঘুম হারাম করছি তাদের টাকা, আমাদের টাকা ফিরিয়ে আনার জন্য। তাদের কি ঘুম হারাম করবো না? অবশ্যই করতে হবে।’
এমএমএআর/জিকেএস