এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার বিগত পাঁচ বছরের ফলাফলে ব্যাপক উল্লম্ফন ছিল। করোনাভাইরাস ও জুলাই আন্দোলনের কারণে ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত কখনই সব বিষয়ে পূর্ণ নম্বরের পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি। সংক্ষিপ্ত সিলেবাস, কম বিষয়ের ওপর পরীক্ষা হওয়ায় পাসের হার ও জিপিএ-৫ পাওয়ার ছড়াছড়ি ছিল।
তবে এবার সব বিষয়ে পূর্ণ নম্বর, পূর্ণ সময় ও পূর্ণ সিলেবাসে পরীক্ষা হওয়ায় ফলাফল ব্যতিক্রম হতে পারে বলে মনে করছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা। ব্যতিক্রম ফলাফল হওয়ার এমন গুঞ্জনের সময়ে এক নজরে দেখা নিয়ে যেতে পারে বিগত পাঁচ বছরের এইচএসসির ফলাফল।
অটোপাসের বছর ছিল ২০২০
করোনাভাইরাসের সংক্রমণের মধ্যে ২০২০ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় সবাইকে পাস করিয়ে দেওয়া হয়। যেটিকে ‘অটোপাস’ বলা হয়ে থাকে। ফলাফল প্রস্তুতের ক্ষেত্রে বিগত বছরের এসএসসির ফল বিবেচনা নেওয়া হয়।
ওই বছর এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার্থী ছিলেন ১৩ লাখ ৬৭ হাজার ৩৭৭ জন। এরমধ্য জিপিএ-৫ পান ১ লাখ ৬১ হাজার ৮০৭ জন পরীক্ষার্থী, যা মোট পরীক্ষার্থীর ১১ দশমিক ৮৩ শতাংশ।
সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে ২০২১ সালের এইচএসসি
সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে নেওয়া ২০২১ সালের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা। এতে পাস করে ৯৫ দশমিক ২৬ শতাংশ শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে জিপিএ-৫ পান ১ লাখ ৮৯ হাজার ১৬৯ জন, যা উত্তীর্ণের মোট সংখ্যার ১৩ দশমিক ৭৯ শতাংশ। ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে জিপিএ-৫ পান ১ লাখ ৭৮ হাজার ৫২২ জন।
২০২২ সালেও সংক্ষিপ্ত সিলেবাস, পাসের হার ৮৫.৯৫
২০২২ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষাও হয় সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে। এতে গড় পাসের হার ছিল ৮৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ, যা আগের বছরের চেয়ে ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ কম। ১১ লাখ ৭৭ হাজার ৩৮৭ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে জিপিএ-৫ পান ১ লাখ ৭৬ হাজার ২৮২ জন।
পাসের হার কমে ২০২৩ সালে
২০২৩ সালের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় গড় পাসের হার ছিল ৭৮ দশমিক ৬৪। আগের বছরের চেয়ে পাসের হার কমে ৭ দশমিক ৩১ শতাংশ। ১১টি শিক্ষা বোর্ডে ১৩ লাখের বেশি শিক্ষার্থীর মধ্যে জিপিএ-৫ পান ৯২ হাজার ৫৯৫ জন। আগের বছরের চেয়ে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী কমে ৮৩ হাজার ৬৮৭ জন।
জুলাই আন্দোলনের বছরেও ‘অস্বাভাবিকতা’
গণঅভ্যুত্থানের কারণে ২০২৪ সালে কয়েকটি বিষয়ে পরীক্ষা না হওয়ায় সাবজেক্ট ম্যাপিং করে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল দেওয়া হয়। এ বছর ৯টি সাধারণ ও মাদরাসা এবং কারিগরি বোর্ড মিলিয়ে ১১টি শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হার ছিল ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
২০২৪ সালে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নেন ১৪ লাখ ৫০ হাজার ৭৯০ জন শিক্ষার্থী। জিপিএ-৫ পান ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ জন। সেই হিসেবে ২০২৩ সালের চেয়ে ২০২৪ সালে জিপিএ-৫ পাওয়ার সংখ্যা বাড়ে ৫৩ হাজার ৫৪৬ জন।
কেমন হবে এবারের ফল?
পাঁচ বছর পর এবার স্বাভাবিক ধারায় ফিরছে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা। সব বিষয়ে পূর্ণমান, পূর্ণ সময় ও পূর্ণ সিলেবাসে এবার পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ‘সহায়নুভূতির’ নম্বরও না দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর প্রভাব পড়ছে ফলাফলে। এসএসসির পর এইচএসসিতেও এবার নিম্নমুখী ফলাফল হতে পারে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খন্দোকার এহসানুল কবির জাগো নিউজকে বলেন, ‘ফল প্রকাশের পরই বলা যাবে কেমন হবে; আগে বলা তো সম্ভব নয়। তবে এবার পূর্ণ সময়, পূর্ণমান ও পূর্ণ সিলেবাসে স্বাভাবিক ধারায় পরীক্ষা হয়েছে। সেক্ষেত্রে করোনাকালে যেমন ফলাফল হয়েছিল, তার চেয়ে ব্যতিক্রম হতে পারে। তবে সেটা ফল প্রকাশের পরই বোঝা যাবে।’
এবার ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নিতে ফরম পূরণ করেন ১২ লাখ ৫১ হাজার ১১১ শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ৬ লাখ ১৮ হাজার ১৫ ছাত্র এবং ৬ লাখ ৩৩ হাজার ৯৬ ছাত্রী। সারাদেশে ২ হাজার ৭৯৭টি কেন্দ্রে পরীক্ষা হয়। তবে এ পরীক্ষায় প্রায় ২৭ হাজার শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিলেন। ফলে ফলাফলের অপেক্ষায় রয়েছেন সোয়া ১২ লাখেরও কিছু বেশি শিক্ষার্থী।
এএএইচ/এমকেআর