খেলনা শিল্পে ‘বাংলাদেশ ব্র্যান্ড’ গড়ে তোলার আহ্বান

1 hour ago 3

দেশের খেলনা শিল্পে ‘বাংলাদেশ ব্র্যান্ড’ প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, রপ্তানিতে সম্ভাবনাময় এ খাত এখনও আমদানি নির্ভর। তাই এ শিল্পকে টেকসইভাবে এগিয়ে নিতে বহুমুখীকরণ, উদ্ভাবন এবং প্রযুক্তি গ্রহণ জরুরি।

মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর মতিঝিলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘রপ্তানি বহুমুখীকরণ: খেলনা উৎপাদন শিল্পে উদ্ভাবন ও রপ্তানির সম্ভাবনা’ শীর্ষক ফোকাস গ্রুপ আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ। সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য মুহাম্মদ মুবিনুল কবীর এবং বাংলাদেশস্থ বৃটিশ হাইকমিশনের ডেপুটি ডেভেলপমেন্ট ডিরেক্টর মার্টিন ডওসন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ প্লাস্টিক গুডস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিজিএমইএ) সভাপতি শামীম আহমেদ।

প্যানেল আলোচনায় বক্তারা বলেন, প্লাস্টিকভিত্তিক খেলনা শিল্পে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকায় উদ্যোক্তারা নানা প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়েন। মানসম্মত মোল্ড ও কাঁচামাল আমদানিতে উচ্চ শুল্কের কারণে উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। ফলে সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে মানসম্পন্ন খেলনা পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়ে।

গোল্ডেন সন লিমিটেডের এমডি বেলাল আহমেদ বলেন, ফেব্রিকভিত্তিক খেলনা শিল্পে সমস্যায় পড়তে হয় না। কিন্তু প্লাস্টিকভিত্তিক খেলনা শিল্পে নীতিমালার অভাবে উদ্যোক্তারা বিপাকে পড়েন।

কাপকেক এক্সপোর্টস লিমিটেডের সিইও ইয়াসির ওবায়েদ জানান, খেলনা শিল্পে এখনও উদ্যোক্তাদের জন্য শক্তিশালী সংগঠন গড়ে ওঠেনি।

এসিআই পিএলসির প্রেমিয়াফ্লেক্স প্লাস্টিক লিমিটেডের ডেপুটি এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর আনিসুর রহমান বলেন, বিশ্বের সব দেশে শিশুদের শেখার অন্যতম মাধ্যম খেলনা। কিন্তু আমাদের দেশে ভালো মানের খেলনা তৈরি করতে গেলে খরচ অনেক বেড়ে যায়। এজন্য মধ্যবিত্তের নাগালের মধ্যে মানসম্পন্ন খেলনা পৌঁছে দেওয়া জরুরি।

পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, খেলনা শিল্প প্লাস্টিক ও লেদারের পরেই গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। প্লাস্টিক শিল্পকে পরিবেশবান্ধব রাখতে ‘টক্সিক কেমিকেল ফ্রি’ উৎপাদন ও সহজ ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম গড়ে তোলার ওপর জোর দেন তিনি।

ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ এরইমধ্যে ৮৮টি দেশে প্রায় ৭৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের খেলনা রপ্তানি করছে। বর্তমানে এ খাতে ১৪৭টিরও বেশি কারখানা রয়েছে, যেখানে প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক কাজ করছেন। এর মধ্যে ৮০ শতাংশই নারী।

তিনি আরও জানান, স্থানীয়ভাবে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ এরইমধ্যে হয়েছে, যা ২০৩০ সালের মধ্যে দ্বিগুণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া বৈশ্বিক খেলনা বাজার ২০২৩ সালে ১০২ বিলিয়ন ডলার থেকে ২০৩২ সালে ১৫০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে। চীন ধীরে ধীরে সস্তা খেলনা উৎপাদন থেকে সরে আসায় বাংলাদেশ নতুন সুযোগ পেতে পারে।

এ খাতের অগ্রযাত্রায় উচ্চ শুল্ক, আমদানি-নির্ভর প্যাকেজিং, জটিল বিধিনিষেধ এবং লাইসেন্সকৃত খেলনা বাজারে সীমিত প্রবেশাধিকার বড় বাধা হয়ে আছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, এসব কাটিয়ে উঠতে স্থানীয় পরীক্ষাগার, ডিজাইন ট্রেনিং, বিশ্ববিদ্যালয় ও টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের সহযোগিতা, পরিবেশবান্ধব উৎপাদন এবং নতুন বাজারে প্রবেশে কূটনৈতিক উদ্যোগ প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তাসকীন আহমেদ বলেন, খেলনা শিল্প কেবল রপ্তানি বৈচিত্র্যে নয়, নারী কর্মসংস্থান ও টেকসই অর্থনীতিতেও বড় অবদান রাখতে সক্ষম।

ইএআর/এএমএ/জেআইএম

Read Entire Article