এসএসসি-এইচএসসি পাস ৬৬ হাজার শিক্ষক এখনো প্রাথমিকে

1 hour ago 5

দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এসএসসি ও এইচএসসি পাস ৬৫ হাজার শিক্ষক এখনও কর্মরত। শুধুমাত্র কিছু মৌলিক কোর্স ছাড়া তারা উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেননি। আধুনকি ও যুগোপযোগী সিলেবাসে পাঠদান করাতে চরম বিড়ম্বনা পোহাচ্ছেন তারা। এরপর শতভাগ স্নাতক ডিগ্রিধারী শিক্ষক পাবে প্রাথমিক শিক্ষার্থীরা।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বলছে, ১৯৯১ সালের বিধিমালায় নারী প্রার্থীরা এসএসসি পাস ও পুরুষরা এইচএসসি পাস হলেই প্রাথমিকে শিক্ষক হতে পারতেন। সেসময়ে যারা নিয়োগ পেয়েছেন, তাদের নিয়েই এখন বড় বিপত্তি। এসএসসি ও এইচএসসি পাস শিক্ষকদের স্বাভাবিক নিয়মে অবসরে যেতে লাগবে আরও প্রায় ১০ বছর। এরপর শতভাগ স্নাতক ডিগ্রিধারী শিক্ষক পাবে প্রাথমিক শিক্ষার্থীরা।

অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী—দেশে বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৬৫ হাজার ৫৬৯টি। এতে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত তিন লাখ ৮৪ হাজার ৯৮১ জন। তাদের মধ্যে শুধু এসএসসি পাস (নারী) ১১ হাজার ৭৩৬ জন। আর এইচএসসি পাস (পুরুষ) ৫৩ হাজার ১৪৪ জন।

একই সময়ে মাদরাসা থেকে দাখিল ও আলিম পাস করে শিক্ষক হয়েছেন এক হাজার ৪১৭ জন। এছাড়া এইচএসসির সমমান বিবেচিত ম্যাটস ডিগ্রিধারী ৩৮ জন এবং নার্স কোর্স করা ১৬ জন শিক্ষক রয়েছেন। সবমিলিয়ে এসএসসি, এইচএসসি, দাখিল ও আলিমসহ সমমান ডিগ্রিধারী শিক্ষকের সংখ্যা ৬৬ হাজার ২৯৭ জন।

আরও পড়ুন
তৃতীয় দিনের মতো শহীদ মিনারে প্রাথমিক শিক্ষকদের অবস্থান
ক্ষমতা বাড়ছে প্রধান শিক্ষকের, স্লিপ ফান্ডে বরাদ্দ বেড়ে ৩ লাখ

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বাকি তিন লাখ ১৮ হাজার ৬৮৪ জন শিক্ষক কমপক্ষে স্নাতক ডিগ্রিধারী। তাদের মধ্যে এমফিল/পিএইচডি ডিগ্রি রয়েছে ৩৬ জনের। শুধু স্নাতক ডিগ্রিধারী শিক্ষকের সংখ্যা ২১ হাজার ৪৩৫ জন। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর উভয় ডিগ্রিধারী শিক্ষক রয়েছে এক লাখ ৫৬ হাজার ৫৭৯ জন। আর স্নাতক (পাস কোর্স) এক লাখ ১৪ হাজার ৬২ জন।

এমবিএ ডিগ্রিধারী পাঁচ হাজার ৯২৪ জন, বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং করা এক হাজার ৪৫৮ জন, বিএসসি ইন অ্যাগ্রিকালচার ডিগ্রিধারী ৩০৯ জন। বিএসএস ডিগ্রি নিয়ে প্রাথমিকে শিক্ষক হয়েছেন ১০ হাজার ৮৫ জন, কামিল পাস পাঁচ হাজার ৭২৮ জন, ফাজিল পাস এক হাজার ৯৯৬ জন, এলএলএম ৩৩৫ জন, এলএলবি ৩০৮ জন, বিএড (অনার্স) ২৯৬ জন, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমাধারী ১৩৩ জন।

এসএসসি ও এইচএসসি পাস শিক্ষকদের নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কোনো কর্মকর্তা। তাদের ভাষ্য, ‘ওই সময়ের বিধিমালা মেনে তাদের চাকরি হয়েছে। তাদের অযোগ্যতা বা অদক্ষতা নিয়ে এখন কথা বলাটা বিধিসম্মত নয়। এতে তারা অপমানিত বোধ করতে পারেন। এখন তাদের স্বাভাবিক অবসরের জন্য অপেক্ষা ছাড়া আর কিছুই করার নেই।’

অধিদপ্তর বলছে, সম্প্রতি তিন ধাপে প্রায় ২০ হাজার নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা সবাই স্নাতক-স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী। এছাড়া চলতি নভেম্বর মাসে আরও একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে ১০ হাজার ২১৯টি পদ রয়েছে। এসব পদেও স্নাতক পাস প্রার্থীরাই কেবল আবেদন করতে পারবেন।

দশম গ্রেডের পথে বড় বাধা এসএসসি-এইচএসসি পাস শিক্ষক
এসএসসি ও এইচএসসি পাস শিক্ষকদের চাকরিজীবন শেষের দিকে। চার বছর পর এ সংখ্যা কমে আসেব। আগামী চার বছরে অবসরে যাবেন প্রায় ২২ হাজার শিক্ষক। আর বাকিদের অবসরে যেতে লাগবে আরও ১০ বছরের মতো। তাদের অবসরে যাওয়ার আগে দশম গ্রেডে সহকারী শিক্ষকদের উন্নীত করা সম্ভব নয় বলে জানান প্রাথমিকের পলিসি অ্যান্ড অপারেশন শাখার ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। এটা নিয়ে নাড়াচাড়া করলে প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে বিভ্রান্তিমূলক একটি বার্তা মানুষের কাছে যাবে। যারা যোগ্য, স্নাতক-স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে এখন সহকারী শিক্ষক হয়েছেন বা হচ্ছেন; তাদের জন্য অপমানজনক। তবে বাস্তবতা হলো-এসএসসি-এইচএসসি পাস শিক্ষকরা অবসরে না যাওয়া পর্যন্ত দশম গ্রেডের যে দাবি শিক্ষকরা তুলছেন, তা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।’

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মো. মাসুদ রানা জাগো নিউজকে বলেন, ‘আধুনিক ও বিজ্ঞানমনস্ক জাতি গড়ার ভিত প্রাথমিক বিদ্যালয়। সেখানে শিক্ষার মানটা উন্নত করতে, শক্ত ভিত গড়ে দিতে অবশ্যই উচ্চশিক্ষিত ও স্মার্ট শিক্ষকের প্রয়োজন। আমরা এখন শতভাগ মেধার ভিত্তিতে এবং উচ্চশিক্ষিত তরুণদের নিয়োগ দিচ্ছি। আগের নিয়োগে কারা কীভাবে চাকরি করছেন, তা নিয়ে আলোচনা করার সুযোগ নেই। তরুণদের কীভাবে এ পেশায় ধরে রাখা যায়, তা নিয়েই এখন আমাদের চিন্তা।’

এএএইচ/এমআইএইচএস/জেআইএম

Read Entire Article