কালবেলায় সংবাদ প্রকাশের পর খুমেকে দুদকের অভিযান

1 hour ago 1
অক্সিজেন মাস্ক খুলে নেওয়ায় রোগী মৃত্যুর ঘটনায় কালবেলায় প্রকাশিত সংবাদের সূত্র ধরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।  মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে দুদকের খুলনা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের একটি টিম এ অভিযান চালায়। এর আগে গত রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) বকশিশ না পেয়ে অক্সিজেন মাস্ক খুলে নেওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়েন সাইফুল ইসলাম নামের এক রোগী। অভিযান চলাকালীন অভিযুক্ত ক্লিনার আব্দুল জব্বার এবং মৃত্যুবরণকারীর সাইফুল ইসলামের মাকে মুখোমুখি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। কান্নাজড়িত কণ্ঠে সাইফুলের মা বলেন, জব্বার আমার ছেলেকে অক্সিজেন দেওয়ার জন্য ৫০০ টাকা দাবি করেছিল। টাকা না দেওয়ায় আমার ছেলের মুখ থেকে অক্সিজেন খুলে নিয়ে অন্য রোগীকে দেয়। দুদক ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, রোগীর মৃত্যুর জন্য দায়ী ওয়ার্ডের আউটসোর্সিং ক্লিনার আব্দুল জব্বার বকশিশ না পেয়ে রোগীর সিলিন্ডারসহ অক্সিজেন মাস্ক খুলে নিয়ে আরেক রোগীকে দেন। এর আধা ঘণ্টার মধ্যেই সাইফুল মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। অভিযুক্ত ক্লিনারের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।  অপরদিকে বিভিন্ন রোগীকে খুলনার একাধিক বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগে দুই নারী দালালকে আটক করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে। হাসপাতালে অভিযান চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছে দুদক কর্মকর্তারা। অভিযানে নেতৃত্ব দেন দুদক খুলনা অফিসের সহকারী পরিচালক জাহিদ ফজল। এদিকে, খুমেক হাসপাতালে ডাক্তারের অনুমতি ছাড়া অক্সিজেন খোলায় সাইফুল ইসলামের মারা যাওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে হাসপাতাল চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন খুলনার সর্বস্তরের ছাত্র-জনতা। বিক্ষোভ শেষে তারা হাসপাতালের পরিচালক বরাবর মৌখিক অভিযোগ পেশ করেন। এ সময় উপস্থিত জনতা হাসপাতালের দুর্নীতি বন্ধের দাবি জানান। ভুক্তভোগী ও শিক্ষার্থীরা বলেন, এ হাসপাতালে নানা হয়রানির শিকার হতে হয়। সঠিকভাবে সেবা দেওয়া হয় না। সন্তান জন্মের পর খালারা জোরপূর্বক টাকা দাবি করেন। এখন অস্বীকার করলে পরেও এসে টাকা আদায় করে নেন। তারা আরও বলেন, বকশিশ ছাড়া তারা কাজ করতে চান না, বকশিশ পেলে যেন ঈদের মতো খুশি হন। ডাক্তারের অনুমতি ছাড়া অক্সিজেন খুলে নেওয়ার কারণে যে নির্মম মৃত্যু হয়েছে, এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি আমরা চাই না। আমরা চাই হাসপাতাল চলুক স্বচ্ছতার ভিত্তিতে। এখানে টেস্ট করানো যায় না, মেশিন থাকলেও সেগুলো অচল অবস্থায় পড়ে আছে। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা সাইফুল নামের একজন বলেন, খুলনা মেডিকেলে প্রবেশের সময় থেকে একজন রোগীর সঙ্গে দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা শুরু হয়। এখানে কোনো স্ট্রেচার টাকা ছাড়া পাওয়া যায় না। হাসপাতালের ওয়ার্ড বয়, ক্লিনার ও আনসার কর্মীরা সিন্ডিকেট করে সব স্ট্রেচার, হুইল চেয়ার সরিয়ে রাখে। তিনি আরও বলেন, হাসপাতালের ন্যূনতম কোনো পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম নেই। ওয়াশরুম ব্যবহার করা যায় না। প্রতিটা জায়গায় ময়লা-আবর্জনা পড়ে আছে, এমনকি বাথরুমে ব্যবহারের পানিও নেই। এখানকার সব ডাক্তার কমিশনের বিনিময়ে বাইরের হাসপাতালে রোগী পাঠিয়ে দেয়। এমনকি হাসপাতালে প্যাথলজি থাকলেও সেখান থেকে টেস্ট না করে বাইরে করার জন্য টিকিট লিখে দেয়। বাইরের চেম্বারে রিপোর্ট দেখানোর জন্য আসতে বলে। দুদক খুলনা অফিসের উপপরিচালক মো. আব্দুল ওয়াদুদ কালবেলাকে বলেন, ক্লিনারের হাতে অক্সিজেন মাস্ক খুলে নেওয়ায় রোগীর মৃত্যু ঘটনা এবং আরও একাধিক সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে আজ আমরা অভিযান চালিয়েছিলাম। এ রোগী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন এবং তার সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব ছিল নার্সের। কিন্তু এখানে নার্স এ অক্সিজেন সিলিন্ডার তাকে দিয়েছে বা খুলেছেন এমন কোনো তথ্য-প্রমাণ আমরা পাইনি। অতএব এখানে নার্সদেরও দায়িত্বে অবহেলা রয়েছে।  তিনি আরও বলেন, যে অভিযোগটি উঠেছে যে টাকা চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে অক্সিজেন মাস্ক খুলে নেওয়া হয়েছে, যিনি অক্সিজেন মাস্ক খুলেছেন তিনি কোনো ওয়ার্ড বয় নন তিনি একজন ক্লিনার। একজন ক্লিনার কখনোই অক্সিজেন খোলার দায়িত্বে থাকে না। এখানে মনিটরিং সিস্টেমের অভাব আমরা পেয়েছি। দুদকের এ কর্মকর্তা বলেন, মৃত্যুবরণকারী পরিবারের সদস্যরা আমাদের কাছে অভিযোগ করেছেন যে, ক্লিনার ৫০০ টাকা চেয়েছিল সেই টাকা না দেওয়ায় মাস্ক খুলে নেয়। প্রাথমিকভাবে এ অভিযোগ আমাদের কাছে সঠিক মনে হয়েছে। ক্লিনার এ টাকার ভাগ অন্য কাউকে দেয় কিনা সেটি তদন্ত করা হচ্ছে। হাসপাতালের অনিয়ম সম্পর্কে আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, আমরা হাসপাতালের আউটডোরে দালালের উপস্থিতি পেয়েছি। আমাদের দুজন অফিসার সেখানে ছদ্মবেশে এসেছিল। দালালরা আমাদের অফিসারকেও কথিত ডাক্তারদের কাছে নিয়ে গেছে। আমরা হাসপাতালের দালাল চক্রের সুস্পষ্ট প্রমাণ পেয়েছি।  তিনি বলেন, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে আমরা ব্যাপক অনিয়ম পেয়েছি। এ হাসপাতালে কোনো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম হয় না। এখানে বর্তমানে আমরা কোনো আউটসোর্সিং কর্মীকে পাইনি। কিন্তু এ হাসপাতাল থেকে আউটসোর্সিং কর্মীদের জন্য কোনো বিল বা অর্থ পাস হচ্ছে কিনা সেটি আমরা যাচাই করে দেখব।
Read Entire Article