কবি নজরুলের দুই সাংবাদিকের ওপর হামলা-লুটপাট

4 hours ago 8

কবি নজরুল সরকারি কলেজে সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। সাধারণ শিক্ষার্থীর পরিচয়ে কিছু ব্যক্তি দুই সাংবাদিকের ওপর হামলা চালিয়ে তাদের মূল্যবান সামগ্রী ছিনিয়ে নেয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

আক্রান্তরা হলেন— ‘দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস’ -এর প্রতিনিধি আব্দুল্লাহ খান এবং ‘প্রবাস টাইমস’ -এর রিপোর্টার রনি মিয়া।

বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) রাত আনুমানিক ১০টার দিকে ঘটনাটি ঘটে। 

ভুক্তভোগীদের দাবি, অজ্ঞাত নাম্বার থেকে কল দিয়ে তাদের ছাত্রাবাসে ডেকে নেওয়া হয়। পরে তারা দেখেন, ২০৯ নম্বর রুমের জিনিসপত্র বাইরে ফেলে দেওয়া হয়েছে এবং রুমে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। এক পর্যায়ে বাকবিতণ্ডার পর তাদের ওপর হামলা চালানো হয়।

কবি নজরুল সরকারি কলেজে উত্তেজনার সূত্রপাত ঘটে গত মঙ্গলবার (১১ মার্চ) মধ্যরাতে, যখন গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক লাকী আক্তারকে নিয়ে কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরের একটি পোস্ট শেয়ার করেন কলেজ সাংবাদিক সমিতির সাবেক দপ্তর, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শিতাংশু ভৌমিক অংকুর। এই পোস্ট শেয়ার করার পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় ওঠে। অনেক শিক্ষার্থী পোস্টটি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং এর প্রতিবাদে সরব হন। 

পরদিন বুধবার (১২ মার্চ) সন্ধ্যায় ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সামনে শিক্ষার্থীরা প্ল্যাকার্ড হাতে বিক্ষোভ শুরু করেন। এসময় শিক্ষার্থীরা- ‘হুঁশিয়ার, সাবধান’, ‘শাহবাগের বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘ল তে লাকী, তুই হাসিনা, তুই হাসিনা, তুই হাসিনা’, ‘শহীদেরা দিচ্ছে ডাক, শাহবাগ নিপাত যাক’, ‘শাহবাগী শিতাংশুর ঠিকানা এই ক্যাম্পাসে হবে না’ স্লোগান দেন।

বিক্ষোভ শেষে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা কলেজ মুক্তমঞ্চে অবস্থান নেন। তাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে ‘বাঁধন’, ডিবেট ক্লাব ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারাও সেখানে অবস্থান নেন। উত্তপ্ত পরিস্থিতি দ্রুত কলেজজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে, যা পরবর্তীতে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনাকে আরও জটিল করে তোলে।

বিক্ষোভের প্রেক্ষিতে, শিতাংশু ভৌমিক অংকুরকে প্রথমে সমিতি থেকে ৭ দিনের শোকজ নোটিশ দেওয়া হয় এবং পরবর্তীতে তার সদস্যপদ স্থগিত করা হয়।

হামলার শিকার সাংবাদিক আব্দুল্লাহ খান জানান, তিনি কবি নজরুল কলেজের দর্শন বিভাগের ছাত্র এবং ‘দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস’ এর ক্যাম্পাস প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘আমার রুমমেট রনি মিয়াকে অজানা নাম্বার থেকে কল দিয়ে ছাত্রাবাসে আমাদের রুমের সামনে আসতে বলা হয়। সেখানে গিয়ে দেখি, আমাদের জিনিসপত্র বাইরে ফেলে দেওয়া হয়েছে এবং রুমে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমার যদি কোনো অপরাধ থাকে, তবে কলেজ প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু যারা আমার রুমের তালা ভেঙে জিনিসপত্র নষ্ট করেছে এবং আমার অ্যাকশন ক্যামেরা ও প্রায় ত্রিশ হাজার টাকা লুট করেছে, তাদের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করছি।’

‘প্রবাস টাইমস’ -এর রিপোর্টার এবং কবি নজরুল কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রনি মিয়া কালবেলাকে বলেন,
‘যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, তারা সাধারণ শিক্ষার্থীর পরিচয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হামলা ও লুটপাট করেছে। কিছুদিন ধরে হলের গ্রুপ এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উসকানিমূলক পোস্ট দেওয়া হচ্ছিল। এ ঘটনার নেতৃত্বে ছিল রুহুল আমিন, মুজাহিদ, আলভী এবং আরও কিছু ব্যক্তি। তারা আমাদের ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করেছে এবং নানা ধরনের হুমকি প্রদান করেছে। যদি আমাদের কোনো ভুল থাকে, তবে সেটা কলেজ প্রশাসন দেখবে, কারণ তারা হল থেকে আমাদের বের করে দেওয়ার দায়িত্ব রাখে না।’

প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, হামলাকারীরা প্রথমে রুমের দরজায় লাথি মেরে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করে। পরে তারা জোরপূর্বক দরজা খুলে রুমের সব জিনিসপত্র বাইরে ফেলে দেয় এবং রুমে তালা লাগিয়ে দেয়। এসময় তারা চিৎকার করতে থাকে এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেয়। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হামলাকারীরা বলছিল, ‘এই হলে তোমাদের জায়গা হবে না’, ‘শাহবাগীদের থাকতে দেওয়া হবে না’ এবং ‘যত দ্রুত সম্ভব হল ছাড়ো, নাহলে আরও খারাপ হবে।’

হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত রুহুল আমিন বলেন, শিতাংশু যেহেতু শাহবাগি লাকিদের পোস্ট শেয়ার করেছে, সে শাহবাগিদের সাপোর্ট করেছে। আমার বক্তব্য একটাই— আমরা এর বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকব।

তৎক্ষণাৎ খবর পেয়ে ছাত্রাবাসে ছুটে যান কবি নজরুল কলেজ শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক ইরফান আহমেদ ফাহিম। তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘কোনো শিক্ষার্থী অপরাধ করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব কলেজ প্রশাসনের। প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া কাউকে হল থেকে বের করে দেওয়ার অধিকার কারও নেই। যদি কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকে, তবে তা যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানানো উচিত, নিশ্চয়ই প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। আমরা কোনো ধরনের সংঘর্ষ বা বিশৃঙ্খলা চাই না। সাংবাদিকরা শিক্ষার্থীদের পক্ষে কাজ করেন, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের সবার দায়িত্ব।

এ প্রসঙ্গে সূত্রাপুর থানার ওসি সাইফুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, ‘বাদী ও বিবাদী— উভয়পক্ষই শিক্ষার্থী। যদি তারা পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করতে পারে, তাহলে সহজেই সমস্যার সমাধান সম্ভব। তবে যদি ভুক্তভোগীরা আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ করেন, তাহলে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে ‘

এ বিষয়ে কবি নজরুল কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান কালবেলাকে বলেন, ‘বিষয়টি আমাকে জানানো হয়েছে। যদি এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে, তবে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সাধারণ শিক্ষার্থীর পরিচয়ে কেউ হলের দায়িত্ব নিতে পারে না। ছাত্রাবাসে কে থাকবে, সেটা কলেজ প্রশাসন নির্ধারণ করবে। কোনো শিক্ষার্থী আরেক শিক্ষার্থীকে বের করে দিতে পারে না। অভিযোগ থাকলে তা প্রক্রিয়াগতভাবে তদন্ত হবে।’

এ ঘটনার পর কলেজ ছাত্রাবাসের পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে, বিশেষ করে সাংবাদিকতা পেশায় যুক্ত শিক্ষার্থীরা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন।

Read Entire Article