খুলনার বাস্তুহারা এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা কলোনিতে উচ্ছেদ অভিযানের সময় পুলিশের সাথে সেখানকার বাসিন্দাদের দফায় দফায় ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এতে পুলিশ-সাংবাদিকসহ উভয়পক্ষের অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন।
রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত টানা ওই সংষর্ষে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। ঘটনাস্থল থেকে কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে।
জানা যায়, জাতীয় গৃহয়ায়ন কর্তৃপক্ষের ওই জায়গায় ৪২টি প্লট দীর্ঘদিন ধরে বেদখল হয়ে আছে। বখোলিশপুর থানাধীন বয়রার এলাকাটি জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ নিজেদের দাবি করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় বয়রা আবাসিক এলাকার সি ব্লকের ৪২টি বেদখল প্লট দখলমুক্ত করতে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।
তবে স্থানীয়রা বলছে, এ জায়গায় কয়েকপুরুষ ধরে বসবাস করছি। এখানে সহায়সম্বলহীন মানুষ দীর্ঘদিন ধরে থাকছে। পুনর্বাসন ছাড়া এখান থেকে তাদের উচ্ছেদ করা যাবে না।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যার পর এলাকায় মাইকিং করে বলা হয় যে সকাল ৮টার মধ্যে ২শ পরিবারকে বাসা ছেড়ে এলাকা খালি করে দিতে হবে। এলাকার মানুষ কিছু বুঝে ওঠার আগেই সকালে ওই এলাকার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে একাধিক বুলডোজার দিয়ে মানুষের বাড়ি ঘর ভাঙা শুরু করে। এ সময় এলাকার মসজিদের মাইক থেকে বাসিন্দাদের রাস্তায় আসার আহ্বান জানানো হয়। লোকজন জড়ো হয়ে পুলিশের সামনে ব্যারিকেড তৈরি করেন। পুলিশ একপর্যায়ে লাঠিপেটা শুরু করে। এ সময় অন্তত তিনজনের মাথায় আঘাত লাগে।
স্থানীয় লোকজন এক্সকাভেটর চালককে অবরুদ্ধ করেন। পুলিশ তখন কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়া শুরু করে। এলাকাবাসী পাল্টা ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে এবং টায়ার জ্বালিয়ে, গাছের গুঁড়ি ফেলে আগুন জ্বালিয়ে দেন। তখন পুলিশ পিছু হটে। এ সময় এক্সকাভেটর ভাঙচুর করে বাসিন্দারা।
এ ঘটনায় ১৪ পুলিশ সদস্য ও সাংবাদিকসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছে। আহতদের পুলিশ হাসপাতাল, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ নগরীর বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী জিয়াউর রহমান বলেন, বাস্তুহারা নামে পরিচিত ওই এলাকা ‘বয়রা আবাসিক এলাকা’। সেখানে প্রায় ৩০ একর জায়গা রয়েছে। এর মধ্যে সি ব্লকে তাদের ৫৫টির মতো প্লট আছে। যেগুলো ১৯৮৭ সালে স্থায়ী বরাদ্দ দেওয়া হয়।
এর মধ্যে ৪২টি প্লট বেদখল হয়ে থাকায় ৩৮ বছর ধরে তারা প্রকৃত মালিকদের বুঝিয়ে দিতে পারেনি। বিভিন্ন সময় পাঁচ দফায় উচ্ছেদ করতে গেলেও রাজনৈতিক কারণে দখলদারদের সরানো যায়নি। বরং ওই এলাকাটিতে মুক্তিযোদ্ধা কলোনি নাম দিয়ে অবৈধ দখল করে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। আগাম ঘোষণা দিয়ে রোববার ওই ৪২টি প্লটের জায়গায় উচ্ছেদ অভিযান চালাতে যায় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ।
খালিশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর আতাহার আলী বলেন, তিনিসহ পুলিশের ১৪ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে তিনজন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। অন্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
তিনি বলেন ‘সকালে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। ঘটনাস্থলে পুলিশ, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের যুগ্ম সচিবসহ অন্য কর্মকর্তারা ছিলেন। আমরা সতর্ক করলেও তারা (বাসিন্দারা) সরেননি। আমরা একটু এগোতে গেলে ইটপাটকেল ছোড়া শুরু হয়। অভিযান স্থগিত করে ফিরে আসছি। এখন পরিস্থিতি শান্ত আছে।’