চলতি বছরের আর মাত্র ৪ দিন বাকি। এরপর শুরু হবে নতুন বছর, সঙ্গে নতুন শিক্ষাবর্ষ। নতুন বছরের প্রথম দিনে নতুন বইয়ের ঘ্রাণে মাতোয়ারা হওয়ার অপেক্ষায় চট্টগ্রামে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের ২৬ লাখের বেশি শিক্ষার্থী। তবে প্রাথমিকের ২৪ শতাংশ বই এলেও বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মাধ্যমিকের কোনো বইই চট্টগ্রামে এসে পৌঁছেনি। ফলে বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই পৌঁছানো নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। যদিও কর্তৃপক্ষ বলছে, বছরের শুরুতে সব বিষয়ের না হলেও অন্তত কিছু বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হবে।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড সূত্রে জানা যায়, পাঠ্যপুস্তক ছাপানোর কার্যক্রম প্রতি বছর মার্চ-এপ্রিল মাসে শুরু হয়। এবার মার্চ-এপ্রিলের দিকে কিছু কাজ হলেও আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে অনেককিছু এলোমেলো হয়ে যায়। কারিকুলাম পরিবর্তন, পাঠ্যবইয়ে পরিমার্জন, মুদ্রণ কার্যাদেশ প্রদানে বিলম্বের কারণে ছাপানোর কাজ দেরিতে শুরু হয়।
চট্টগ্রাম জেলা শিক্ষা অফিসের তথ্য মতে, এবার চট্টগ্রামে নতুন বইয়ের চাহিদা রয়েছে ২ কোটি ৪৪ লাখ ৩২ হাজার ৯৩টি। ইবতেদায়ি, দাখিল, দাখিল ভোকেশনাল, মাধ্যমিক ভোকেশনাল, মাধ্যমিক বাংলা ও ইংলিশ ভার্সন মিলে মোট শিক্ষার্থী রয়েছে ১৬ লাখ ৮৬ হাজার ৯৯৪ জন। এর মধ্যে কোনো বইই এখনো পৌঁছেনি।
মাধ্যমিকের কোনো বই না পৌঁছার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম জেলা শিক্ষা অফিসার উত্তম খীসা।
বৃহস্পতিবার তিনি কালবেলাকে বলেন, উপজেলা থেকে পাঠ্যবই গ্রহণের কোনো তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। তবে ঢাকার দুটি প্রেস থেকে পাঠ্যবই পাঠানোর বিষয়ে জেলা ও উপজেলার যোগাযোগ তথ্য নিয়েছে। পাঠ্যবই পাঠাবে বলে আমাদের জানিয়েছে।
এদিকে মাধ্যমিক পর্যায়ের কোনো বই না এলেও গত বুধবার পর্যন্ত চট্টগ্রামে প্রাথমিকের ২৪ শতাংশের মতো বই এসেছে, যা এরই মধ্যে বিতরণও শুরু হয়েছে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্যমতে, চট্টগ্রামের ৪ হাজার ৬৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১০ লাখ ৪ হাজার ৬৩২ শিক্ষার্থী নতুন বই পাবে। এবার নতুন বইয়ের চাহিদা রয়েছে ৪৪ লাখ ১৮ হাজার ১৮৭টি।
চট্টগ্রামের ৬ থানা শিক্ষা অফিস ও সব উপজেলা মিলে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বাংলা মাধ্যমে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৯ লাখ ৮৫ হাজার ৫৩৪ জন। এদের মধ্যে প্রাক-প্রাথমিকের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ লাখ ৪৭ হাজার ৩৬৮ জন। ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৮ হাজার ৭৯০ জন।
এ ছাড়া চট্টগ্রামের স্কুলগুলোতে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের মাতৃভাষায় লেখা বইয়ের চাহিদা রয়েছে ৬৭১টি, যা চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড এবং নগরীর পাঁচলাইশ থানা শিক্ষা অফিসের আওতাধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দেওয়া হয়। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা এবং গারো সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীরা নিজেদের মাতৃভাষায় লেখা বই পেয়ে থাকে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এস এম আব্দুর রহমান কালবেলাকে বলেন, আমাদের বই আসছে। আমরা আশা করছি বছরের প্রথম দিন কোমলমতি শিক্ষার্থীদের হাতে একটা করে হলেও বই তুলে দেব।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ন্যাশনাল কারিকুলাম অ্যান্ড টেক্সট বুক বোর্ডের (এনসিটিবি) সদস্য (পাঠ্যপুস্তক) অধ্যাপক ড. রিয়াদ চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, আমাদের পাঠ্যবই ছাপানোর কাজ চলছে। কিছু কিছু জায়গায় বই যাচ্ছে। চট্টগ্রামেও পৌঁছে যাবে। জানুয়ারির ১ তারিখের মধ্যে চট্টগ্রামে সব বই না গেলেও কিছু বই পৌঁছে যাবে।