খাগড়াছড়িতে ফেলনা কাঠ থেকে তৈরি হচ্ছে ‘ভিনিয়ার’

1 day ago 8

পাহাড়ি জনপদ খাগড়াছড়িতে ব্যবহার অনুপযোগী কাঠ বা ফেলনা কাঠ থেকে তৈরি হচ্ছে ভিনিয়ার, যা চা ও অন্যান্য রপ্তানিমুখী শিল্পের মোড়ক তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এতে শুধু ফেলনা কাঠ ব্যবহারের আওতায় আসছে না; সংসারের চাকাও সচল হয়েছে অনেকের। পাশাপাশি পাহাড়ে রপ্তানিমুখী শিল্পের মোড়কের কাঁচামাল তৈরির নতুন একটি সম্ভাবনাময় খাত তৈরি হয়েছে।

তুলা, উদাল, কদম, ডুমুর ও আমগাছের মতো অপ্রচলিত ও সাধারণত ব্যবহৃত না হওয়া গাছ থেকে রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য ভিনিয়ার বা ফ্লাইউড তৈরি হচ্ছে। খাগড়াছড়ি সদর, মাটিরাঙ্গা ও পানছড়ির তিনটি কারখানায় গত কয়েক বছর ধরে চলছে ভিনিয়ার তৈরির কাজ। নারী-পুরুষ সবাই শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন এসব কারখানায়।

খাগড়াছড়িতে ফেলনা কাঠ থেকে তৈরি হচ্ছে ‘ভিনিয়ার’

ভিনিয়ার তৈরিতে ব্যবহৃত গাছগুলোতে প্রচুর পরিমাণে কাঠ পাওয়া যায়, যেগুলো সাধারণত আসবাবপত্র তৈরিতে ব্যবহৃত হয় না। যা অনেক ক্ষেত্রে ফেলনা হিসেবেই থেকে যায়। সেসব কাঠ ব্যবহার করেই রপ্তানিমুখী শিল্পের মোড়কের কাঁচামাল তৈরি করা হচ্ছে, যা পাহাড়ের এবং দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে।

মাটিরাঙ্গা পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের লাতু লিডার পাড়া এলাকায় নিজ জমিতে ‘মেসার্স জালাল ফ্লাইউড প্রসেসিং কারখানা’ গড়ে তুলেছেন জালাল আহাম্মদ। একটি বড় মেশিন ও একটি কাটার দিয়ে চলছে ফ্লাইউড বা ভিনিয়ার প্রসেসিং। চিরাই করা কাঠ সারাদিন রোদে শুকানো হচ্ছে। এরপরই শুকনা কাঠ বিক্রির জন্য প্রক্রিয়াজাত করতে সারি সারি করে সাজিয়ে রাখা হচ্ছে।

খাগড়াছড়িতে ফেলনা কাঠ থেকে তৈরি হচ্ছে ‘ভিনিয়ার’

মেসার্স জালাল ফ্লাইউড প্রসেসিং কারখানার কর্ণধার জালাল আহাম্মদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘ফেলনা কাঠকে মূল্যবান পণ্য হিসেবে পরিণত করা হচ্ছে, যা পরিবেশবান্ধব। এ উদ্যোগ অপ্রয়োজনীয় ও অব্যবহৃত বনজ সম্পদকে কাজে লাগানোর পাশাপাশি কর্মসংস্থানও সৃষ্টি করছে। যা পাহাড়ের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।’

জালাল আহাম্মদ জানান, ভিনিয়ার তৈরির পর ছোট ছোট টুকরাগুলো রোদে শুকিয়ে জালানি হিসেবে বিক্রি করা অর্থ স্থানীয় দুটি মসজিদে দান করে দেন তিনি। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই তিনি এ কাজ করেন।

খাগড়াছড়িতে ফেলনা কাঠ থেকে তৈরি হচ্ছে ‘ভিনিয়ার’

যে গাছগুলো দ্রুত পচনশীল সেগুলোকে প্রসেসিং করে ফ্লাইউড বা ভিনিয়ার তৈরির কথা জানিয়ে জালাল আহাম্মদ বলেন, আরএফএল, অটোবি, ঢাকা বেঙ্গল ও পারটেক্স কোম্পানি তাদের ফার্নিচার শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে এসব কিনে নিয়ে যায়। প্রতি ঘনফুট ফ্লাইউড বা ভিনিয়ার মানভেদে চার টাকা দরে বিক্রি করা হয়। খরচ শেষে প্রতিমাসে ৬০-৭০ হাজার টাকা আয় হয়ে বলে জানান তিনি।

কথা হয় কারখানার শ্রমিক মো. সোহাগের সঙ্গে। দৈনিক ৫৫০ টাকা মজুরিতে কাজ করেন তিনি। সোহাগ বলেন, ‘এখানে কাজ করার ফলে প্রতিদিন কাজ খুঁজতে হয় না। এখানে কাজ করে আমার পরিবারে সচ্ছলতা ফিরে এসেছে। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ভালো আছি।’

খাগড়াছড়িতে ফেলনা কাঠ থেকে তৈরি হচ্ছে ‘ভিনিয়ার’

তমাল ত্রিপুরা নামের আরেকজন বলেন, ‘ভিনিয়ার তৈরিতে মূল ভুমিকা পালন করি বিধায় আমার দৈনিক মজুরি ৮০০ টাকা। আমিও দীর্ঘদিন এখানে কাজ করে যাচ্ছি। কাজ করেই খাই তাই কাজকে ছোট করি না। পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ ভালো আছি।’

ভিনিয়ার কারখানা শুল্কমুক্ত হলেও পরিবহনে অনুমতি লাগে জানিয়ে মাটিরাঙ্গা রেঞ্জ কর্মকর্তা আতাউর রহমান দিপু বলেন, ফেলনা কাঠ দিয়ে ফ্লাইউড বা ভিনিয়ার তৈরি পরিবেশ সংরক্ষণ ও কাঠের কার্যকর ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্ব উদ্যোগ। ভিনিয়ার কারখানা গড়ে ওঠার মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।

খাগড়াছড়িতে ফেলনা কাঠ থেকে তৈরি হচ্ছে ‘ভিনিয়ার’

ভিনিয়ার কারখানা স্থাপনে বন বিভাগ সহযোগিতা করবে জানিয়ে তিনি বলেন, এই প্রক্রিয়ায় কাঠের অপচয় রোধ করা সম্ভব।

এমআরভি/এসআর/এএসএম

Read Entire Article