কিংবদন্তি ক্রিকেট আম্পায়ার ডিকি বার্ড আর নেই

2 hours ago 1

ক্রিকেটের ইতিহাসে যে কজন মানুষ ব্যাট বা বল হাতে নয়, কেবল একটি সাদা টুপির নিচে দাঁড়িয়ে থেকেই কিংবদন্তি হয়ে উঠেছেন—ডিকি বার্ড তাঁদের শীর্ষে। মাঠে তাঁর উপস্থিতি ছিল খেলাটিরই এক অংশ, কখনও মজার কাণ্ডকারখানায়, কখনও কঠিন সিদ্ধান্তে। সেই মানুষটিই আর নেই। ইয়র্কশায়ার কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাব মঙ্গলবার জানায়, ৯২ বছর বয়সে প্রয়াত হয়েছেন হারল্ড ডেনিস ‘ডিকি’ বার্ড।

বার্ড মৃত্যুর আগে রেখে গেছেন অগণিত স্মৃতি আর এক বিশাল উত্তরাধিকার—‘খেলোয়াড়সুলভ মনোভাব, বিনয় আর আনন্দের।’ বার্ডে ক্লাব ইয়র্কশায়ার তাদের বিবৃতিতে বলেছে, ‘তিনি ঘরের মাঠেই শান্তিতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। তার অনুপস্থিতি শুধু আমাদের নয়, ক্রিকেটপ্রেমীদের প্রজন্মের পর প্রজন্ম অনুভব করবে।’

১৯৩৩ সালে বার্নসলিতে জন্ম নেওয়া বার্ড প্রথমে নিজেই ক্রিকেটার ছিলেন। ইয়র্কশায়ারের হয়ে খেলেছেন, সর্বোচ্চ ১৮১ রানের ইনিংসও করেছেন। পরে লেস্টারশায়ারে যোগ দিলেও ৩২ বছর বয়সেই গড়পড়তা ২০.৭১ ব্যাটিং গড় নিয়ে খেলোয়াড়ি জীবন শেষ করেন।

কিন্তু আসল কাহিনি শুরু হয় এরপর। ১৯৭০ সালে প্রথম কাউন্টি ম্যাচে দাঁড়ান আম্পায়ার হিসেবে। তিন বছর পরেই প্রথম টেস্ট ম্যাচে। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। মোট ৬৬টি টেস্ট ও ৬৯টি ওয়ানডে পরিচালনা করেছেন তিনি, যার মধ্যে তিনটি বিশ্বকাপ ফাইনালও রয়েছে।

ডিকি বার্ড মানেই শুধু নিরপেক্ষ সিদ্ধান্ত নয়, মাঠে রসিকতা, দর্শকের সঙ্গে মজার আলাপ কিংবা অদ্ভুত সব ঘটনার নায়ক হওয়া। একবার লর্ডসে বোমা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে তিনি দিব্যি মাঠের মাঝখানে কাভারের ওপর বসে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। ট্রেন্ট ব্রিজে ‘গ্রীনহাউসের আলো’য় খেলা বন্ধ হওয়া কিংবা উইমেনস ওয়ার্ল্ড কাপে স্নানঘরে পিছলে চোট পাওয়া—এসবই তাকে ক্রিকেটীয় কাহিনির অবিচ্ছেদ্য চরিত্র করে তুলেছে।

১৯৯৬ সালে লর্ডসে ইংল্যান্ড–ভারত টেস্টে তাকে অভূতপূর্ব গার্ড অব অনার দিয়ে বিদায় জানিয়েছিল খেলোয়াড়রা। আর শেষবার তিনি আম্পায়ারিং করেছেন ১৯৯৮ সালে ইয়র্কশায়ার বনাম ওয়ারউইকশায়ার ম্যাচে।

তার অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৮৬ সালে ব্রিটিশ রাজপরিবারের এমবিই এবং ২০১২ সালে ওবিই খেতাব পান বার্ড। খেলোয়াড় হিসেবে যতটা না, আম্পায়ার হিসেবে তিনি বিশ্ব ক্রিকেটে পেয়েছিলেন অমরত্ব।

ইয়র্কশায়ারের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ডিকি আমাদের ক্লাবের ইতিহাসের অন্যতম সেরা চরিত্র হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। আগামী দিনগুলোতে তাঁকে সম্মান জানাতে নানা আয়োজন করা হবে।’

ক্রিকেট মাঠে তার কণ্ঠস্বর, হাতে তোলা আঙুল কিংবা দর্শকের সঙ্গে খুনসুটি—সবই আজ স্মৃতির পাতায়। ডিকি বার্ডের চলে যাওয়া মানে ক্রিকেটের হাসিখুশি এক অধ্যায়ের সমাপ্তি। তবুও তাঁর নামটি রয়ে যাবে কিংবদন্তির সারিতে—যেখানে আম্পায়াররাও নায়ক হয়ে ওঠেন।

Read Entire Article