গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার জাংগালিয়া ইউনিয়নের আজমতপুর গ্রামে নতুন সম্ভাবনার গল্প রচিত হচ্ছে। রাসায়নিক সারের বিকল্প হিসেবে কেঁচো থেকে তৈরি জৈব সার বা ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদনে গ্রামটি পরিচিতি পাচ্ছে। এই পরিবর্তনের সূচনা করেছেন স্থানীয় কৃষক কামরুজ্জামান শেখ।
জানা যায়, প্রথমে নিজের জমিতে জৈব সার ব্যবহারের প্রয়োজনে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে তিনি ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন শুরু করেন। কৃষি অফিস থেকে পান ১০টি রিং, ভার্মি কম্পোস্ট হাউজ, প্রয়োজনীয় কেঁচো ও প্রশিক্ষণ। এরপর তার সাফল্য দেখে আগ্রহী হন আশপাশের কৃষকেরাও। বর্তমানে তাকে অনুসরণ করেন একই ইউনিয়নের শেফালী বেগম, ফজলুল হক মোড়ল, মোতালিব ব্যাপারী, বিল্লাল হোসেন, মোস্তফা, মহসিন শেখ, মো. আ. ছাত্তার, মো. মজিবুর মোড়ল, নিলুফা ইয়াসমিন, ফারজানা আক্তারসহ অনেকেই। বাণিজ্যিকভাবে জৈব সার উৎপাদনে যুক্ত হন তারা।
সরেজমিনে জানা যায়, কামরুজ্জামানের বাড়ির পাশে পরিত্যক্ত জায়গায় তৈরি হয়েছে ছোট্ট একটি ভার্মি কম্পোস্ট কেন্দ্র। সেখানে ১০টি রিং ও সিমেন্টের তৈরি প্রায় ১০ ফুট লম্বা হাউজে চলে উৎপাদন কার্যক্রম। প্রথমে গোবর ৫-৭ দিন গ্যাসমুক্ত করে সেখানে কেঁচো ছাড়া হয়। প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ দিনের মধ্যে তৈরি হয় পুষ্টিগুণে ভরপুর জৈব সার। শুকিয়ে তা প্যাকেটজাত করে বাজারে বিক্রি করা হয়। বর্তমানে এখান থেকে মাসে এক টনেরও বেশি ভার্মি কম্পোস্ট বাজারজাত হয়।
কামরুজ্জামান শেখ বলেন, ‘শুরুতে নিজের প্রয়োজনে জৈব সার তৈরি করলেও এখন এটি আয়ের অন্যতম উৎস। প্রতি কেজি সার ১৫-২০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। চাহিদা বেশি হওয়ায় বাজারজাত করতে কষ্ট হয় না। কেঁচোও এখন আলাদা করে বিক্রি হয়। প্রতি কেজির দাম দেড় থেকে দুই হাজার টাকা।’
কৃষি অফিস জানায়, প্রকল্পের আওতায় নতুন কৃষকদের জন্য দেওয়া হয়েছে ভার্মি কম্পোস্ট সেপারেটর মেশিন, পলিব্যাগ ও সিলিং মেশিন। কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত সার স্থানীয় রাসায়নিক সারের দোকানেও বিক্রি করছেন।
আরও পড়ুন
আনারকলি ফল চাষে সফল ঝিনাইদহের স্টালিন
চারপাশে উঁকি মারছে দীপ্ত লুচি, চেনেন কি?
স্থানীয়রা বলছেন, এখনকার আজমতপুর শুধু ফসল নয়; জৈব সার উৎপাদন করেও পরিচিতি পাচ্ছে। যদি এ ধারা অব্যাহত থাকে, তবে একদিন জাংগালিয়া ইউনিয়নের পুরো আজমতপুর গ্রামই হয়ে উঠবে ‘ভার্মি কম্পোস্টের গ্রাম’।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ ফারজানা তাসলিম বলেন, ‘কামরুজ্জামানের উদ্যোগকে কেন্দ্র করে আমরা নতুন কৃষকদেরও প্রশিক্ষণ দিয়েছি। ভার্মি কম্পোস্ট মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততা কমানো এবং ফসলের উৎপাদন খরচ হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। রাসায়নিক সারের তুলনায় এটি নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব।’
গাজীপুর জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘ভার্মি কম্পোস্ট একটি কার্যকর ও পরিবেশবান্ধব জৈব সার। যা মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এর ব্যবহার একদিকে যেমন রাসায়নিক সারের ওপর নির্ভরতা কমায়; তেমনই ফসলের উৎপাদন বাড়ায় ও মাটির স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়তা করে। কৃষকদের এখন এই সারের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। এটি এরই মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।’
অনাবাদি পতিত জমি ও বসতবাড়ির আঙিনায় পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন প্রকল্পের (২য় সংশোধিত) পরিচালক ড. মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘এই প্রকল্পের মেয়াদ চলতি অর্থবছরেই শেষ হচ্ছে। বর্তমানে নতুন করে কোনো প্রদর্শনী স্থাপনের সুযোগ নেই। তবে আগ্রহী কৃষক বা উদ্যোক্তারা কৃষি অফিসের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখলে ভবিষ্যতে অন্য কোনো প্রকল্পের আওতায় সুযোগ পেতে পারেন।’
আব্দুর রহমান আরমান/এসইউ/এমএস