কাজে আসছে না কোটি টাকার নৌ অ্যাম্বুলেন্স

2 hours ago 2

স্বাস্থ্যসেবা একজন নাগরিকের মৌলিক অধিকার। সেই অধিকার থেকে যুগের পর যুগ বঞ্চিত রয়েছে নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার সাত লাখ মানুষ। এই আধুনিক যুগে এসেও যাতায়াত ব্যবস্থার কারণে প্রতিনিয়ত পথেই জীবন দিতে হচ্ছে অন্তঃসত্ত্বা মা, শিশু, হৃদরোগসহ জটিল ও দুর্ঘটনার শিকার রোগীদের।

নদী পারাপারে কোটি টাকা মূল্যের দুটি নৌ অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও দীর্ঘসময় কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও সঠিক তদারকির অভাবে বিকল হয়ে পড়ে আছে নদীর পাড়ে। ফলে প্রতিনিয়ত রোগী নিয়ে বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় সেবাপ্রত্যাশীরা।

নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়া। দ্বীপের মানুষের স্বাস্থ্য সেবায় রয়েছে নামে মাত্র ৫০ শয্যা বিশিষ্ট একটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ডাক্তার-নার্স সংকটসহ আধুনিক কোনো সুযোগ-সুবিধা না থাকায় প্রতিমাসে ৬০ থেকে ৭০ জন রোগীকে জেলা সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করতে হচ্ছে। এ ছাড়াও নিজেদের উদ্যোগে উন্নত চিকিৎসার জন্য জেলা সদরে যান আরও শতাধিক রোগী। নৌ অ্যাম্বুলেন্স বা উন্নত যানবাহন না থাকায় বাধ্য হয়ে ছোট ছোট কাঠের নৌকা স্পিডবোটে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাড়ি দিতে হয় উত্তাল মেঘনা। অনেক সময় ঘাটে এবং নদীতে ঘটে যায় ডেলিভারিসহ অনেক প্রাণহানির ঘটনা।

রোগীদের ভোগান্তি লাঘবে ২০১৯ সালে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে হাতিয়ার জন্য একটি নৌ অ্যাম্বুলেন্স দেওয়া হয়। কিছুদিন চলার পর সেটি বিকল হয়ে নদীর তীরবর্তী একটি পুকুরে ডুবে আছে। ২০২২ সালে জাপানি সংস্থা জাইকার মাধ্যমে একটি নৌ-অ্যাম্বুলেন্স দেওয়া হয়। প্রথম বছর খুব ভালো সেবা দিয়েছিল অ্যাম্বুলেন্সটি। কিন্তু সরকারিভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত চালক, জ্বালানি তেলের সঙ্কট ও রক্ষাণাবেক্ষণের জন্য বাজেট বরাদ্ধ না থাকায় অযত্নে দুই বছর ধরে নদীর তীরে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন যন্ত্রাংশে মরিচা ধরেছে। ফলে কোটি টাকা মূল্যের দুটি নৌ অ্যাম্বুলেন্স প্রকৃত পক্ষে কোনো কাজেই আসছে না দ্বীপের অসহায় স্বাস্থ্যসেবা প্রত্যাশীদের।
 
নলচিরা ঘাটের প্রত্যক্ষদর্শী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, নৌকা বা স্পিডবোটের জন্য অপেক্ষা করতে করতে ঘাটে অনেক রোগীর ডেলিভারি হয়ে গেছে। নদী পার হওয়ার সময় অনেক রোগী মারা যায়। যদি নৌ অ্যাম্বুলেন্স থাকত তাহলে হয়তো এই রোগীকে দ্রুত জেলা সদর হাসপাতালে নিতে পারলে বাঁচানো যেত।

স্থানীয় বাসিন্দা শাখাওয়াত হোসেন বলেন, হাতিয়ায় রোগীদের পারাপারে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। নামে মাত্র নৌ অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও কয়েকদিন চলার পর সেটির আর ধারাবাহিকতা থাকে না। বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে এটি বন্ধ করে রাখা হয়। সন্ধ্যার পর অনেক রোগী আসে, তাদেরকে বাধ্য হয়ে কাঠের নৌকায় চড়তে হয়। এতে রোগীরা সঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে না।

স্পিডবোট চালক জাকের হোসেন কালু বলেন, আমি তিন বছর নৌ অ্যাম্বুলেন্স চালিয়েছি। একদিনে পাঁচ-সাতজন রোগীও আমি পার করেছি। অনেক রোগী আমার বোটের মধ্যে ডেলিভারি হয়ে গেছে। কোনো বেতন ভাতা না থাকায় আমি ছেড়ে দিয়েছি।
 
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মানসী রানী সরকার বলেন, হাতিয়ায় যে দুটি নৌ অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে তার মধ্যে একটি অনেক আগেই বিকল হয়ে গেছে। আরেকটি অ্যাম্বুলেন্স মোটামুটি ভালো থাকলেও চালকের বেতন বন্ধ থাকায় সে এখন আর চালাচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে লোকবল নিয়োগ পেলে আবারও রোগীদের সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।

Read Entire Article