‘ও বাবা মোর বাপক আনি দেও। মোর একটায় ব্যাটা বাবা। হামার কেউ নাই। আমি একবার আব্বা কইলে আমার কলিজা ঠান্ডা হয়। এখন আমি এই কলিজা কেমন করি ঠান্ডা করমো। আমার ছইল বাপ, মাও বইন ছাড়া কিছু বোঝে না। এখন এই বাড়িত হামরা কেমন করি থাকমো’, সচিবালয়ের আগুন নেভাতে গিয়ে ট্রাকের চাপায় নিহত ফায়ার ফাইটার সোহানুজ্জামান নয়নের মা নার্গিস বেগম আহাজারি করতে করতে কথাগুলো বলেন।
বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) সরেজমিনে নয়নের বাড়িতে গিয়ে এ দৃশ্য দেখা যায়।
নয়নের মা বলেন, আমার ছেলে বুধবার রাত ৯টার দিকে কল দিয়ে জিজ্ঞেস করে কী রান্না হয়েছে, খাওয়া দাওয়া করছেন কিনা। এ সময় রান্নাবান্না করার কথা জানালে সে বলে এত দেরিতে রান্না করতেছেন কেন, কখন খাবেন আর কখন ঘুমাবেন। ছেলে ডিগ্রি পরীক্ষা দিয়েছে, পাস করলে নাকি প্রমোশন হবে। আমার ছেলে বলত, যখন বাহিনী থেকে অর্ডার হবে তখন বিয়ে করব। আমি চুপ করে কখনো বিয়ে করব না। সে সন্তান এখন হারিয়ে গেল। অনেক আশা ছিল কিন্তু পূরণ হলো না।
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার বড়বালা ইউনিয়নের আটপুনিয়া গ্রামের কৃষক আক্তারুজ্জামানের ছেলে সোয়ানুর জামান নয়ন। তিনি দুই বছর ধরে ফায়ার সার্ভিসে কর্মরত ছিলেন। তেজগাঁও ফায়ার স্টেশনে স্পেশাল ইউনিটে দায়িত্বরত ছিলেন। তার মর্মান্তিক মৃত্যুকে ঘিরে তার বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।
নয়নের বাবা আক্তারুজ্জামান বলেন, আমাকে ভোর ৫টায় জানানো হয়েছে, এরকম একটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। একটু পরে জানানো হয়েছে, সে মারা গেছে। এ পর্যন্ত আমি জানি।
জানা গেছে, বুধবার রাতে সহকর্মীদের সঙ্গে খাবার খেয়ে ভলিবল খেলছিলেন। এমন সময় বেজে ওঠে ফায়ার অ্যালার্ম। দলবল নিয়ে ছুটে যান সচিবালয়ে লাগা আগুন নেভাতে। কিন্তু ফায়ার সার্ভিসের ইউনিটসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সড়কে বেরিকেড না দেওয়ায় পানির পাম্প থেকে লাইনের সংযোগ দিতে সড়ক পার হওয়ার সময় ট্রাকের ধাক্কায় আহত নয়ন আহত হন। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে নেওয়ার পর চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গ থেকে ময়নাতদন্ত শেষে নয়নের মরদেহ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের বঙ্গবাজার সদর দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখানে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।