পূর্ব চীনের আনহুই প্রদেশের হফেই শহরের ‘সায়েন্স আইল্যান্ড’ গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা ফিউশন শক্তি উন্নয়ন এবং এর প্রয়োগ নিয়ে কাজ করে চলেছেন। যা চীনের পরবর্তী প্রজন্মের বিশুদ্ধ জ্বালানির উৎস- যাকে বলা হচ্ছে ‘কৃত্রিম সূর্য’ তৈরির গবেষণারই অংশ। এ উদ্যোগ বৈশ্বিক জ্বালানি চাহিদার টেকসই সমাধান প্রদানে একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
সম্প্রতি, এই প্রকল্পের অধীনে চায়নিজ একাডেমি অব সায়েন্সেসের প্লাজমা ফিজিক্স ইনস্টিটিউট বিশ্বের সবচেয়ে বড় সুপারকন্ডাক্টিং ম্যাগনেটের ডায়নামিক পরীক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করেছে। চীনা সংবাদমাধ্যম সিএমজি জানিয়েছে, এ পরীক্ষা ফিউশন প্রযুক্তির উন্নয়নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সুবৃহৎ সুপারকন্ডাক্টিং ম্যাগনেটের সফল পরীক্ষা
প্লাজমা ফিজিক্স ইনস্টিটিউটের গবেষক সিন চিংকাং জানান, সুপারকন্ডাক্টিং ম্যাগনেটের ডায়নামিক পরীক্ষা ব্যবস্থা ফিউশন প্রযুক্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো। প্রথম রাউন্ডের পরীক্ষা ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। শিগগিরই আরও উন্নত প্যারামিটার এবং চৌম্বক ক্ষেত্রের পরিবর্তনের হার দিয়ে একাধিক পরীক্ষা চালানো হবে।
দীর্ঘ ১০ বছরের প্রচেষ্টায় এ সুবৃহৎ সুপারকন্ডাক্টিং ম্যাগনেটটি তৈরি করা হয়েছে। এটি ফিউশন রিয়েক্টরের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। চুম্বকটির কার্যকারিতা পরিমাপের জন্য একটি গতিশীল পরীক্ষামূলক ব্যবস্থা প্রয়োজন হয়, যা চীনা গবেষকরা সফলভাবে স্থাপন করেছেন।
অত্যাধুনিক পরীক্ষামূলক সিস্টেম
এই সিস্টেমে রয়েছে ৬.৫ মিটার ব্যাস এবং ৯.২ মিটার উচ্চতার একটি বড় বায়ুশূন্য কনটেইনার। এতে অত্যন্ত নিম্ন তাপমাত্রা, উচ্চ বৈদ্যুতিক প্রবাহের পাওয়ার সাপ্লাই এবং অন্যান্য উন্নত সিস্টেম রয়েছে। এটি বিভিন্ন পরিস্থিতিতে পরীক্ষা চালানোর পাশাপাশি সুপারকন্ডাক্টিং ম্যাগনেটের কার্যকারিতার তথ্য সংগ্রহ করতে সক্ষম।
প্রথম রাউন্ডের পরীক্ষায় সর্বোচ্চ স্থির বৈদ্যুতিক প্রবাহ ৪৮ কিলোঅ্যাম্পিয়ার ছিল, যা গবেষকদের প্রত্যাশা পূরণ করেছে। ভবিষ্যতে এই সিস্টেমের বহন ক্ষমতা ৫০ কিলোঅ্যাম্পিয়ারের বেশি হবে এবং এর চৌম্বক ক্ষেত্র পরিবর্তনের হার প্রতি সেকেন্ডে ১.৫ টেরাওয়াটে পৌঁছাবে।
ফিউশন প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
গবেষক সিন চিংকাং আরও জানান, এ উন্নত সিস্টেমের মাধ্যমে বড় প্রবাহ, একাধিক কয়েল এবং উচ্চ চৌম্বক ক্ষেত্রের গতিশীল পরীক্ষাগুলো পরিচালনা করা সম্ভব হবে। চীনা গবেষকরা আরও জানিয়েছেন, সুপারকন্ডাক্টিং ম্যাগনেট ডায়নামিক পরীক্ষার ব্যবস্থার পাশাপাশি ফিউশন প্রযুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় ১৮টি সাব-সিস্টেমের প্রায় সবগুলোর কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এগুলোর একত্রীকরণ পরীক্ষা ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।
কৃত্রিম সূর্যের পথে অগ্রগতি
চীনের গবেষকরা আশা করছেন, চলতি বছরের শেষ নাগাদ গবেষণা ও অবকাঠামোগত কাজ সম্পন্ন হবে। এই প্রকল্প সফল হলে তা বৈশ্বিক জ্বালানি চাহিদার জন্য একটি পরিবেশবান্ধব এবং দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হিসেবে প্রমাণিত হতে পারে।
চীনের এই গবেষণার অগ্রগতি বৈজ্ঞানিক মহলে বড় ধরনের সাড়া ফেলেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কৃত্রিম সূর্য তৈরির এই প্রচেষ্টা ভবিষ্যতের জ্বালানি সংকট সমাধানে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে।