কাতারের মরু ও সাগরের বুকে ইসলামী জাদুঘর

4 hours ago 5

ইসলামের দেড় হাজার বছরের বর্ণাঢ্য ইতিহাসের এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা অর্জনের জায়গা কাতারের দোহায় অবস্থিত ‘দ্য মিউজিয়াম অব ইসলামিক আর্ট’ তথা ইসলামিক স্থাপত্য শিল্প জাদুঘর। দোহা উপসাগরের বুক চিরে জেগে ওঠা এ জাদুঘরের পাশে সার্বক্ষণিক খোলা থাকে ২ লাখ ৮০ হাজার বর্গমিটারের বিশাল পার্ক। যে পার্কে অনায়াসেই মানুষ ২৪ ঘণ্টা প্রবেশ করতে পারে। পার্কটি সার্বক্ষণিক উন্মুক্ত থাকলেও নির্ধারিত নিয়ম মেনেই খোলা হয় জাদুঘর। শনি থেকে বৃহস্পতিবার খোলা থাকে সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত। শুধু শুক্রবার অর্ধদিবস তথা দুপুর ১টা ৩০ মিনিট থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত খোলা থাকে জাদুঘর।

শিশুদের পড়াশোনার পাশাপাশি প্রাচীন স্থাপত্য শিল্পে ভরপুর এ জাদুঘরে গবেষণা ও অধ্যয়নের জন্য রয়েছে বিশাল পাঠাগার। এ পাঠাগারটিও সপ্তাহে পাঁচ দিন রোববার থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত খোলা থাকে। শুক্র ও শনিবার বন্ধ থাকে এ বিশাল গ্রন্থশালা। অনেক দুর্লভ বইয়ের সংগ্রহও রয়েছে এ পাঠাগারে। দর্শনার্থীদের জন্য বন্ধের ৩০ মিনিট পূর্বপর্যন্ত প্রবেশের অনুমতি রয়েছে জাদুঘরটিতে। জাদুঘরটিতে রয়েছে কফি হাউস, ক্যালিগ্রাফিসমৃদ্ধ গ্যালারি ও উপহারের দোকান। যাতে জাদুঘরটি বন্ধের ১৫ মিনিট আগেও প্রবেশের অনুমতি রয়েছে।

পাঁচতলাবিশিষ্ট এ বিশাল জাদুঘরে নারী ও পুরুষদের জন্য আলাদা আলাদা ওজু ও নামাজের জন্য রয়েছে সর্বোত্তম ব্যবস্থা। আগত দর্শনার্থীদের বিনোদনের জন্য রয়েছে ২০০ আসনবিশিষ্ট একটি থিয়েটার। ভোজনবিলাসীদের জন্য আরবি, ফরাসি ও ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের মজাদার খাবারে সমৃদ্ধ রেস্টুরেন্ট। জাদুঘরটি সন্ধ্যা ৭টায় বন্ধ হয়ে গেলেও রেস্টুরেন্টটি খোলা থাকে শনি থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দুপুর ১২টা ৩০ মিনিট থেকে ৩টা এবং ডিনারের জন্য সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১০টা। শুক্রবার এ রেস্টুরেন্টটি বন্ধ থাকে।

মিউজিয়ামটিতে দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে আর্থিক লেনদেনের জন্য এটিএম বুথ, যোগাযোগের জন্য ফ্রি ওয়াইফাই কানেকশন, ফ্রি গাইড লাইন এবং অভ্যর্থনা ও তথ্য অনুসন্ধান কেন্দ্র রয়েছে। জাদুঘরের চতুর্থতলায় সংরক্ষিত আছে দুর্লভ সংগ্রহ—ইসলামের প্রাথমিক যুগের (সপ্তম থেকে বারোতম শতাব্দী) স্থাপত্য শিল্প গ্যালারি, মধ্য এশিয়া ও ইরানের ১২-১৬তম শতাব্দীর স্থাপত্য শিল্পের দুটি আলাদা গ্যালারি, মিশর ও সিরিয়ার ১২-১৫তম শতাব্দীর স্থাপত্য শিল্পের দুটি আলাদা গ্যালারি। শুধু ইরানের ১৬-১৯ শতকের আধুনিক স্থাপত্য শিল্পের আলাদা গ্যালারিও স্থান পেয়েছে এ জাদুঘরে। ভারতের ১৬-১৮ শতাব্দীর স্থাপত্য শিল্প গ্যালারি, তুরস্কের ১৬-১৮ শতকের স্থাপত্য শিল্প গ্যালারিও রয়েছে এ জাদুঘরে।

কাতারের দোহা উপসাগরের তীরে গড়ে ওঠা এ ইসলামী স্থাপত্য শিল্প জাদুঘরের স্থপতি ৯১ বছর বয়সে আইএমপাই ৪৫ হাজার বর্গমিটারের বিশাল ভবনের নকশা করেন। এ জাদুঘরের নকশা করার আগে তিনি বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম দেশে প্রায় ছয় মাস ভ্রমণ করে বিভিন্ন জাদুঘর পরিদর্শন ও মুসলিম স্থাপত্য ও ইতিহাস সম্পর্কে জেনে নেন। কাতার সরকার কর্তৃক জাদুঘরের জন্য প্রস্তাবিত সম্ভাব্য সব স্থানকে অগ্রাহ্য করে দোহা উপসাগরের এ স্থানটি বেছে নেন। কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, এমন স্থানে জাদুঘরটি করা হোক যেখানে ভবিষ্যতে কোনো উঁচু স্থাপনা এ জাদুঘরটি ঢেকে না দেয়। অনন্য সুন্দর এ জাদুঘরের নির্মাণকাজ করে উইলমোট অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস। আলোকসজ্জায় কাজ করে আলো নকশাকারী প্রতিষ্ঠান আইসোমেট্রিক লাইটিং ডিজাইন এবং পরিবেশ ও বনায়ন নকশা প্রতিষ্ঠান এভি কনসালট্যান্ট। কাঠামোগত নকশায় কাজ করেন লেসলি এ রবার্টসন অ্যাসোসিয়েটস।

লেখক: মাদ্রাসা শিক্ষক

Read Entire Article