এবার যুক্তরাজ্য থেকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীদের 

2 hours ago 4
যুক্তরাষ্ট্রের পর এবার যুক্তরাজ্য সরকার ফেরত পাঠাচ্ছে অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীদের। ইতোমধ্যে দেশটি ১৫ জন বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে কালবেলাকে নিশ্চিত করেছে ইমিগ্রেশনসহ সংশ্লিষ্ট মিশন সূত্র। যেসব বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে অভিবাসন আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে তাদের ফেরত পাঠানোর হচ্ছে।  শুক্রবার (২৯ আগস্ট) দুপুরে এই ব্যক্তিদের বহনকারী বিশেষ চার্টার ফ্লাইট HFM851 লন্ডনের স্ট্যানস্টেড বিমানবন্দর থেকে ইসলামাবাদ হয়ে ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে।  মিশনের একটি সূত্র কালবেলাকে জানায়, বাংলাদেশ হাইকমিশন, লন্ডনের কনসুলার শাখা এসব অবৈধ অভিবাসীর দেশে ফেরত পাঠানোর উদ্দেশ্যে ট্রাভেল পারমিট ইস্যু করেছিল। যারা দেশে ফিরে আসছে, তাদের তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে কেউ বৈধ পাসপোর্টধারী, কেউ মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্টধারী।  বাংলাদেশ মিশন লন্ডনের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক অতীব জরুরি চিঠিতে জানানো হয়, যুক্তরাজ্য থেকে যে ১৫ জন ফেরত আসছেন তাদের মধ্যে ৬ জনের পাসপোর্ট (বৈধ ই-পাসপোর্ট এবং মেয়াদোত্তীর্ণ এমআরপি) রয়েছে বিধায় কোনো প্রকার সাক্ষাৎকার গ্রহণের প্রয়োজন হয়নি। ওই ৬ জনের মধ্যে ৩ জনের বৈধ পাসপোর্ট রয়েছে বিধায় তাদের বাংলাদেশে ফেরত আসতে ট্রাভেল পারমিটের প্রয়োজন নেই এবং বাকি ৩ জনের বৈধ পাসপোর্ট না থাকায় তাদের অনুকূলে স্বাক্ষরিত এসওপি অনুযায়ী ট্রাভেল পারমিট প্রদান করা হয়েছে। অবশিষ্ট ৯ জনের পাসপোর্ট না থাকায় তাদের বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ হাইকমিশনের কর্মকর্তার মাধ্যমে ইন্টারভিউ গ্রহণ করে জাতীয়তা/পরিচয় নিশ্চিত করা হয় এবং এই ৯ জনকে ট্রাভেল পারমিট প্রদান করা হয়েছে।  সেই চিঠিতে আরও জানানো হয়, বিশেষ ফ্লাইটটি বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) লন্ডনের স্থানীয় সময় রাত ৯টায় লন্ডনের স্টানস্টেড থেকে পাকিস্তানের ইসলামাবাদের উদ্দেশে রওনা দেবে এবং পরে ইসলামাবাদ থেকে শুক্রবার দুপুর ২টা ১০টায় ঢাকায় পৌঁছাবে।  আরেকটি নির্ভরযোগ্য সূত্র কালবেলাকে জানায়, বুধবার ২৭ আগস্ট পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কনস্যুলার অনুবিভাগের পক্ষ থেকে পাঠানো এক চিঠিতে দেশের সুরক্ষা সেবা বিভাগ ও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়। যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকে অবৈধ অভিবাসীরা ফেরত আসছেন এবং এ বিষয়ে বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে।  সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, একটি বিশেষ চার্টার্ড ফ্লাইটে ১৫ জন অবৈধ বাংলাদেশিকে যুক্তরাজ্য হতে বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তনের জন্য দেশটির হোম অফিস উদ্যোগ নেয়। পরে যুক্তরাজ্য হোম অফিস লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনে উল্লেখিত অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীদের অনুকূলে ট্রাভেল পারমিট ইস্যুর জন্য আবেদন করে। তাদের আবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশ হাইকমিশন যাদের প্রয়োজন, তাদের ট্রাভেল পারমিট প্রদান করে। ফেরত আসার তালিকার মধ্যে রয়েছেন, সুনামগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার, লাকসাম, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী ও ঢাকার বাসিন্দা। তাদের মধ্যে নারীও রয়েছেন।  দেশে আসা লোকদের জন্য ইস্যু করা ট্রাভেল পারমিটগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায়, তাদের মধ্যে ৬ জনের কোনো পেশা উল্লেখ নেই। অর্থাৎ দেশটিতে তারা নির্দিষ্ট কোনো কাজে নিয়োজিত নেই। এ ছাড়া কয়েকজন সে দেশে ওয়েটারসহ নানা কাজে নিয়োজিত ছিলেন এবং শিক্ষার্থীও এ তালিকায় রয়েছেন। যুক্তরাজ্য কর্তৃপক্ষ অভিবাসন আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করছে এবং বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে এই ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করছে।  জানতে চাইলে এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা কালবেলাকে জানান, অনেকেই দেশটিতে ভিসা মেয়াদ শেষেও অবস্থান করে, আর তাদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চলমান। এর মাধ্যমে তাদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে। যারা ফেরত আসছেন, তাদের মধ্যে অনেকের বৈধ পাসপোর্ট থাকা সত্ত্বেও তারা মেয়াদহীন ভিসা নিয়ে দেশটিতে অবস্থান করছিলেন।  বর্তমান অভিবাসন বাস্তবতায় নাজুক বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বজুড়ে অভিবাসন নীতির কঠোরতা এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা অভিবাসীদের জন্য নতুন বাস্তবতা তৈরি করেছে বলছেন কুটনৈতিকরা। তাদের মতে, এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে আগামী মাসগুলোতে আরও বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হতে পারে। তবে সরকারের পক্ষ এ বিষয়টি সুষ্ঠুভাবে সমাধান করা উচিত।  দেশে গত বছরের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের অভিবাসীদের জন্য ভিসা ইস্যু কমিয়েছে। দুবাইসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর পাশাপাশি ইউরোপের দেশগুলোতেও ভিসা প্রাপ্তির হার কমেছে এবং  উন্নত দেশগুলোও তাদের অভিবাস নীতি ক্রমেই কঠোর করছে এমন প্রেক্ষাপটে যুক্তরাজ্য ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব এবং মালয়েশিয়া থেকে বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানোর ঘটনা ঘটেছে। ইতোমধ্যে অভিবাসীদের নিয়ে নানা আন্দোলন চলছে যুক্তরাজ্যে। অবৈধ অভিবাসীদের বিতাড়িত করতে তৎপর দেশটির সরকার। এ অবস্থায় নথিপত্রবিহীন অনেক অভিবাসীকে বাধ্য হয়ে দেশ ছাড়তে হয়েছে। অনেকে আবার শরণার্থীর আবেদন করেছেন ব্রিটিশ সরকারের কাছে। পরিসংখ্যান অনুসারে, চলতি বছর যুক্তরাজ্যে রেকর্ডসংখ্যক অভিবাসন প্রত্যাশীর আবেদনপত্র জমা পড়েছে।  বিষয়টিকে ভালো চোখে দেখছেন না অভিবাসী বিরোধীরা। তারা বলছেন, অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের চেয়ে অভিবাসী সংকট এখন যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে বড় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। এ ছাড়া ট্রাম্প ক্ষমতায় এলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে অবৈধভাবে অবস্থানরত দুইশোরও বেশি বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানো হয়।  এমন সংকট নিয়ে জানতে চাইলে সরকারের এক কর্মকর্তা কালবেলাকে জানান, বাংলাদেশিদের অনেকেই ভুল তথ্য দেওয়ায় অভিবাসন নীতি তাদের কাছে কঠোর হয়ে যায়। অনেকেই অবৈধ উপায়ে বিদেশ যান। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে বিদেশের মাটিতে অবৈধ উপায়ে পা দিলে ফেরত আসার সম্ভাবনা থাকবেই। এসব জেনেও অনেকেই যান। এটা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে। তবে ব্যক্তি পর্যায়ের সচেতনতা দরকার।  বিশ্বে বর্তমান অভিবাসন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশিদের জন্য ভিসাপ্রাপ্তি কমছে কেন জানতে চাইলে এ নিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘অভিবাসন পরিস্থিতি নাজুক দেশের অভিবাসন প্রত্যাশীদের জন্যই। তারা সঠিক কাগজপত্র ছাড়া মিথ্যা তথ্যের মাধ্যমে ভিসা আবেদন করে। এ ছাড়া বিদেশের মাটিতে কেউ কেউ উচ্ছৃঙ্খল ও অন্যায় কাজও করে, যা দেশের অভিবাসন খাতকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।’
Read Entire Article