আলোচিত এস আলম গ্রুপকে বিভিন্ন উপায়ে বিনিয়োগ সুবিধা প্রদানের অভিযোগে চট্টগ্রামের ২৪টি শাখার ম্যানেজারসহ মোট ১৯৪ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করেছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক।
ব্যাংকের চট্টগ্রাম অঞ্চলের সকল শাখায় বিশেষ পরিদর্শন শেষে অডিট রিপোর্টের ভিত্তিতে এ প্রত্যাহার আদেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
একই সঙ্গে প্রত্যাহার করা এসব ম্যানেজারকে আগামী ২১ দিনের মধ্যে তাদের দায় পরিশোধের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সূত্রে জানা গেছে, ২১ দিন পর এদের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে।
প্রত্যাহার করা ১৯৪ কর্মকর্তার মধ্যে রয়েছেন- আগ্রাবাদ শাখার ম্যানেজার মোশাররফ হোসেন চৌধুরী, আন্দেরকিল্লা শাখার ম্যানেজার মোর্শেদুল আলম, খাতুনগঞ্জ শাখার ম্যানেজার মো. মোস্তফা, জুবলি রোড শাখার ম্যানেজার মো. আনোয়ারুল আলম, বন্দরটিলা শাখার ম্যানেজার মো. সাইফুদ্দিন, চকবাজার শাখার ম্যানেজার আবু হাসান মোস্তফা কামাল, কদমতলী শাখার ম্যানেজার এস এম কফিল উদ্দীন, পাচলাইশ শাখার ম্যানেজার মো. মাহাবুল আলম, প্রবর্তক মোড় শাখার ম্যানেজার মোহাম্মদ উল্লাহ, কুমিড়া শাখার ম্যানেজার মো. ফজলুল হক, পাহাড়তলী শাখার ম্যানেজার সুলতানা নাজনীন চৌধুরী, সদরঘাট শাখার ম্যানেজার আবু ইউসুফ মো. হেলাল উদ্দীন, বহদ্দারহাট শাখার ম্যানেজার মো. উসমান, পটিয়া শাখার ম্যানেজার মো. বশির উল্ল্যাহ, পটিয়া মহিলা শাখার ম্যানেজার ফারাহ দিবা বানু, দোভাষী বাজার শাখার ম্যানেজার নাসির উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, ফতেয়াবাদ শাখার ম্যানেজার মো. কামাল হোসেন, হালিশহর শাখার ম্যানেজার এস এম মোনসেফ আহমেদ, হাটহাজারী শাখার ম্যানেজার মো. আব্দুল মাবুদ, রাহাত্তারপুল শাখার ম্যানেজার মো. হারুনার রশিদ, চন্দনাইশ শাখার ম্যানেজার মো. মোর্শেদুল আলম চৌধুরী, মোহড়া শাখার ম্যানেজার আরাফত উল্লাহ এবং বোয়ালখালী শাখার ম্যানেজার সেলিম উদ্দীন প্রমুখ।
জানা গেছে, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিভিন্ন শাখা থেকে এ সকল কর্মকর্তারা বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে বিনিয়োগ দেয়ার পাশাপাশি নিজেরা ও আত্মীয় স্বজনকে দিয়ে এস আলম থেকে নানান ধরণের সুবিধা নিয়েছে। এছাড়া ডকুমেন্টেশন জালিয়াতিসহ নিয়োগ বাণিজ্য ও অর্থ পাচারের সঙ্গে তারা জড়িত।
এর আগে চট্টগ্রাম নর্থ জোনাল হেড মো. হাফিজুর রহমানকে প্রত্যাহার করা হলে তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন। এরপর তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে দ্রুত দায় থেকে মুক্তি দিতে তিনি নাকি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহকে দিয়ে দফায় দফায় তদবির করান।
এছাড়াও ব্যাংকের এডিশনাল ম্যানেজিং ডিরেক্টর মোস্তফা খায়ের তার অপকর্মের দায়ের কথা স্বীকার করে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন। ব্যাংকের অডিট ডিভিশনের হেড রফিকুল আলমও তার দায় এড়াতে স্বেচ্ছায় পদত্যাগপত্র জমা দেন।
এস আলমের ঋণ জালিয়াতির অন্যতম সহযোগী সাইফুল আলম মাসুদের পিএস আকিজ উদ্দিনের ভাই তার অপকর্মের দায় স্বীকার করে ব্যাংকের খুলশী শাখার ম্যানেজার খুরশিদ আলম পদত্যাগ করেন।
সূত্র জানিয়েছে, এসব ঘটনার পর এস আলমের ঘনিষ্টদের অনেকেই পদত্যাগের প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং কেউ কেউ বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করে দেশত্যাগের চেষ্টা করছে।
এ বিষয়ে কথা বলতে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলী ও অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু রেজাকে কালবেলার পক্ষ থেকে ফোন করা হলেও দুজনের কেউ ফোন ধরেনি। তবে মিটিং সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা এই ২১৪ জন কর্মকর্তার প্রত্যাহারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।