অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ঐক্যের ডাক দেয়া সহজ, কিন্তু ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা সহজ নয়। কারণ, বিভক্তিটা করি আমরা নিজের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য। ব্যক্তি পর্যায়ে আমরা চার ভাই-বোন থাকলে সম্পত্তি নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়াই। ধনী-দরিদ্র প্রশ্নে আমরা সামাজিক পর্যায়ে দ্বন্দ্বে যাই। আমরা রাষ্ট্রীয় পর্যায়েও দ্বন্দ্বে যাই, আবার বৈশ্বিক পর্যায়েও দ্বন্দ্বে যাই।
বৃহস্পতিবার (০৬ মার্চ) রাতে রাজধানীর রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের ১৯০তম জন্মতিথি এবং স্বামী বিবেকানন্দের বাংলাদেশে আগমনের ১২৫তম বর্ষ উপলক্ষে রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনে গত শনিবার থেকে শুরু হয়েছে সাত দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা। আজ শুক্রবার (০৭ মার্চ) এ আয়োজন সমাপ্ত হবে।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমরা এখন এমন একটা সময়ে দাঁড়িয়ে আছি, যখন আমরা জুলাই-আগস্টে বৈষম্যের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে একটি রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম দেখলাম। এই যে ঐক্যের কথা আমরা বলি, আসলে সমাজে বৈষম্য জিইয়ে রেখে ঐক্যের ডাকটা দিতে পারবেন না। সত্যিকার অর্থে প্রতিটি জায়গা থেকে বৈষম্য সরাতে হবে। তারপরেই আপনি ন্যায় বিচার ও ঐক্যের কথা বলতে পারবেন। আগে আপনি বৈষম্য দূর করবেন, নাকি ঐক্যের কথা বলবেন। আমাদের লক্ষ্যটা আগে ঠিক করে নেওয়া দরকার যে, আমি আগে ঐক্যটাতে যাব। আর ঐক্যে যেতে হলে, ন্যায় বিচারে যেতে হলে, আমাকে কোন কোন জিনিস সরাতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের এখনকার লড়াই-সংগ্রাম-যাত্রাটা হচ্ছে গণতন্ত্রের পথে যাত্রা। আমরা দেশে প্রকৃত গণতন্ত্র দেখতে চাই, সকলের মতামতের প্রতিফলন দেখতে চাই। রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব বলেছেন, যত মত তত পথ। এটাই হচ্ছে গণতন্ত্রের আসল স্পিরিট।
অন্তর্বর্তী সরকারের এই উপদেষ্টা বলেন, সবসময় সমাজ-রাষ্ট্রে ভাল কিছু করতে গেলে নানান প্রতিবন্ধকতা আসে। তবে প্রতিবন্ধকতা কীভাবে মোকাবিলা করতে হয়, জুলাই-আগস্টে ছাত্ররা তা দেখিয়ে দিয়েছে। তারা কোনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়নি। বিভক্তি নয়, তারা ঐক্যের বাংলাদেশ দেখতে চেয়েছিল। সেজন্য ছাত্ররা তখন গুলির সামনে বুক পেতে দিয়েছিল। আমরা এমন দেশ-নেতৃত্ব চাই, যেখানে ব্যক্তিস্বার্থ নয়, বৃহত্তর স্বার্থকে দেখা হবে। এ জন্য আমাদেরকেও মানসিক শক্তিটাকে অনেক বেশি দৃঢ় করতে হবে। ঐক্যের প্রশ্নে আমাদের ছোট ছোট স্বার্থের কাছে আপস করার কোনো সুযোগ নেই। আমরা যদি ব্যক্তিগত স্বার্থটাকে পিছে ফেলে দিয়ে সমাজ-রাষ্ট্রের স্বার্থে কাজ করি, তাহলে খুব বেশি ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমরা এইসব মহামানবদের জীবন-আদর্শ থেকে প্রাপ্ত শিক্ষাকে অবলম্বন করে এই বন্ধুর পথও তখন অতিক্রম করে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব।
ঢাকার রামকৃষ্ণ মঠের অধ্যক্ষ স্বামী পূর্ণাত্মানন্দের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. জামিলা আহমেদ চৌধুরী, ঢাবির ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সোনম সাহা প্রমুখ।