কম ঘুমালে নারীদের মেজাজ এতো খিটখিটে হয়ে যায় কেন

3 hours ago 2

আপনি কি জানেন যে, গড়ে পুরুষের তুলনায় নারীদের এক থেকে দুই ঘণ্টা বেশি ঘুমের প্রয়োজন? ডিউক ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টার–এর গবেষণা অনুযায়ী, হরমোন ও মস্তিষ্কের কাজের জটিলতার কারণে নারীদের এই অতিরিক্ত ঘুম জরুরি।

অর্থাৎ, ঘুমের চাহিদা নারী ও পুরুষের ক্ষেত্রে একরকম নয়। ২০২১ সালে জার্নাল অব অ্যাফেকটিভ ডিসঅর্ডারস–এর একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ঘুম কম হলে নারীদের ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টের হরমোনের মাত্রা এলোমেলো হয়ে যায়। এর ফলে তারা বেশি খিটখিটে হয়ে ওঠেন, উদ্বেগ ও বিষণ্নতার ঝুঁকিও বেড়ে যায়।

চলুন জেনে নেওয়া যাক, পর্যাপ্ত ঘুম না হলে নারীর শরীরে কী ঘটে-

১. কর্টিসল বা স্ট্রেস হরমোন বেড়ে যায়

ঘুম কম হলে শরীরে কর্টিসল নামের স্ট্রেস হরমোন অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। এতে নারীদের মধ্যে উদ্বেগ, বিরক্তি, মাথাব্যথা ও ওজন বাড়ার প্রবণতা দেখা দেয়। হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল–এর একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, মাত্র কয়েক রাত ঘুম কম হলেও কর্টিসলের মাত্রা দ্রুত বেড়ে গিয়ে মানসিক চাপকে দ্বিগুণ করে তোলে।

২. ইনসুলিনের ভারসাম্য নষ্ট হয়

পর্যাপ্ত ঘুম না হলে ইনসুলিন হরমোন সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। এর ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায় এবং দীর্ঘমেয়াদে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি তৈরি হয়। নারীদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা বেশি তীব্র হয়, কারণ হরমোনাল ওঠানামা ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সকে দ্রুত বাড়িয়ে তোলে।

জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল এন্ডোক্রাইনোলজি অ্যান্ড মেটাবলিজম–এর তথ্য অনুযায়ী, নারীদের ওপর ঘুমের ঘাটতি ও ডায়াবেটিসের সম্পর্ক বিশেষভাবে প্রমাণিত হয়েছে।

৩. প্রজনন হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে

ঘুমের অভাব সরাসরি প্রভাব ফেলে ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন হরমোনে। ফলে মাসিক চক্রে অনিয়ম, প্রজনন সমস্যাসহ বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি বাড়ে। ডিউক ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টার–এর এক গবেষণা দেখায়, যারা নিয়মিত পাঁচ ঘণ্টার কম ঘুমান, তাদের মধ্যে মাসিক চক্রের অনিয়ম দ্বিগুণ বেশি দেখা যায়।

৪. থাইরয়েডের কর্মক্ষমতা কমে যায়

অল্প ঘুম থাইরয়েড গ্রন্থে হরমোনের উৎপাদন কমিয়ে দেয়। এতে নারীরা অবসাদগ্রস্ত, শক্তিহীন হয়ে পড়েন এবং ওজন বেড়ে যায়। থাইরয়েডের সঙ্গে ঘুমের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে বলে জানায় আমেরিকান থাইরয়েড অ্যাসোসিয়েশন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং জার্নাল অব উইমেন্স হেলথ–এর গবেষণা বলছে, নারীরা গড়ে পুরুষদের তুলনায় ঘুমের ঘাটতিতে বেশি ভোগেন। এর প্রধান কারণ হলো প্রজননসংক্রান্ত হরমোনের ওঠানামা। মাসিক চক্র, গর্ভাবস্থা কিংবা মেনোপজ—প্রতিটি পর্যায়েই হরমোন ঘুমকে নিয়ন্ত্রণ করে। আবার উল্টোদিক থেকেও ঘুম কম হলে সেই হরমোনের স্বাভাবিক ছন্দ নষ্ট হয়।

তবে ২০২০ সালে জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল স্লিপ মেডিসিন–এ প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, কয়েক রাত টানা কম ঘুমালে পুরুষদের টেস্টোস্টেরন দ্রুত নেমে যায়। এতে শক্তি ও কর্মক্ষমতা কমে যায়, মুডও খারাপ হয়ে যায়। তবে হরমোনের তারতম্যের কারণে নারীরা পুরুষের তুলনায় এ সমস্যায় বেশি ভোগেন।

আমাদের দেশে নারীদের জীবনধারা ও কাজের চাপে ঘুম প্রায়ই অবহেলিত হয়। তাই হরমোনের এই অস্থিরতা থেকে বাঁচতে নারীদের জন্য নিয়মিত সাত থেকে আট ঘণ্টা গভীর ঘুম দরকার। সেই সঙ্গে ঘুমানোর আগে মোবাইল ফোন বা টিভির নীল আলো এড়িয়ে চলা, চা-কফি কম খাওয়া এবং প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়া ঘুমের মান উন্নত করতে সাহায্য করে।

সূত্র: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, জার্নাল অব উইমেন্স হেলথ, হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল, জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল এন্ডোক্রাইনোলজি অ্যান্ড মেটাবলিজম, ডিউক ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টার, আমেরিকান থাইরয়েড অ্যাসোসিয়েশন, জার্নাল অব অ্যাফেকটিভ ডিসঅর্ডারস

এএমপি/এমএস

Read Entire Article