চট্টগ্রামের কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতু এলাকায় যানজট নিরসনে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া ও আইনের কঠোর প্রয়োগের আহ্বান জানিয়েছে বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) নগরীর থিয়েটার হলে ‘কর্ণফুলী ব্রিজ এলাকার যানজট নিরসনে করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এ আহ্বান জানানো হয়। মাল্টি পার্টি অ্যাডভোকেসি ফোরাম, চট্টগ্রাম এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সেক্রেটারি জসিম উদ্দীন চৌধুরী। উপস্থিত ছিলেন সিডিএর বোর্ড মেম্বার জাহিদুল করিম কচি, উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক-উত্তর) নেছার আহমেদ, ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের প্রোগ্রাম ম্যানেজার আশরুপা হক, রিজিওন কো-অর্ডিনেটর সদরুল আমিন, সড়ক ও জনপদ বিভাগের উপ-প্রকৌশলী মো. নেজাম উদ্দিন, বিএআরটিএ চট্টগ্রাম বিভাগের উপ-পরিচালক কে এম মাহবুব কবির, কর্ণফুলী সেতুর টোল ম্যানেজার কাজী মনিরুল ইসলাম, বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধি, পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধি এবং যাত্রী কল্যাণের প্রতিনিধিরা।
গোলটেবিল আলোচনায় বলা হয়, চট্টগ্রাম মহানগরের দক্ষিণাঞ্চলের প্রবেশদ্বার হিসেবে কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতু এলাকায় প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২৭ হাজার যানবাহন চলাচল করে। ছুটির দিন ও উৎসবের সময় এই সংখ্যা আরও বেড়ে যায়। দীর্ঘদিনের যানজট এখন নগর ব্যবস্থাপনার বড় চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে। এর ফলে দক্ষিণ চট্টগ্রাম, বান্দরবান ও কক্সবাজারগামী যাত্রী ও পণ্য পরিবহন ব্যাহত হচ্ছে।
আলোচনায় যানজটের প্রধান কারণ হিসেবে উঠে আসে— টোল প্লাজার ধীরগতি, পর্যাপ্ত কর্মীর অভাব, ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা, অবৈধ পার্কিং ও স্টেশন, মইজ্জারটেক ও বশিরুজ্জামান চত্বরের অব্যবস্থা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা–সিএনজি চালকদের ট্রাফিক আইন না মানা, ভাসমান হকারদের উপস্থিতি এবং সংযোগ সড়কের অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা।
বক্তারা বলেন, নতুন ব্রিজ এলাকায় অনেক বাস শ্রমিক রাস্তায় গাড়ি পার্কিং করেন। যেখানে সেখানে বাস থামিয়ে যাত্রী তোলা–নামানো হয়। রাস্তার দুই পাশে হকারদের দখলে বিশাল জায়গা চলে গেছে। গ্রামের সিএনজি শহরে ঢুকে পড়ে। ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যা খুবই কম। আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় এসব অনিয়ম অব্যাহত রয়েছে। এর ফলে মানুষের মূল্যবান সময় ও কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে।
বক্তারা প্রস্তাব দেন, ট্রাক-লরির চলাচলের নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করতে হবে এবং বড় যানবাহনগুলোকে টানেল ব্যবহার করতে বাধ্য করা উচিত। তারা বন্ধের দিন ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যা বাড়ানো ও বাস মালিকদের পক্ষ থেকে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগের পরামর্শ দেন। পাশাপাশি ফার্মগেটের আদলে ফ্লাইওভার ও নতুন টার্মিনাল নির্মাণের দাবিও তোলেন।
বৈঠকে বক্তারা ব্রিজ নির্মাণব্যয় আদায়ের পরও টোল আদায় অব্যাহত রাখার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।
কর্নফুলী সেতুর টোল ম্যানেজার কাজী মনিরুল ইসলাম জানান, টোল প্লাজার কর্মীরা দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমানে ১০টি বুথ চালু রয়েছে; আরও বুথ স্থাপন ও আধুনিকায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হবে। টোল প্লাজার ধীরগতির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ভাঙতি টাকার সমস্যা বা গাড়ির নম্বর প্লেট অটো ডিটেক্ট না হলে কিছুটা সময় বেশি লাগে।’
গোলটেবিলের অন্যান্য অতিথি, সাংবাদিক, পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা যানজট নিরসনে প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় সমাধানের প্রস্তাব উপস্থাপন করেন।