শেরপুরে সামাজিক কবরস্থানের রাস্তার জমি বেদখল করে বাড়ি নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে। কবরস্থানের জন্য গ্রামবাসীর দেওয়া ৭০ হাজার টাকাও আত্মসাৎ করেছেন তিনি। রাস্তা উদ্ধারের দাবিতে মানববন্ধন ও জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন গ্রামবাসী।
ভুক্তভোগীরা জানান, শেরপুর সদর উপজেলার চরমোচারিয়া ইউনিয়নের টালিয়াপাড়া গ্রামের সামাজিক কবরস্থানে যাতায়াতের রাস্তা বেদখল করে ঘর নির্মাণ করেছেন চরমোচারিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও স্বাস্থ্য বিভাগের সিএইচসিপি মোশাররফ হোসেন। তিনি আওয়ামী লীগের ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে সামাজিক কবরস্থানের সাধারণ সম্পাদক পদও বাগিয়ে নেন। এরপর সেই কবরস্থানের রাস্তা বেদখল করে পাকা ভবন নির্মাণ করেন। এতে গ্রামবাসী বাধা দিতে গেলে তৎকালীন সরকারের নাম ভাঙিয়ে মামলার ভয় দেখান তিনি।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরও মোশাররফ হোসেন রাস্তা দখল করে রেখেছেন। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন গ্রামবাসী। মরদেহ নিয়ে কবরস্থানে যাওয়ার বিকল্প রাস্তা না থাকায় বাধ্য হয়ে বিভিন্ন জায়গায় দাফন করতে হচ্ছে।
গ্রামবাসী আরও জানান, কবরস্থান কমিটির প্রায় ৭০ হাজার টাকাও আত্মসাৎ করেছেন মোশাররফ হোসেন। দ্রুততম সময়ের মধ্যে কবরস্থানের রাস্তাটি দখলমুক্ত এবং আত্মসাৎ করা অর্থ ফেরত চান স্থানীয়রা।
মনোয়ারা বেগম নামের স্থানীয় এক নারী বলেন, ‘গত সপ্তাহে আমার আত্মীয় মারা যায়। কিন্তু মরদেহ সামাজিক কবরস্থানে নেওয়া যায়নি।তাই বাধ্য হয়েই ঘরের পাশেই কবর দিতে হয়েছে।’
আরেক বাসিন্দা আকবর আলী জানান, ২০১২ সালে চাহিদার ভিত্তিতে গ্রামের সাধারণ মানুষ ৪১ শতাংশ জমিতে একটি সামাজিক কবরস্থান করেন। পরবর্তী সময়ে কবরস্থানে যাতায়াতের কোনো রাস্তা না থাকায় ২০২০ সালে স্থানীয়দের আর্থিক সহায়তায় মোশারফের তত্ত্বাবধানে ৪ শতাংশ জমি রাস্তার জন্য কেনা হয়। সেসময় মোশাররফ হোসেন তথ্য গোপন করে গ্রামবাসীকে রাস্তা বুঝিয়ে দেননি। কিছুদিন পর ওই রাস্তার জমিটি বেদখল করে বাড়ি করতে গেলে স্থানীয়রা বাধা দেন। স্থানীয়দের বাধা উপেক্ষা করে, মামলা-হামলার ভয় দেখিয়ে বাড়ি নির্মাণ করেন।
অভিযোগের বিষয়ে মোশাররফ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, আমি একজন সরকারি চাকরিজীবী। আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি না। কমিটিতে নামের বিষয়টিও আমার অজানা।
তিনি আরও বলেন, ২০২০ সালের জুলাইয়ে স্থানীয় বাছের উদ্দিনের মেয়ে আলেছা বেগমের ছেলেদের কাছ থেকে কবরস্থানের নামে ৪ শতাংশ জমি কিনে রাস্তা নির্মাণ করা হয়। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে বাছের উদ্দিনের ছেলে জহুরুল ইসলাম ও তার পরিবার সমাজের কিছু অসাধু ব্যক্তির সহায়তায় জোরপূর্বক ওই রাস্তা দখল করে নেয়।
শেরপুরের জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, বিষয়টি জানতে পেরেছি। জানার পর সংশ্লিষ্ট ইউএনও এবং সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) সমাধানের দায়িত্ব দিয়েছি। তারা তদন্ত সাপেক্ষে সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা করবেন।
মো. নাঈম ইসলাম/এসআর/জেআইএম