‘কেউ দেশবিরোধী চক্রান্ত করলে জনগণ কঠোরভাবে দমন করবে’
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক বলেছেন, কেউ দেশবিরোধী চক্রান্ত করলে জনগণ তাদের কঠোরভাবে দমন করবে।
শুক্রবার (১৪ মার্চ) বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস আয়োজিত ইফতার মাহফিলে এসব কথা বলেন তিনি। রাজধানীর পল্টনস্থ ফার্স হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টসে রাজনীতিবিদ, কূটনীতিবিদ, ওলামায়ে কেরাম ও বিশিষ্টজনদের সম্মানে এই ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়। ইফতারে আসা অতিথিদের স্বাগত জানিয়ে পরিচয় করিয়ে দেন দলের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ।
ইফতারের আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে মামুনুল হক আরও বলেন, একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের উপর আমরা আস্থা রাখতে চাচ্ছি। ইতোমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের আগামী বিনির্মাণের লক্ষ্যে সংস্কারের ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। যে উদ্যোগকে দল-মত নির্বিশেষে সব রাজনৈতিক পক্ষ স্বাগত জানিয়েছে এবং এখনো পর্যন্ত সবাই সহযোগিতা করে যাচ্ছে। সংবিধানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক সংস্কারের মাধ্যমে আমরা আশা করছি আগামী বাংলাদেশে বহুদল ও মতের সম্মিলনে একটি সহনশীল রাজনৈতিক পরিবেশ গড়ে উঠবে।
মাওলানা মামুনুল হক ২০০৯ সালের পিলখানা ট্র্যাজেডিতে ৫৭ সেনাকর্মকর্তার শাহাদাত, ২০১৩ সালে শাপলাচত্বরে শাহাদাত বরণকারী হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মী, ২০১৪-১৫ সালে বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতনে শাহাদাত বরণকারী অসংখ্য রাজনৈতিক নেতাকর্মী, ২০২১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনকে ঘিরে সরকারি বাহিনীর সুপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের শিকার হেফাজতে ইসলামের ২৫ শহীদ ও সর্বশেষ ২০২৪-এ শাহাদাত বরণকারী অসংখ্য বীর শহীদানের মাগফিরাত কামনা করেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ মুসলিম প্রধান দেশ। এ দেশের জনগণ ইসলামের জন্য নিবেদিত প্রাণ। এ দেশে ইসলামের জন্য অবমাননাকর কোনো বিষয়কে মানুষ মেনে নেবে না। বাংলাদেশ কখনোই কোনো ইসলামবিরোধী কোনো কালচারকে মুসলিম প্রধান দেশ হিসেবে, সভ্য নাগরিকদের দেশ হিসেবে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ হিসেবে মেনে নিতে পারে না। ইতোমধ্যে একজন রূপান্তরিত পুরুষকে অদম্য নারী হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মাননা দিয়ে বাংলাদেশের কৃষ্টি কালচারকে অবমাননা করা হয়েছে। সেখান থেকে কিছুটা চিন্তার ভাঁজ আমাদের কপালে পড়ছে।
তিনি আরও বলেন, পৃথিবীর কোনো উন্নত ও স্থিতিশীল রাষ্ট্রে মানবাধিকার অফিস কেউ করতে দেয়নি। আমেরিকাও দেয়নি, ভারতও দেয়নি। অন্তর্বর্তী সরকারের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে যদি কেউ এই বাংলাদেশবিরোধী চক্রান্তে লিপ্ত হয় বাংলাদেশের মানুষ তাকে কঠোর হস্তে দমন করবে। শিশু আছিয়াসহ সব ধর্ষণকাণ্ডের বিচার দাবি করে তিনি বলেন, আইনের অনেক ফাঁকফোকর রয়েছে। অনেক ছোটখাটো বিষয়কে এসব আইনের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলে কঠোরতর অপরাধকে হালকা করে ফেলা হচ্ছে। নারী, শিশু ও সমাজের দুর্বল মানুষদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।
ইফতারে আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- জামায়াতে ইসলামীর বাংলাদেশের আমির ডা. শফিকুর রহমান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দীন আহমেদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব ইউনুস আহমাদ, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন, ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের আমির ড. মাওলানা ঈসা শাহেদী, এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন রাজী, এবি পার্টির মহাসচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মুনির হোসাইন কাসেমী, হাবের সহ সভাপতি নূর মুহাম্মাদ, মাওলানা রেজাউল করীম আবরার, মাওলানা রুহুল আমীন সাদী প্রমুখ।
কূটনীতিকদের মধ্যে চীন, ইরান, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান দূতাবাস এবং হাইকমিশনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।