এশিয়া মহাদেশের ক্রিকেট শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই আবারও শুরু হতে যাচ্ছে আজ থেকে। বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৮টায় আবুধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে আফগানিস্তান-হংকংয়ের মধ্যকার ম্যাচ দিয়ে পর্দা উঠছে এশিয়া কাপ ক্রিকেটের ১৭তম আসরের।
বিশ্বকাপকে সামনে রেখে এশিয়া কাপের ফরম্যাট পরিবর্তন হয়। সামনে যে ফরম্যাটের বিশ্বকাপ থাকে, সেই ফরম্যাটে অনুষ্ঠিত হয় এশিয়া কাপ ক্রিকেট। আগামী বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে। এ কারণে, এবারের এশিয়া কাপও অনুষ্ঠিত হচ্ছে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে।
এবারের এশিয়া কাপকে ঘিরে ক্রিকেট বিশ্বে এরইমধ্যে তৈরি হয়েছে দারুণ উত্তেজনা। আয়োজক হিসেবে সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রস্তুত করেছে আধুনিক ভেন্যু, আর মাঠে নামতে যাচ্ছে এশিয়ার শক্তিশালী আটটি দল – ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান, আরব আমিরাত, ওমান এবং হংকং।
টুর্নামেন্টের ফরম্যাট
এবারও টুর্নামেন্টটি হবে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে। দলগুলো দুটি গ্রুপে ভাগ হয়ে খেলবে। প্রতিটি গ্রুপ থেকে সেরা দুই দল উঠবে সুপার ফোরে, সেখান থেকে নির্ধারিত হবে ফাইনালের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী। ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে দুবাই ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে, যেখানে ইতিমধ্যেই অনেক স্মরণীয় ম্যাচ, এমনকি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালও অনুষ্ঠিত হয়েছে।
কোন দল কতটা শক্তিশালী?
ভারত: বিশ্বকাপের অভিজ্ঞতায় ভরপুর দল। সূর্যকুমার যাদবের নেতৃত্বে টি-টোয়েন্টিতে বলা যায় অপ্রতিরোধ্য একটি দল ভারত। শুভমান গিল, সাঞ্জু স্যামসন, জিতেশ শর্মা, রিঙ্কু সিং, অভিষেক শর্মাদের মত ব্যাটার, হার্দিক পান্ডিয়া, শিবাম দুবে, অক্ষর প্যাটেলদের মতো অলরাউন্ডারদের পাশাপাশি জসপ্রিত বুমরাহর নেতৃত্বে শক্তিশালী বোলিং আক্রমণ।
পাকিস্তান: ফাখর জামান ও সাহিবজাদা ফারহানের মত বিধ্বংসি ওপেনিং জুটি যে কোনো দলের জন্য আতঙ্ক। এছাড়া সাইম আইয়ুব, হাসান নওয়াজ কিংবা মোহাম্মদ হারিস, সালমান আগাদের বিধ্বংসী ব্যাটিংও দলটির শক্তি। সঙ্গে শাহীন আফ্রিদি ও হাসান আলি, হারিস রউফদের বোলিং লাইনআপ তাদের বড় অস্ত্র।
শ্রীলঙ্কা: তরুণ ও অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের দারুণ সমন্বয়ে গড়া দল। চারিথ আশালঙ্কার নেতৃত্বে দলটি বেশ স্থিতিশীল অবস্থাংয় রয়েছে।কুশল মেন্ডিস, পাথুম নিশাঙ্কারা তাদের বড় ব্যাটিং অস্ত্র। আশালঙ্গা, হাসারাঙ্গা, কামিন্দু মেন্ডিসরা বিশ্বব্যাপি টি-টোয়েন্টিতে জনপ্রিয় নাম। স্পিন বোলিং আক্রমণ হতে পারে তাদের প্রধান ভরসা।
বাংলাদেশ: লিটন দাস, মোস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদদের অভিজ্ঞতা, সঙ্গে তরুণদের দাপট – টাইগাররা এবারের টুর্নামেন্টে চমক দেখানোর প্রত্যাশায়। সাম্প্রতিক সময়ে টেস্ট ও ওয়ানডের তুলনায় বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টিতে বেশ ভালো করছে। ব্যাটাররা এখন বড় বড় ছক্কা হাঁকাতে পারে, বড় ইনিংস খেলতে পারে। বোলাররা প্রতিপক্ষকে চেপে ধরতে পারে। সুতরাং, এবার এশিয়া কাপে ভালো কিছু করবে বাংলাদেশ, এ প্রত্যাশা সবার।
আফগানিস্তান: রশিদ খানের নেতৃত্বে আফগানিস্তান এবারের এশিয়া কাপে চমক দেখানোর অপেক্ষায়। মোহাম্মদ নবি, ইবরাহিম জাদরান, রহমানুল্লাহ গুরবাজ, আজমতউল্লাহ ওমরজাই, গুলবাদিন নাইব, করিম জানাতের মতো তারকা খেলোয়াড় এবং মুজিব-উর রহমান ও নুর আহমদদের ভয়ঙ্কর স্পিন আক্রমণ তাদের যে কোনো ম্যাচে ফেভারিট করে তোলে।
হংকং: অভিজ্ঞতা কম হলেও অংশি রাঠ, জিশান আলি, বাবর হায়াতের মতো ব্যাটাররা ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়ার সামর্থ্য রাখেন। ইয়াসিন মোরতাজা ও আইজাজ খানরাও প্রভাব বিস্তার করতে পারেন। মোহাম্মদ গজনফার, আতিক ইকবাল, এহসান খান ও আয়ুস শুকলার মত বোলাররাও প্রতিপক্ষের ব্যাটারদের সামনে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
ওমান: এবারের এশিয়া কাপে আন্ডারডগ হতে পারে ওমান। শক্তি-সামর্থ্যের তুলনায় হয়তো অন্যদের চেয়ে খুব বেশি এগিয়ে নেই। তবে, টি-টোয়েন্টিতে যে কোনো কিছু হতে পারে। ভালো একটি দিনে বড় দলকেও হারিয়ে দিতে পারে ওমান। জিতেন্দর সিংয়ের নেতৃত্বে দলটি বেশ আত্মবিশ্বাসী।
আরব আমিরাত: স্বাগতিক আরব আমিরাত টি-টোয়েন্টিতে বেশ প্রতিশ্রুতিশীল একটি দল। মোহাম্মদ ওয়াসিম এবং আসিফ খানের মত দু’জন মারকুটে ব্যাটার রয়েছে দলটিতে। এছাড়া আলিশান শরাফু, রাহুল চোপড়ার মত ব্যাটাররাও যে কোনো সময় দাঁড়িয়ে যেতে পারেন। হায়দার আলি, জোনায়েদ সিদ্দিকীদের মত বোলাররাও আরব আমিরাতকে জয় এনে দিতে পারেন।
যে বিষয়গুলো আলোচনায়
- ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথ সবসময়ই এশিয়া কাপে বাড়তি মাত্রা যোগ করে।
- বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের মধ্যকার প্রতিদ্বন্দ্বিতা গত কয়েক আসরে রোমাঞ্চকর লড়াই উপহার দিয়েছে।
- স্পিন বান্ধব আবুধাবি ও দুবাইয়ের উইকেট নিয়ে দলগুলো আলাদা কৌশল গ্রহণ করতে পারে।
পরিসংখ্যানের আঙিকে
- ভারত সবচেয়ে বেশিবার এশিয়া কাপ জিতেছে (৭ বার)।
- শ্রীলঙ্কা খেলেছে সবচেয়ে বেশি ফাইনাল।
- আফগানিস্তান এখনো শিরোপা জিততে না পারলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ধারাবাহিকভাবে শক্ত প্রতিপক্ষ হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করেছে।
- আরব আমিরাত ও আফগানিস্তানকে নিয়ে আয়োজিত ত্রিদেশীয় সিরিজ জিতে পাকিস্তানও ফেবারিট হিসেবে টুর্নামেন্ট শুরু করতে যাচ্ছে।
- সাম্প্রতিক সময়ে টি-টোয়েন্টিতে বেশ ভালো করছে বাংলাদেশ। পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে টানা তিনটি সিরিজ জয় করেছে টাইগাররা।
সব মিলিয়ে, এশিয়া কাপ ২০২৫ হতে যাচ্ছে ব্যাট-বল যুদ্ধের এক রোমাঞ্চকর আসর। এবারের টুর্নামেন্ট থেকে কি আমরা নতুন কোনো চ্যাম্পিয়ন দেখব? নাকি ভারত-পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কার আধিপত্যই অব্যাহত থাকবে— তা জানতে হলে অপেক্ষা করতে হবে আসরের শেষ পর্যন্ত।
আইএইচএস/