বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক (ডিজি) লেখক ও অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আজম বলেছেন, একুশের চেতনা আমাদের মধ্যে বহমান। একুশ অতীত নয়, এটি প্রকৃতপক্ষেই বর্তমান। একুশে ফেব্রুয়ারি দেশের মানুষকে ভালোবাসায় সিক্ত করে।
শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) অমর একুশে বইমেলার ২১তম দিনে মেলার মূলমঞ্চে ‘অমর একুশে বক্তৃতা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, একুশ অতীত নয়, প্রকৃতপক্ষেই বর্তমান। বাংলাদেশের ইতিহাসে ৫২-র একুশে ফেব্রুয়ারি একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের অভ্যুদয়, এর পরবর্তী ন্যায্যতা ও পূর্ববর্তী প্রেক্ষাপট-এ তিন ক্ষেত্রেই সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছিল। তাই সংগত কারণেই একুশে ফেব্রুয়ারি দেশের মানুষকে ভালোবাসায় সিক্ত করে।
বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় স্বরচিত কবিতা পাঠের আসর। স্বরচিত কবিতাপাঠে প্রায় দেড় শতাধিক কবি কবিতা পাঠ করেন। সভাপতিত্ব করেন কবি হাসান হাফিজ। বিকেলে বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় অমর একুশে বক্তৃতা ২০২৫।
‘ভাষার লড়াই, গণঅভ্যুত্থান ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশের স্বপ্ন’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক।
আনু মুহাম্মদ বলেন, ১৯৪৮ সালে শুরু হয়ে মাতৃভাষার অধিকার এবং পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলাভাষা প্রতিষ্ঠার ধারাবাহিক আন্দোলন ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি শীর্ষবিন্দুতে পৌঁছেছিল। ভাষা আন্দোলনের প্রেরণাই ছিল পরবর্তী ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, নব্বইয়ের স্বৈরশাসন বিরোধী আন্দোলন এবং চব্বিশের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের শক্তি।
ন্যায়সংগত, বৈষম্যমুক্ত সমাজের আকাঙ্ক্ষা নিয়েই আমরা মুক্তিযুদ্ধের আগে ও পরে নিরন্তর সংগ্রাম করেছি। এ পরিপ্রেক্ষিতে ন্যায়ভিত্তিক বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আমরা আজ প্রথমেই প্রশ্ন তুলতে পারি মাতৃভাষার অধিকার এবং নির্দিষ্টভাবে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলার অবস্থান নিয়ে। কিন্তু বৈষম্যহীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে হলে বৈষম্যের উৎস নির্মূল করতে হবে। সত্যিকারভাবে বৈষম্যহীন বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে অগ্রসর হতে গেলে পরিবর্তনের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও দার্শনিক অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, ইতিহাস কেবল অতীতের বিষয়ই নয়। এটি পরিবর্তনের রহস্য উদঘাটনের বিদ্যা। জাতীয় সংকট কাটিয়ে উঠতে হলে আমাদের এ অঞ্চলের রাজনৈতিক ও জাতীয় সংগ্রামের ইতিহাস সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত হতে হবে। এর মাধ্যমেই আমরা একটি উন্নত ভবিষ্যৎ নির্মাণের জন্য অগ্রসর হতে পারবো।
লেখক বলছি মঞ্চে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন- কবি মোহন রায়হান এবং কবি আবিদ আজম। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করেন কবি রুম্মানা জান্নাত, কবি নিলয় রফিক ও কবি কাজিম রেজা। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী শাহিন পারভীন, অধরা সরকার রিয়া, এ কে এম সাইদ হোসেন, তাহরিমা বতুল রিভা, লায়েকা বশীর, বিটু কুমার শীল, শেখ জেরিন শবনম, সৈয়দা সনজিদা জোহরা বীথিকা, শ্রাবণী পাইক, আরিফা নিশাত, বিভাস রঞ্জন মৈত্র, প্রেমা দাস। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন শিমুল বড়ুয়া (তবলা), রাজিব আহমেদ (কী-বোর্ড), মো. মেজবাহ উদ্দিন (অক্টোপ্যাড), সাইদ হাসান ফারুকী (লিড গিটার) এবং পল্লব দাস (বেইজ গিটার)।
এমএইচএ/এমএএইচ/এএসএম