হবিগঞ্জের মাধবপুরে কালভার্ট বন্ধে লোহার নির্মিত গেটের পর বাঁশ দিয়ে সেই কালভার্টের গেট আবারও বন্ধের অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী গ্রামবাসীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসন সরেজমিন এসে লোহার নির্মিত গেটটি খুলে দিয়ে জনগণের চলাচল স্বাভাবিক করেছিল। কিন্তু প্রশাসনের সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ৪ দিনের মাথায় আবারও বাঁশ দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে ওই কালভার্টের এক অংশ। এতে গ্রামের জনগণের চলাচলের পথ বন্ধ হয়ে গেছে।
অভিযুক্ত রিনা আক্তার উপজেলার আন্দিউরা গ্রামের মধ্যপাড়ার প্রবাসী আবু মিয়ার স্ত্রী।
সরেজমিনে ঘটনাস্থল উপজেলার আন্দিঊড়া ইউনিয়নের আন্দিঊড়া গ্রামের মধ্যপাড়ায় দেখা যায়, পাকা ব্রিজের প্রবেশ মুখে ৩টি বাঁশ বেঁধে রাখা হয়েছে। যাতে কোনো মানুষ কিংবা রিকশা ভ্যান যেতে না পারে। সপ্তম শ্রেণি পড়ুয়া স্কুল শিক্ষার্থী সাফি বলেন, ‘এই কালভার্টটি বন্ধ করে দেওয়ায় আমিসহ ওই পাড়ার স্কুলগামী ছেলেমেয়েরা স্কুলে যেতে পারছে না। পড়ালেখা ব্যাহত হচ্ছে।’
ওই গ্রামের পঞ্চাশোর্ধ সাবেক মেম্বার আব্দুল কাইয়ূম, হাবিবুর রহমান, খাদেক মিয়াসহ শতাধিক গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকারি অর্থায়নে নির্মিত কালভার্ট এভাবে বন্ধ রাখায় গ্রামবাসী এর সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। প্রশাসন কালভার্টটি রিনা বেগম ও তার লোকদের কবল থেকে উদ্ধার না করলে সরকারি স্থাপনা দখল অভ্যাসে পরিণত হবে। নিজ নিজ বাড়ির পাশে জনস্বার্থে নির্মিত ব্রিজ, কালভার্ট দখলের মহোৎসব শুরু হবে।
ইউনিয়ন পরিষদের কাগজপত্র পর্যালোচনা করে জানা গেছে, গত ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে এলজিএসপির প্রকল্পে ইউনিয়ন পরিষদের অর্থায়নে ২ লাখ টাকায় আন্দিউড়া চকাবাজারের দক্ষিণ দিকে আবু মিয়ার বাড়ি সংলগ্ন আরসিসি কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছিল। কালভার্টে চলাচলের বাধা প্রদানের লক্ষ্যে ওই গ্রামের প্রবাসী আবু মিয়ার স্ত্রী রিনা বেগমের অবৈধ গেটটি অপসারণ করে দেওয়ার জন্য গত বছরের ২ এপ্রিল ভুক্তভোগী গ্রামবাসীদের পক্ষে সোহেল মিয়া আবেদন করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে লিখিত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিত সহকারী কমিশনারের কার্যালয় হতে সরেজমিন তদন্ত করে রিনা বেগম কর্তৃক অবৈধ বাধা দানের বিষয়টি প্রমাণিত হয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে একাধিকবার বলার পর গত ৮ জানুয়ারি লোহার গেট খুলে নেওয়া হয়। লোহার গেট খোলার ৪ দিন পর অর্থাৎ ১১ জানুয়ারি পুনরায় বাঁশ দিয়ে ওই কালভার্টের একপাশ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সরকারি অর্থায়নের বিষয়টি অস্বীকার করে রীনা বেগম দাবি করেন, কালভার্টটি তার নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণ করেছেন। কালভার্ট নির্মাণের সময়ে প্রতিবেশী কেউ আর্থিক সহযোগিতা করেনি।
অভিযুক্ত রিনা আক্তার কালবেলাকে জানান, আমার নিজস্ব অর্থায়নে কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। এলাকাবাসী লিখিত দিয়েছে তারা এটি ব্যবহারের কোনো দাবি তুলতে পারবে না। এখন কেউ কেউ আমার নামে অপপ্রচার করছে। এ নিয়ে আমি হবিগঞ্জে সংবাদ সম্মেলনও করেছি।
এ ব্যাপারে মাধবপুরের ইউএনও মো. জাহেদ বিন কাশেম কালবেলাকে জানান, আমরা একবার পথটি খুলে দিয়ে এসেছি। যদি আবারও একই কাজ করা হয় আমরা খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেব।
মাধবপুর থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন কালবেলাকে জানান, বিষয়টি ইউএনও স্যারের এখতিয়ারাধীন। তবে আদালত থেকে কোনো নির্দেশনা আসলে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি।