বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকৃত স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার জন্য কেবল আইন নয়, প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছারও। রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা কার্যকর হবে না বলে মনে করেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) অর্থনীতিবিদরা।
মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) রাজধানীর গুলশানে হোটেল আমারিতে পিআরআই আয়োজিত ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অপরিহার্যতা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এ মত দেন বক্তারা। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পিআরআইয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. আশিকুর রহমান। সঞ্চালনা করেন প্রতিষ্ঠানের ভাইস চেয়ারম্যান ড. সাদিক আহমেদ এবং সভাপতিত্ব করেন চেয়ারম্যান ড. জাইদি সাত্তার।
ড. আশিকুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক কখনো প্রকৃত স্বাধীনতা পায়নি। আমলাদের গভর্নর করা হয়েছে, ব্যাংকগুলোকে তুলে দেওয়া হয়েছে কয়েকটি পরিবারের হাতে। রাজনৈতিক সিদ্ধান্তেই সুদহার ও ডলারের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। ওই সময় প্রায় ১৮ থেকে ২০ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে।’
তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাজ দ্রব্যমূল্যের স্থিতিশীলতা রক্ষা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও আর্থিক খাতে সুশাসন নিশ্চিত করা। বাজার যদি বিশ্বাস করে যে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্বাধীনভাবে ও বিশ্বাসযোগ্যভাবে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তবে মূল্যস্ফীতি স্বাভাবিকভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘ব্যাংক খাতের সব সূচক এখন খারাপ। রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে দীর্ঘদিন বাংলাদেশ ব্যাংককে ব্যবহার করা হয়েছে। ব্যাংকিং খাতে দ্বৈত শাসন বন্ধ করতে হলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং বিভাগ বিলুপ্ত করতে হবে।’
ড. ফাহমিদা আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা কেবল আইনে নয়, রাজনৈতিক সদিচ্ছায় নির্ভর করে। আগামী সরকার যদি সেটির স্বীকৃতি না দেয়, তবে কোনো আইনি কাঠামো দিয়েও স্বাধীনতা কার্যকর হবে না।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের সময়ে (২০০৩ সালে) ব্যাংকিং বিভাগ বিলুপ্ত করা হয়েছিল। আমরা ক্ষমতায় গেলে আবারও তা করব। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা নিশ্চিত করাই হবে অন্যতম সংস্কার উদ্যোগ।’
আমীর খসরু বলেন, ‘আমরা কখনো বাংলাদেশ ব্যাংক বা শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থায় রাজনৈতিক নিয়োগ দেইনি। সংস্থাটিকে শুধু স্বায়ত্তশাসন নয়, পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে। পাশাপাশি অর্থনীতিকে সম্পূর্ণ অটোমেশন করতে হবে, তাহলে দুর্নীতি কমবে।’
সরকারের ব্যয় নিয়ন্ত্রণের আহ্বান জানিয়ে বিএনপি নেতা আমীর খসরু আরও বলেন, ‘বিমান কেনার জন্য সরকার টাকা ছাপাবে— এটা হতে পারে না। বন্ড ইস্যু করে তহবিল গঠন করা উচিত। সরকারের অর্থ ব্যয় হওয়া উচিত শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে।’
অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসিম মঞ্জুর বলেন, ‘২০১৯ সাল থেকেই আমরা ডলারের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিলাম। সেটা না করে ২০২২ সালে হঠাৎ ৪১ শতাংশ বাড়ানো হয়। এতে সবার ওপর চাপ পড়ে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতির ধারাবাহিকতা থাকা জরুরি। পাশাপাশি ব্যাংকিং বিভাগ অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।’
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদের সময়ে ব্যাংক খাতে ভালো পরিবেশ ছিল। আইনি কাঠামোর চেয়ে রাজনৈতিক সদিচ্ছাই এখানে বেশি কার্যকর।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল ও বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. আখতার হোসেন।
ইএআর/এমএমকে/এমএস